সর্বশেষঃ

দুই দিনের অভিযানে আড়াই হাজার লিটার তেল জব্দ, ১০ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে ৮১ হাজার টাকা জরিমানা

ভোলায় তেল নিয়ে তেলেসমাতি

ভোলায় বোতলজাত সয়াবিন তেল নিয়ে রীতিমত তেলেসমাতি শুরু হয়েছে। অবৈধভাবে মজুত রেখে সয়াবিন তেলের কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করছে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী। অবৈধভাবে মজুত রেখে সয়াবিন তেলের কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করায় প্রশাসনও তৎপর হয়ে উঠেছে। তারা তেলের গুদামে অভিযান শুরু করে। গত শুক্রবার ও শনিবার দুই দিনে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ৩৭৬ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসন। এ সময় ১০টি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে ৮১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভোলায় গত কয়েক মাস ধরে দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যায়নি। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় হঠাৎ দোকান থেকে যেন উধাও হয়ে যায় ভোজ্য এ তেল। এতে ক্ষুব্দ হয়ে পড়েন সাধারণ ক্রেতারা। ক্রেতাদের অভিযোগ অতি মুনাফার আশায় ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে তেল মজুদ রেখে কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করছেন। এ নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে আলোচনা সমালোচনা। এ বিষয়ে তারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। ফলে সয়াবিন তেল সংকট নিরসনে মাঠে নামে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসন। এর অংশ হিসাবে গত শুক্রবার সদর উপজেলার পরানগঞ্জ বাজারে একটি গোডাউনে অভিযান চালিয়ে ৩০০ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ সময় তেল মজুতের দায়ে হৃদয় স্টোরের মালিককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
গত শনিবার দুপুরে জেলার লালমোহন উপজেলা সদরে চার প্রতিষ্ঠানকে ২১ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। একই সঙ্গে অবৈধ মজুদ রাখা ৩০০ লিটার ভোজ্যতেল জব্দ করা হয়েছে। এ সময় পণ্যের গায়ে মূল্য তালিকা না থাকা এবং অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রির দায়ে রবিন বাণিজ্য বিতানকে ৫ হাজার, মতিন স্টোরকে ৫ হাজার, মা স্টোরকে ১ হাজার ও হাওলাদার স্টোরকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জব্দ করা হয়েছে ৩০০ লিটার তেল। পরে জব্দকৃত তেলগুলো ন্যায্য মূল্যে সাধারণ ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।
সর্বশেষ শনিবার রাতে বোরহানউদ্দিন উপজেলায় রুপচাদা সয়াবিন তেলের ডিলার মাকসুদ চৌধুরীর তেলের গুদামে অভিযান চালিয়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। অভিযানে ১৭ শত ৭৬ লিটার মজুদ রাখা রুপচাদা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার সরকারি মূল্য ১৬০ টাকা দরে বাজারে বিক্রি করা হয়। বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহি অফিসার মোঃ সাইফুর রহমান এ অভিযান পরিচালনা করেন। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ভোলার সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এদিকে প্রশাসনের অভিযানের ফলে ভোলার বাজারে দেখা মিলেছে বোতলজাত সয়াবিন তেল। অনেক দোকানেই এখন বিক্রি হচ্ছে এ ভোজ্য তেল।
