মধ্যরাত : পর্ব-১২৫

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : কিন্তু খেতে গিয়ে বমি ঠেলে আসছে। দোলা বলল দাদু স্যুপটা খাও। অরেঞ্জ জুস খাও, আপেল জুস খাও, তুমিত কোনটাই খেতে চাও না। না খেলে শরীওে বল পাবে কি করে ? আচ্ছা দাদু তোমার রোগের সাথে যুদ্ধ করার জন্যত বলের দরকার ? শুনে ভাবলাম, ছোট বেলা অসুখ হলে, না খেতে চাইলে বড়দি একথাগুলো বলতেন। ঠিক আজ তিরিশ-পয়ত্রিশ-চল্লিশ বৎসর পর বড়দিও নাতনী দোলার মুখ দিয়ে সে কথা শুনছি। আশ্চর্য— কাল কি করে মানুষকে তার গতির পথে এগিয়ে নিয়ে যায়।
বললাম, দোলা সুশান্ত কখন আসবেরে ? হতচ্ছারাটা একটু তাড়াতাড়ি চলে আসেনা কেন ? ওর কি এতইজ কাজ ? বন্ধুর জন্য বন্ধু একটু ছুটি তাড়াতাড়ি করে নিলে কি ক্ষতি হয়। দোলা বলল, সুশান্ত দাদু কাল সকালেই চলে আসবে। তুমি ভাল করে খাওয়া-দাওয়া করো। আমি নির্জিব হয়ে শরীরটা এলিয়ে দিলাম। হঠাৎ দরজায় কলিং বেল বেজে উঠল। দোলা দরজা খুলে দিল। এসে বলল, দাদু একজন ভদ্রলোক তোমার সাথে দেখা করতে চায়। আমি বললাম, ভেতরে আসতে বল। দেখি রাহাত খান। অনেক গুচ্ছ গুচ্ছ লাল গোলাপ নিয়ে আমাকে দেখতে এসেছে। শুনলাম নাকি আপনার খুব অসুখ। রোগ কি ? ব্লাড প্রেসার জ্বর। জ্বর, জ্বরেই আমাকে কাবু করে ফেলেছে। ডাক্তারের কাছে চলুন বলল রাহাত খান। কোন স্পেশালিষ্টকে দেখানো দরকার। কোন ডাক্তার দেখছে। বললাম, ডাক্তার মিনরাজ কেশরী। ওর কাছে থেকে লিখিয়ে নিয়ে আমি কোন স্পেশালিষ্টকে দেখাতে চাই।
রাহাত খান বলল, ব্লাড প্রেসারের জন্য এতদিন কোন জ্বও চলতে পারে না। কোন ইনফেকশন আছে। আমি বললাম, ডাক্তারের কাছে নিয়ম মত খাওয়া-দাওয়া হচ্ছে না। আমি এত জ্বরে ড্রাইভ করতে পারিনা। আমার নাতনীর লাইসেন্স নেই, আর তাছাড়া ও এখনও ভাল করে ড্রাইভিং শিখেণি। আমি বললাম, মিঃ খান আপনি ঠিক বলেছেন, কোন গন্ডগোল আছে। ডাক্তারের কাছে মিঃ খান আমাকে নিয়ে গেল। ডাক্তার ব্লাড, ইউরিন দেবার জন্য আর এক জায়গায় ফোন করে দিয়ে আসতে বললো। ইমার্জেন্সিতেও গেলাম, ওরা পূর্বের ডাক্তারের কথা মত কাজ করতে বললো।
আমি যেন এক কুল পেলাম। সত্যি এ ভদ্র লোকই কাজের কাজ করল। ওনাকে সকলে বলে মন্ট্রিলের গেজেট। মানুষের বিপদ আপদেও দেখলাম ঝাপিয়ে পরে। এটাই মানুষের বড় মানবতা। রাহাত খান, কিছুক্ষণ পর চলে গেল। বলে গেল, কাল আবার আসবে। আমি যেন মনে সাহস পেলাম। হতাশায় আমি ভীষণ মুসড়ে পরেছিলাম। এক নাতনী সব সময় কাছে থাকে। ওকে কোথায় পাঠালে আমি এ অসুস্থ্য অবস্থায় চোখে মুখে অন্ধকার দেখি। ও কাছে থেকে একটু লেবু কেটে দেয়। কতক্ষণ মুখের স্বাদের জন্য চুষি। আবার একটু ফল দেয়, কখন খাই আবার কখনও খাই না। কখন আঙ্গুর ধুয়ে কাছে দেয়, আমার কিছুই খেতে ইচ্ছে করে না। তবুও ত ও দেয়। খেতে বলে না খেলে রাগ করে। ভোরের দিকে সুশান্ত-উমা এল। ওদের আগমনে আমি যেন ভাল বোধ করলাম। ডাক্তারের রিপোর্ট এসে গেল। আমার ইউরিন, ব্লাড কি ইনফেকশন পেয়েছে, ব্লাড প্রেসারও বাড়তির দিকে। নানাবিধ গন্ডগোলেই জ্বও কমছেনা। সুশান্ত ডাক্তারের কাছে গেল। ডাক্তার মিনা কেশরী তাকে ফোন করেছিল। ঔষধ প্রেশক্রিপশন করে দিল। 

(চলবে—-)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।