সর্বশেষঃ

ফলোআপ :

ভোলায় ভেসে আসা ভুতুড়ে বার্জটি চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে

ভোলার চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলা সীমানাবর্তী চর নিজামন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে ভেসে আসা জনমানবশুণ্য ভুতুড়ে বার্জটি চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোন ভোলা অফিসের মিডিয়া কর্মকর্তা লে. কে এম শাফিউল কিঞ্জল। তিনি শনিবার বিকেলে ভোলার বাণী’কে বলেন, চর নিজাম সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে ভেসে আসা বার্জটি চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়ার জন্য চট্টগ্রাম থেকে একটি ডার্ক বোট সন্ধ্যার মধ্যে ঘটনাস্থলে এসে রোববার সকালে চট্টগ্রামে নিয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, বার্জটির নিরাপত্তার জন্য মালিক পক্ষ ৪ জন ওয়াচ ম্যান পাঠাচ্ছে। তারাও শনিবার রাতের মধ্যে ঘটনাস্থলে এসে বার্জে অবস্থান করবেন। এ ছাড়া গত শুক্রবার কোস্ট গার্ডের ১০ সদস্যের একটি ও শনিবার ১০ সদস্যের একটিসহ গত দুইদিনে মোট ১৯ সদস্যদের দুইটি দল বার্জে অবস্থান করছেন।
এদিকে কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোন ভোলার মিডিয়া কর্মকর্তা লে. কে এম শাফিউল কিঞ্জল স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, এ জেড কিংদাউ নামের বার্জটি প্রায় ১৩ হাজার মেট্রিক টন বিদেশি পাথর এবং পাথর ভাঙার যন্ত্রপাতিসহ ভারতের কাকিনাদা পোর্ট থেকে কক্সবাজারের মাতারবাড়ী আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্টের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল। পথে বৈরী আবহাওয়ার কবলে পরে টাগ বোর্ড থেকে বার্জটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর এ জেড কিংদাউ নামের এই বার্জটি সাগরে ভাসতে ভাসতে চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর ইউনিয়নের চর নিজামের পূর্ব প্রান্তে এসে আটকা পড়ে। বৃহস্পতিবার দিনভর এবং শুক্রবার সকালে স্থানীয়রা বার্জ থেকে কিছু মালামাল সরিয়ে নেয়। বর্তমানে কোস্টগার্ডের সদস্যরা বার্জটিকে তাদের হেফাজতে রেখেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেছেন, ভাসমান নৌযানটির মালামাল নিকটবর্তী চরনিজাম ও ঢালচরের স্থানীয় বাসিন্দারা ট্রলারে গিয়ে নিয়ে আসছেন। এটি ছোট আকারের একটি জলযান। যা বন্দর থেকে নৌপথে পণ্য পরিবহন করে বলে জানিয়েছেন মনপুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল নোমান।
শুক্রবার থেকে বার্জটি নৌবাহিনী এবং কোস্টগার্ড দেখভাল করছে। এটি বিদেশি কোনো নৌযান নয়। বরং বাংলাদেশে নির্মাণাধীন মেগা প্রজেক্ট মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজে ব্যবহৃত একটি জলযান। তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত আমি জানতে পেরেছি রাডারের তরঙ্গ বিচ্ছিন্ন হয়ে বার্জটি গন্তব্যচ্যুত হয়ে ভাসতে ভাসতে এই এলাকায় চলে এসেছে। নদী শাসনের জন্য পাথর আমদানিতে বার্জটি ব্যবহার করতো প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সরকারি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে যোগাযোগ করেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বার্জটি টেনে নিতে টার্ক বোট নিয়ে আসছে বলে জানিয়েছে। আশা করি শনিবারের (১৬ জুলাই) মধ্যে তাদের কাছে বার্জটি হস্তান্তর করা যাবে। বার্জে যে পাথরগুলো রয়েছে সেগুলো নদী শাসনের কাজে বিভিন্ন প্রকল্প এলাকায় ফেলা হয়।
মনপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাঈদ আহমেদ বলেন, আমি গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দুই দিন সেখানে গিয়েছিলাম। সাগর উত্তাল থাকায় যাতায়াতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত আমরা জানতে পেরেছি সেটিতে বাংলাদেশের পণ্য ছিল। কিন্তু কোথা থেকে যাত্রা শুরু করেছিল তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পাথরবোঝাই নৌযানটির উপরের অংশ খোলা। এতে একটি এস্কাভেটর মেশিন, পাথর ভাঙার মেশিন ও প্রয়োজনীয় মালামাল রয়েছে।
মনপুরা কোস্টগার্ডের কন্টিজেন্ট কমান্ডার এনামুল হক বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে বার্জটি নিয়ন্ত্রণে নেয় কোস্টগার্ড। আমরা ধারণা করছি, সমুদ্র উত্তাল থাকায় জাহাজের সঙ্গে থাকা বার্জটি শিকল ছিড়ে ভেসে যায়। পরে এটি চরনিজাম সংলগ্ন সমুদ্র এলাকার চরে আটকে থাকে। বার্জে কেউ না থাকায় স্থানীয় লোকজন ও জেলেরা ট্রলারে করে বার্জে থাকা গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ, তেল ও অন্যান্য মালামাল নিয়ে গেছে বলে জেনেছি।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) ‘আলকুবতান’ নামের ওই বার্জটি ভাসতে দেখে স্থানীয় প্রশাসনকে জানায় লোকজন। প্রাথমিকভাবে বিদেশি জাহাজ বলে তথ্য ছড়িয়ে পড়লেও পরবর্তীতে তা ভুল প্রমাণিত হয়।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।