মধ্যরাত : পর্ব-১২২

ড. তাইবুন নাহার রশিদ (কবিরত্ন), 

(গত পর্বের পর) : কচ বলল, দাদু কাল খুব ভোরে চলে যাব। যদি কোন ভুলভ্রান্তি, দোষ-ত্রুটি করে থাকি দাদু ক্ষমা করবেন। আর আপনি আসুন না দাদু, টরেন্টোয় থেকে ক’দিন বিশ্রাম করবেন। টরেন্টো অনেক অনেক বড় জায়গা। আর আপনার শরীরটা ভালনা, বিশ্রামে থাকবেন। আমি বললাম। তাই দেখি সুশান্তর ওখানে ক’দিন বিশ্রাম নেব। রাতে সকলেই খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। খুব ভোরে কচ বৌদি চলে গেল। দোলা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বৌদিকে প্রণাম করল। কচ শুধু একবার দোলার চোখের পানে চেয়ে চোখ নামিয়ে নিল। আমি ক্লান্ত দেহে, কচের কাছে গিয়ে মাথায় হাত রেখে আর্শিবাদ করলাম।
কচ চলে গেল, সমস্ত বাড়ীটা যেন নিস্তব্ধ নিঝুম হয়ে কচের জন্য ফুঁফিয়ে কাঁদছে। দোলার কেমন লাগছে আমি বলতে পারব না। তবে আমার বুকের ভিতর যেন একটা হাতুড়ির ঘা পরল। কোথাকার একটা অজানা, অচেনা ছেলে আমার হৃদয়টাকে এতখানি বশীভূত করে ফেলল। আশ্চর্য্য মায়া পৃথিবীটা একটা মায়ার খেলা। আজ নিজকে বড় অসহায় মনে হয়, কেউ কাছে থাকলে কেউ আপনভাবে গ্রহণ করলে, আমার নিজকে খুব শক্তিশালী মনে হয়। অসুখের পর শরীরটা বেশী ভাল বোধ করছিনা। আর বয়সওত বেড়ে যাচ্ছে, এতদিন শরীর আমার বেশ ভাল বোধ করেছি। হঠাৎ ব্লাড প্রেসারটা বেড়ে যাওয়াতে আমি বড় কাবু হয়ে পরেছিলাম। জানিনা আগামী বৎসরগুলো কিভাবে কাটবে।
অনেক দিন হয় ইউনিভার্সিটি থেকে দু’সপ্তাহের ছুটি নিয়েছিলাম। এখন আবার সময় হল ইউনিভার্সিটিতে যোগদান করা। দোলাকে বললাম। দোলা আমার জন্য একটু ভাত, মাছের ঝোল কর। সেই ছোট বেলা অসুখ থেকে উঠে বড়দি মাগুর মাছের ঝোল করে দিতেন। কালজিরা (পোলাওয়ের চাল) দিয়ে ভাত করে দিতেন ¯œান করে এসে তাই খেয়ে ছুটাছুটি করেছি। চার-পাঁচ যেন সুস্থ হয়ে, শরীরে শক্তি সঞ্চয় করেছি। কিন্তু আজ আর সেই ছোট বেলার সেই অপরিসীম শক্তি ফিরে আসছেনা। যাক যৌবনকে কেউ ধরে রাখতে পারেনা। জ্বরা ব্যধি বার্ধক্ক মৃত্যু, এর হাত থেকে কারও নিস্তার নেই। দোলা এসে বলল, দাদু তুমি ¯œান করে এস। টেবিল তোমার খাওয়া দিয়েছি। আমি ঘড়ি দেখে বাথরুমে ঢুকলাম। তাড়াতাড়ি ¯œান সেরে খেতে বসলাম। মুখে যেন রুচি নেই, এত সুন্দর রান্নার সুগন্ধ মন যেন ভরে যায়। তবু খেতে পারিনি। তাড়াতাড়ি কাপড়-চোপড় পড়ে বাস ধরার জন্য বাসের লাইনে দাঁড়ালাম। কিছুক্ষণের মধ্যে ইউনিভার্সিটিতে এসে পৌঁছে গেলাম।
সেদিন ক্লাশের ঢুকে যেন আমি আগের মত উচ্ছাস নিয়ে পড়াতে পারলেমনা। মাথা ধরে গেল। শরীরটা যেন কাঁপতে লাগল। তবু কোন রকমে ক্লাশের কাজ সারলাম। কমন রুমে এসে বসলাম। অমিয়, দেবতোষ, বিজন বলল প্রশান্ত বাবু শরীর আপনার কেমন চলছে ? বললাম, ভালনা; খুব দুর্বল বোধ হয়। ওরা বলল, শরীর সেরে গেলে ঠিক হয়ে যাবে। সকলেই বলল, কিছুদিনের ছুটি নিন। বাড়ী ফিরে এসে বড় ক্লান্ত বোধ করেছিলাম। ঠিক করলাম শিঘ্রই একটা ছুটির দরখাস্ত করে ছুটি নিব। দোলাকে বললাম, দোলা আমার শরীরটা ভাল লাগছেনা। কেমন যেন হাত-পা কাঁপে, জ্বর আসছে মনে হয়। দোলা কাছে এসে কপালে হাত দিয়ে বলল, দাদু তোমার গায়ে কিন্তু বেশ জ্বর। তুমি কেন ভার্সিটিতে গিয়েছিলে ? বললাম, ঘরে একা একা ভাল লাগেনা। ভার্সিটিতে গেলে বন্ধু-বান্ধবরা কমন রুমে বসে। অনেক গল্প হয়, রাজনীতি সমাজ নীতি, গার্হস্থনীতি কতরকম কথা কত রকমের মানুষ; সেজন্য যাই। ছাত্রদের পড়াই কচি কোমল ছাত্র-চাত্রী গুলির সবুজ সুন্দর মনের গহীনে প্রবেশ করে দুটি কথা বলি, দু’টি কথা শুনি। দোলা, আমি বড় একা, বড় একা।

(চলবে————)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।