তবে, ক্রেতারা বলছেন দাম কমেনি। ভোলা সদর উপজেলার যুগীরঘোল এলাকার দোকানি সৌরভ জানান, গতকাল রোববার ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি করা হয়েছে ৯৮৫ টাকা। এ নিয়ে জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার একজন ভোক্তা ও বোরহানউদ্দিন মহিলা কলেজের অর্থনীতি বিষয়ের সহকারি অধ্যাপক মোঃ মনিরুজ্জামান গতকাল রোববার সকালে তার ফেসবুক আইডিতে বোতলজাত সয়াবিন তেলের ছবি পোস্ট করে লিখেন, তেল নিয়ে কতো তেলেসমাতি ! শুধু নাই ! আর নাই ! যার যার গুদামে লুকিয়ে রেখে উচ্চমূল্যে বিক্রি। অর্থনীতির ভাষায় যাকে বলে ফটকা কারবারি। বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান এসব ফটকা কারবারির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করলেন। শনিবার সকাল-সন্ধ্যায় অভিযান করলেন। ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করলেন রূপচাঁদার এজেন্টকে। অবৈধভাবে মজুদ করে রাখার অপরাধে ১৭ শত ৭৬ লিটার রুপচাদা সয়াবিন তেল জব্দ করেন। আশা করছি আরও ফটকা কারবারী ধরা পড়বেন। ধন্যবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে।
ভোলায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও প্রশাসনের অভিযানের পরেও সংকট যায়নি বোতলজাত সয়াবিন তেলের। এখনো ভোলা সদর উপজেলার অধিকাংশ দোকানে পাওয়া যাচ্ছে না ভোজ্য এ তেল।
এ বিষয়ে ভোলা শহরের হাসপাতাল রোড এলাকার বাসিন্দা কালিকীর্তি সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনির সাজওয়াল গতকাল রোববার ভোলার বাণীকে বলেন, “বোতলজাত সয়াবিন তেল এখন যেন সোনার হরিণ”। তিনি বলেন, আমি সদরের বেশ কয়েকটি দোকানে খুঁজে পাইনি সয়াবিন তেল। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। এখনো সংকট কাটেনি এ ভোজ্যতেলের। এ স্কুল শিক্ষক আরও বলেন, আমি আমার স্ত্রীকে বলেছি দুই লিটার সয়াবিন তেল এক মাস রান্না করতে। এ ছাড়া আর কোন উপায় নেই। আমরা নিম্ন আয়ের মানুষ এখন নিরুপায় হয়ে পড়েছি।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে শহরের মুসলিম ট্রেডার্সের সত্বাধিকারী মোঃ ইউনুস বলেন, ভোলায় কিছু তেলের ডিলারের কাছে তেল আসছে। কিন্তু দাম খুব বেশী। ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের গায়ের মূল্য লেখা ৯৬০ টাকা। ডিলাররাও আমাদেরকে ওই দামেই দিতে চাচ্ছে। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, আমরা সেই তেল দোকানে এনে লাভ কি? তাই আমরা সেই সয়াবিন তেল আনছিনা। একই কারনে ভোলার অধিকাংশ দোকানী বোতলজাত সয়াবিন তেল আনেননা। ফলে জেলায় এখনো তেলের সংকট রয়েছে। তবে, সয়াবিন তেল তীর কোম্পানির ভোলার ডিলার মোহন বনিক রোববার বিকেলে বলেন, ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের গায়ের মূল্য লেখা ৯৮৫ টাকা। কিন্তু পাইকারী ব্যবসায়ী দোকানীদেরক আমরা দিচ্ছি ৯৬০ টাকা দরে। তবে, চাহিদার তুলনায় আমাদের কোম্পানি থেকে কম দিচ্ছে। তাই ভোলার সব পাইকারী দোকানীকে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে ভোলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সুজিদ হাওলাদরকে ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ভোলার সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান গতকাল রোববার বিকেল সাড়ে ৫টায় বলেন, আমাদের অভিযানের পর লালমোহন ও চরফ্যাশন উপজেলাসহ কয়েকটি উপজেলায় ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কম্পানির বোতলজাত সয়াবিন তেল আনা শুরু করেছে। কিন্তু সদর উপজেলার অনেক ব্যবসায়ী দোকানে এখনো কি কারণে তেল আনছেন না তা বোধগম্য নয়। তবে, কিছু দিনের মধ্যে সব কোম্পানিগুলোই সব পাইকারী দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল দিবে বলে মনে করছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।