মধ্যরাত : পর্ব-১২৩

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন), 

(গত পর্বের পর) : মনটা যেন কেমন ব্যাথায়, বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়ে একটা কাগজ নিয়ে খস খস করে ছুটির দরখাস্ত লিখে ফেললাম। এতদিন চাকুরি করছি কিন্তু কোনদিন অসুস্থ হয়ে ছুটি নেইনি। আজ আমি অসুস্থ, বড় অসুস্থ। ডাক্তারের পরামর্শ নেবার জন্য ডাক্তারের কাছে গেলাম, ডাক্তার দেখে শুনে বিশ্রাম নেবার জন্য বললেন। আর বললেন, ব্লাড প্রেসারটা বেড়েছে, ঔষধ নিবেন। ঠিক যেন বড়দিও হাতের স্পর্শ। তেমনি মায়ায়, ভালবাসায়, আদরের পরশ বুলিয়ে গেল। মাথায় খুব যন্ত্রনা হচ্ছে, মনে হচ্ছে যেন ঘাড়টা ছিড়ে যাবে। ব্লাড প্রেসারের ১টি টেবলেট খাওয়াল। দোলা বলল, দাদু তুমি চোখ বুজে থাক, আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দেই। দোলাকে বললাম, দোলা সুশান্তকে ফোন কর, আর আমার এক ক্লাস ফ্রেন্ড ডোরা ওকে ফোন কর। আমার খুব অসুখ। দোলা নোট বুক দেখে ওদের ফোন করল। সুশান্ত ইউনিভার্সিটিতে ছিল, উমা ফোন ধরে দোলার সাথে কথা বলল। কিন্তু ডোরাকে বাসায় ফোন করে পাওয়া গেলনা। দোলা বলল, দাদু মিস ডোরাকে পেলাম না। আমি বললাম, ও বোধ হয় ভার্সিটিতে। আচ্ছা সন্ধ্যার দিকে করো।
আমি চোখ বুজে শুয়ে থাকলাম। দোলা থার্মোমিটার লাগিয়ে দেখল জ্বও চার এর ঘরে। আমাথায় আইসব্যাগ দিল। আমি ঘুমের ঘোরে কচকে বললাম, কচ ঐ গানটা গাওনা ? মোর সমাধির পরে জ্বেলে দিও— জীবনে যদি দীপ জ্বালাতে নাই পার। দোলা ডাকল দাদু, ও দাদু ওসব কি বলছ ? কচ এখানে নেই। দাদু, কচকে ডাকব ? ফোন করব ? বললাম, হ্যাঁ করো, দোলা কচকে ফোন কর। দোলা উঠে গিয়ে ওকে ফোন করল। কচ বাসায় ছিল, কচ দোলার সাথে অনেকক্ষণ কথা বলল। দোলা বল তুমি আসনা ? আমি শুয়ে শুনছি। দোলা কচকে ডাকছে, দোলা বলল শুধু দাদু আর আমি।
সন্ধ্যা বেলা সুশান্তর গলা ভেসে এল। দোলা ফোনের রিসিভার আমার কাছে দিল। সুশান্ত বলল তোর এত অসুখ আমাকে জানাসনি কেন ? ডাক্তার দেখিয়ে ঔষধ খাচ্ছিস ? বললাম, সবই করেছি। জ্বও খুব চার ঘরে চলছে, ব্লাড প্রেসার বেড়েছে, বোসায় আমি-দোলা। সুশান্ত বলল, দু’দিন পর উইক এন্ড ডেতে আমি আসছি। তুই চিন্তা করিসনা। ডোরাকে জানিয়েছিস ? ওকে ফোনে পাওয়া গেলনা। সুশান্ত বলল আচ্ছা ওকে খবর দিব। ফোন ছেড়ে দিলাম। সুশান্তর সাথে কথা বলে মনটা বড় হাল্কা লাগছে। তবু বিদেশে বিভুঁয়ে বন্ধু-বান্ধবী, দু’একজন বিপদে দেখবার আচে এই কথা ভেবে।
সন্ধ্যার দিকে ডোরার ফোন এল। তখন দোলা বসে বসে আমাকে মাথায় আইসব্যাগ রাখছিল। ক্রিং ক্রিং শব্দে দোলা দৌড়ে গেল। হ্যালো আমি ডোরা বলছি। দোলা ফোনের রিসিভার আমার কাছে দিল, হ্যালো হ্যালো প্রশান্ত, সুশান্ত আমাকে ফোন করল তোমার নাকি অসুখ ? আবার বেড়েছে জ্বও ? বললাম, হ্যাঁ ডোরা। খুবই অসুস্থ আমার খুব জ্বর, ব্লাড প্রেসার। ডোরা বলল কে তোমাকে দেকা শুনা করছে। ডোরা বলল, ও তো ছেলে মানুষ কি এমন বা বুঝে। তবু আমার আপন লোক মন্দেও ভালো। আমি আসব ? আমি বললাম, না থাক তুমি ফোন করে খোঁজ নিলে আমি কৃতার্থ হব।
ডোরা ফোন ছেড়ে দিল। দোলা সন্ধ্যা বেলা আবার কচকে বলল জান কচ দাদু তোমাকে জ্বরের ঘোরে গান গাইতে বলল। ঐ যে একটা গান দাদুর খুব প্রিয়- মোর সমাধির পরে জ্বেলে দিও। আমি শুয়ে শুয়ে আকাশ-পাতাল ভাবছিলাম। তখনও গায় অনেক জ্বর, জ্বরটা আগের চেয়ে একটু কমেছে। তবে মাথা ভীষণ ধরা। বড়দিও কাছে দোলার বিয়ের মত চেয়েছি, বড়দিকে লিখেছি ভাল সম্বন্ধ। যখন হাতে আছে বিয়ে দেওয়াই ভাল। ছেলেটিও উপযুক্ত। দোলা কাছে এসে বলল, দাদু কি খাবে বল ? আমি বললাম, কিছু খেতে ইচ্ছে করেন। আমাকে ঘুমুতে দাও। দোলা বলল, আচ্ছা তুমি ঘুমোয়, তোমাকে আর ডিসটার্ব করব না। আমি চোখ বুঝে থাকলাম।

(চলবে——–)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।