মধ্যরাত : পর্ব-১২১

ড. তাইবুন নাহার (কবিরত্ন),

 (গত পর্বের পর) : আমি বললাম, বড় দিনে আমরাও ভার্জিনিয়ায় যাব। ওখানের ইউনিভার্সিটির প্রফেসার মিস ডোরা আমার ক্লাশ ফ্রেন্ড, আমার কক্রোডিয়া ইউনিভার্সিটির প্রফেসাররা সব বড়দিনে ভার্জিনিয়া যাবে। সেখান থেকে একে বারে ফ্লোরিডা-ডিজনী ওয়ালর্ডে। আমাকে যেতে হবে ওদের সাথে, তখন তুমি যাও এক বারে হৈ হুল্লোর আমোদ ফুর্তি করা যাবে। কচ কি যেন ভাবল বলল, আচ্ছা এখন টরেন্টোতে যাই। তারপর কোথায় যাব জানিনা। তবে আমার কুসুমের ওখানে একবার যেতে হবে। দাদু আমরা কাল সকালেই টরেন্টোয় চলে যাব। আপনি সুস্থ বোধ করলে আসেন। টরেন্টো একদম কাছে। আমরাত ছোট বেলায় মন্ট্রিল টরেন্টো করতাম। এখন অনেক দায়িত্ব এসে গেছে, তাই সহজে কোথাও যেতে গেলে অনেক ভাবি।
বৌদি কচ এর কাপড় নিজের কাপড় চোপড় গুছিয়ে নিচ্ছেন। দোলা সারাটা দিন বেলকুনিতে বই নিয়ে বসে বসে কি যেন ভাবছে। কচও বেলকুনিতে দোলার কাছে বসে অপ্রয়োজনীয় অনেক কভা বলল। দোলার মুখে কোন কথা নেই, সে যেন বোবার মত ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে। আমি ব্লাড প্রেসারের ঐষধ খাবার জন্য দোলাকে ডাকলাম। দোলা এসে নীরবে কাছে দাঁড়িয়ে থাকল। বললাম, আমার প্রোসারের ঔষধ দাও। নীরবে ঔষধটা এনে আমার হাতে দিল। আমি বললাম, দোলা আমি আর একটু সুস্থ হলে আমরা টরেন্টোয় যাব। তুই ভাল করে পড়াশুনা কর। বড়দিকে চিঠি দিয়েছি, উত্তর এলে তোকে জানাব। দোলা চুপ করে থাকল।
আজ সন্ধ্যার পর কচ বেহালা ও গীটার নিয়ে বসে নাড়া চাড়া করতে লাগল। আকাশে তখন বড় করে চাঁদ উঠেছিল। অসংখ্য তারায় আকাশ ভরে গিয়েছিল। কচ টুং টং করে বেহালায় সুর তুলছিল, আবার বন্ধ করছিল। হঠাৎ উঠে চলে গেল। এখানে সেখানে ঘুরে ঘুরে আবার এসে গীটারের তার-এ সুর তুলল। আমি আজ আকাশের মত একলা। গানের সুরটা অনেকক্ষণ কেঁদে কেঁদে থেমে গেল। হঠাৎ দোলা চা নিয়ে এল। কচকে এক কাপ দিয়ে আমাকে এক কাপ দিল। আমি বললাম, কচ ঐ গানটা গাও জীবনে যদি দীপ জ্বালাতে নাহি পার- মোর সমাধির পরে জ্বেলে দিও। কচ গীটারে অনেক সময় লাগিয়ে সুরটা বাজিয়ে গেল। মোর সমাধির পরে জ্বেলে দিও। আজ যেন সব কেমন থমথমে ভাব। উচ্ছাস উদ্দমতা উচ্ছলতা কচ দোলা কারও মধ্যে নেই। কেমন যেন উদাস উদাস ভাব। আমি বললাম, কচ এগানটা তুমি জান ? কোনটা ? চৈতি রাতের উদাস হাওয়ায় পরাণ আমার কাঁদেগো- বিদায় নেওয়া প্রিয়ার হেথা বাহুর মালা বাজেগো। কচ বলল না দাদু।

(চলবে——–)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।