ভোলায় যত্রতত্র ঔষধের দোকান, নজর নেই ঔষধ প্রশাসনের

ভোলায় ঔষধ প্রশসন নির্বিকার বলেই যত্রতত্র গড়ে উঠেছে নিষিদ্ধ ঔষধ সহ ঔষধের দোকান। ঔষধের মান এবং দাম নিয়ে সংশয় বোদ করছেন ক্রেতা। একাধিক ফার্মেসি স্বাধিকারী ঔষধ বিক্রি করছে কোম্পানির ব্রান্ড নাম জানার উপর বিশেষ করে, কিন্তু তিনি ঔষধের জেনেটিক নাম ও Dosage, Indications or contraindication জানেন না। এক ঔষধ বিক্রেতাকে প্রশ্ন ছিলো “এজিথ” কি ? সে এজিথ একমি কোম্পানির ঔষধ বলেই জানালেন। এজিথ কোন জেনারেশনের প্রোডাক্ট, জেনেটিক নাম, ডোজ বা ইন্ডিকেশন কিছুই না জানলেও তার দোকানে এসব ঔষধ বিক্রি চলছে বেশ ধুমধামে। তাকে জানতে চাওয়া হয়েছিল পিপিআই কি ? সে জানান এটিও একমি কোম্পানির গ্যাসের ঔষধ, পিপিআই কিসের সংক্ষিপ্ত রুপ বা এর পূর্ণরুপ কি? তাও জানেন না এ ফার্মেসির মালিক। নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ ড্রাগ লাইসেন্স, কেমিস্ট ও ফার্মাসিস্ট সনদপত্র ছাড়াই চলছে দেধারসে ঔষুধ ব্যাবসা। সরকারি রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের ব্যাবস্থাপত্র ছাড়াও এন্টিবায়োটিক ঔষুধসহ সব ধরনের ঔষুধ বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এমন কি মুদি দোকানেও মিলছে ৪র্থ জেনারেশনের এন্টিবায়োটিক ঔষধ।
ঔষধ প্রশাসনের কোন রকম নজরদারি না থাকায় আইনের তোয়াক্কা না করে ভোলার আনাচে-কানাচে গাও-গ্রামের চিপায়-চাপায় এমনকি নদীর কুলের মাছঘাট বা খেঁয়াঘাটেও গড়ে উঠেছে ঔষুধের দোকান। এসব দোকানেও রয়েছে ট্রাইজন, সেফুক্লেভ এর মত হাই এন্টিবায়টিক ঔষধ। কিন্ত বিক্রেতা শুধু নামই জানেন, উপাদান কি, ডোজ কত, কার্যকারিতা কি কিছুই জানেন না তারা। নিজেকে ডাঃ হিসেবে জাহির করার জন্য প্রেসক্রিপশন ও লিখেন অনেকে।
অনেক ফার্মেসিতে কেমিস্ট বা ফার্মাসিস্ট না থাকলেও সবধরনের রোগের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে নির্বিঘেœ। আবার কোন কোন ফার্মেসিতে দেখাযায় আরমপি, এলএমএএফ সনদ সাঁটানো রয়েছে। তবে তাদের কেউ যানেন না আরমপি, এলএমএএফ এর পূর্ণরূপ কি। এসব দোকানে অবাধে বিক্রি হচ্ছে যৌন উত্তেজক টেবলেট ও মহিলাদের গর্ভপাতের ঔষুধও।
পরিবার পরিকল্পনার সরবরাহকৃত ডোপ ইনজেকশন বিক্রয় হচ্ছে কিছু দোকানে। অবাধে ঔষধ বিক্রি হওয়াতে এতে করে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে ক্রেতা সাধারণ। এভাবে ব্যবসা পরিচালনার জন্য ঔষুধ প্রশাসনের উদাসীনতাই প্রধান কারণ বলে মনে করেন সুশীল সমাজ।
এদিকে বর্তমানে কিচু ঔষধের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে অনেক দোকানেই পুর্বের মূল্য কেটে নতুন দাম সংযুক্ত করতে দেখা গেছে। সমাজে প্রতিষ্ঠিত ও সম্মানজনক ব্যবসার মধ্যে ফার্মেসি ব্যবসা অন্যতম। এই ব্যবসা করার জন্য বাধ্যতামূলক হচ্ছে। ঔষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে ড্রাগ লাইসেন্স নেয়া এবং প্রত্যেক ফার্মেসিতে একজন সনদপ্রাপ্ত ফার্মাসিস্ট থাকা। অথচ ভোলা সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় রয়েছে ১ হাজার ৫শ’ এর মত ঔষুধের দোকান। এর মধ্যে অধিকাংশ ফার্মেসীতে নেই ড্রাগ লাইসেন্স, কিংবা সনদপ্রাপ্ত ফার্মাসিস্ট। এদের অনেকের বিরুদ্ধে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিকসহ বিভিন্ন রোগের স্পর্শকাতর ঔষধ বিক্রিরও অভিযোগ রয়েছে। তবে উপজেলার বিভিন্ন ফার্মেসীতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ভোলা জেলা কার্যালয় থেকে অভিযান পরিচালনা করেছেন মাঝে মধ্যে।
জেলা ঔষধ তত্বাবধায়ক এর সূত্র মতে, অ্যালোপ্যাথিক, হোমিওপ্যাথিক ও ইউনানি মিলে ভোলায় প্রায় ২শ’ ২০ থেকে ২শ’ ৩০টি দোকানে ড্রাগ লাইসেন্স আছে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ঔষধ তিনিই বিক্রি করতে পারবে যার ফার্মাসিস্ট ট্রেনিং আছে এবং যিনি ড্রাগ লাইসেন্স পেয়েছেন। ড্রাগ লাইসেন্স ছাড়া ঔষধের ব্যবসা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং আইনগতভাবে দন্ডনিয় অপরাধ।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভোলা সদরস্থ ও উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে গড়ে উঠেছে এসব অবৈধ ফার্মেসি ব্যবসা। চিকিৎসকের ব্যাবস্থাপত্র ছাড়াই ক্রেতাদের এন্টিবায়োটিকসহ যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট অবাধে বিক্র করা হচ্ছে। একই চিত্র জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ও ইউনিয়নের বিভিন্ন বাজারে গ্রামে গড়ে ওঠা ফার্মেসিগুলোতেও।
ভোলার নতুন বাজারস্থ ভোলা ফার্মেসি, বিসমিল্লাহ ফার্মেসির মালিক ইব্রাহিম জানান, আমাদের ঔষুধের দোকানে সব সময় ফার্মাস্টি থাকে এবং রেজির্স্টাট চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া এন্টিবায়েটিক ঔষুধ দেয়া হয় না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ফার্মেসীর মালিক বলেন, ‘ড্রাগ লাইসেন্স পাওয়াটা অনেক কঠিন ব্যাপার। তাই লাইসেন্সের জন্য আবেদন করিনি। শুনেছি, আবেদন করলে নানা অজুহাতে অফিসের লোকজন টাকা-পয়সা চায়। এছাড়া লাইসেন্স ছাড়াই তো ঔষুধ বিক্রয় করছি, কোন সমস্যা তো হচ্ছে না। ঔষধ প্রশাসনের লোকজন এদিকে আসেনা। আর যদি কখনো আসে তখন এক ব্যাবস্থা হবেই। প্রশ্ন ছিলো কি ব্যাবস্থা হতে পারে ? এসব এখন সিস্টেমে বোঝেন না ! এই বলে উত্তর দেন।
এ বিষয়ে ভোলায় কর্তব্যরত ড্রাগ সুপার ইব্রাহিম জানান জেলায় ২০০০ এর মত ড্রাগ লাইসেন্স রয়েছে। এবং মানহীন ওষধের বিষয়ে আমরা তাদের তদারকি করছি, এবং এরা প্রত্যেকেই ফার্মেসি কাউন্সিল থেকে সনদ প্রাপ্ত। সনদ বিহীন ড্রাগ লাইসেন্স পাবার কোন সুযোগ নেই। প্রশ্ন ছিলো লাইসেন্সকৃত ২০০০ দোকান হলে লাইসেন্স বিহীন কতসংখ্যক দোকান আছে। তিনি বলেন, আমারা তিন জন লোক আমাদের ২০০০ হাজার ফার্মেসি দেখভাল করতে কষ্ট হচ্ছে। তবুও তদারকি চলছে মানহীন ওষুধ যেন কেউ বিক্রি না করে। তবে লাইসেন্স ও ফার্মাসিস্ট বিহীন দোকানের সংখ্যা বেশি হলেও এসব দোকানের মালিকরা বেশির ভাগই শিক্ষক বলে জানান তিনি।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।