মধ্যরাত : পর্ব-১২০

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন), 

(গত পর্বের পর) : কচ সুশ্রী, সুন্দর, স্বাস্থ্যবান, অমায়িক, ভদ্র, বিনয়ী, জাত শিল্পি, উচ্চ শিক্ষিত, উপযুক্ত। এর চেয়ে উপযুক্ত দোলার জন্য আর আসবেনা। আর দু’জন দুজনকে ভালবাসে। আমি বড়দিকে টিঠি দিলাম, দু-দিকের কথা জানিয়ে। অমিয়, ভবতোষ, বিজন এর মাঝে আবার মিষ্টার খানও যোগদান করেছেন। আমার শরীরের অসুস্থতা দেখিয়ে আমি একটু দূরে পাশ কাটিয়ে চলছি।
সেদিন ডোরার ফোন পেলাম। ডোরা বলল, হ্যাঁলো প্রশান্ত কেমন আছ ? আমি বললাম মরতে বসেছিলাম। বলকি ? আমাকে জানালেনা কেন ? কি করতে ? কেন তোমার কাছে আসতাম। সত্যি ? হ্যাঁ প্রশান্ত সত্যি। বলকি ? প্রশান্ত তুমিই খালি ভালবাসেত জান ? আমি জানি না ? তুমি-ত নাতনীকে কাছে রেখেছ। তবুওত কথা বলার কেউ আছে, আমার কেউ নাই। শোন যা বলছিলাম, দোলার কথা। দোলার বিয়ে দেবে না ? আমার হাতে ভাল ছেলে আছে। নাম তার কচ। উচ্চ শিক্ষিত, ভাল গান জানে। ভদ্র-বিনয়ী-ন¤্র। ওর বোন আছে ভার্জিনিয়ায়। সে আমাকে ধরেছে এ সম্বন্ধে তুমি না বলতে পারবে না।
আমি শুনে অবাক। এতদূর পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছে ? শেষ পর্যন্ত ডোরার কথা আমার ফেলার সাধ্য নেই। জানিনা ভবিতব্য মেয়েটার কপালে কি রেখেছে। আমি কতক্ষণ চুপ করে ভাবছিলাম অনেক কথা। দোলা আসছে, পড়াশুনো করবে- এম,এস,সি এইচ, ডি পর্যন্ত যেতে ৬-৭ বছর লাগবে। ততদনি দোলা আমার কাছে থেকে পড়াশুনো করবে। সময়ে অসময়ে আমাকে একটু দেখাশুনো করবে। এই ছিল আমার পরম আশা। আজ দোলাকে হরণ করবার জন্য দু’দিক যেই আবদার চলছে তাতেই আমার প্রাণান্ত।
সুন্দরী মেয়েদের বেশিদিন ঘরে রাখা সম্ভব হয় না। চারদিক থেকে মৌমাছিরা গুন গুন করতে থাকে। সেই ভ্রমরের গুনগুনানিতে কানে তালা লাগে। দোলা সুন্দরী বিদূষী। তাকে পাবার জন্য অনেকের লোলুপ দৃষ্টি তার প্রতি নিবন্ধ। সেটা আমি ভাল করেই জানি। তবু এতদিন তাকে সামলে রেখেছি। আর বোধ হয় তাকে সামলানো যাবে না। কচ তাকে ভালবাসে, সে ভালবাসাই দোলাকে চুম্বুকের মত আকর্ষণ করে কচের কাছে টেনে নিয়ে যাবে। দোলা আমাকে না বললেও আমি বুঝি। সব সময় কচ এর পাশে থাকে। কচ ছাড়া এ পৃথিবী তার কাছে মিথ্যা। কচ টরেন্টোয় যাওয়ার কথা বললেই ওর চেহারা অন্যরূপ ধারণ করে। কচ এর গান ওর কাছে অমৃত। এই গান গেয়ে, গীটার-বেহালার সুর দিয়েই কচ দোলাকে অভিভূত করে রেখেছে।
বৌদি আজ রান্নার তদারক করছিলেন। দোলা ইউনিভার্সিটিতে গেল। বলল, প্রশান্ত বাবু কি খাবেন ? অসুখের পর মুখে একদম রুচি নেই বললেই চলে। বললাম, বৌদি আলুর ভর্তা, মুগের ডাল, ছোট মাছ চচ্চরী। বৌদি তাই করে দিল। দোলা নেই, কচ এ ঘর ও ঘর ঘুরে বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে থনবার্ড বাইটা পড়ছিল। আমি ডাকলাম কচ এখানে এস। কচ এসে আমার পাশে বসল। বলল কি দাদু, না কিছুনা, আমার কাছে থাক। কচ বলল দাদু বৌদিকে নিয়ে আমি টরেন্টোয় যেতে চাই। দাদাকে রেখে এসেছি, কি খাচ্ছে, না খাচ্ছে। তারপর আমার নিজের কিছু কাজকর্ম আছে। আবার কুসুমের ওখানে যেতে হবে। ওকে কথা দিয়েছি পরীক্ষার পর যাব। পরীক্ষা শেষ হবার সাথে সাথে বৌদি বলল, মন্ট্রিলে আসার জন্য। বৌদির কথা রাখলাম। এখন আমার বোনের আবদার পূর্ণ করার পালা। (চলবে——–)।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।