হোগলা পাতার রশি-তে সংসার চলে মরিয়ম-আচিয়াদের

মরিয়ম বেগম (৪০)। ভোলার সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের গ্রামে তার বাড়ি। মেঘনা নদীতে ভাঙার পর তিনি দড়িরামশঙ্কর গুচ্ছগ্রামে থাকেন। তার স্বামী একজন দিনমজুর। দৈনিক মজুরিতে অন্যের ক্ষেতখামারে কাজ করেন তিনি। এতে যা পান তা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। তাই স্বামীকে সহযোগিতা করতে হোগলা পাতা দিয়ে রশি তৈরির উদ্যোগ নেন মরিয়ম বেগম।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্বামীর একার আয়ে সংসারের সব খরচ চালানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। সংসারের কাজ সামলিয়ে রশি বুনে দিনে ৩০০ টাকা আয় করতে পারি। এ দিয়ে সংসারের খরচ চালাই। দুই মেয়ে আর স্বামী-নিয়েই আমাদের সংসার। বড় মেয়ে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। ছোট মেয়ে এখনও ভর্তি হয়নি বিদ্যালয়ে। ছোট মেয়ে বিদ্যালয়ে ভর্তি হলে সংসারের খরচ আরও বাড়বে। স্বামীকে সহযোগিতা করতেই মূলত এ রশি তৈরির কাজ করছি। যা আয় হয় তা দিয়ে কিছুটা হলেও সংসারের উপকারে আসছে।


শিবপুর ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামের আচিয়া বেগম (৩০)। হোগলা পাতা দিয়ে রশি বোনেন। তার স্বামী আলী আকবর (৪০) একজন দিনমজুর। কাজ করেন অন্যের ক্ষেতখামারে। যা দিয়ে তেমন ভালো করে চলে না তাদের ৪ সদস্যের সংসার। দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে ৩য় শ্রেণির ছাত্রী। স্বামীকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে আচিয়া বেগম হোগলা পাতা দিয়ে রশি তৈরির কাজ বেছে নেন। তিনি দিনে ৩০০০ হাত রশি তৈরি করতে পারেন। যা থেকে রোজ আয় হয় ৩০০ টাকা। সংসারে ব্যয় করেন। আচিয়া বেগমের এর মতে, বছরে ৬ মাস হোগলা পাতা দিয়ে রশি তৈরির কাজ করি। এ থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে কিছুটা হলেও পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করতে পারছি।


শুধু মরিয়ম আর আচিয়া বেগম নয়। এ কাজ করেন ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া, কাচিয়া, বাপ্তা, ইলিশা, আলিনগর, শিবপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার নারী। যারা হোগলা পাতার রশি তৈরি করেন। রশি বুনে যে আয় করেন তা দিয়েই চলে তাদের সংসার। রশি বুনে পরিবারে বাড়তি আয়ের জোগান দেন এসব এলাকার নারীরা।


তথ্য সংগ্রহের জন্য সরেজমিনে গেলে তারা জানান, এসব রশি তারা বুনে সংগ্রহ করেন পাইকারেরা রশিগুলি মেপে মুল্য নির্ধারণ কলেন। ১০০ হাত রশির বুনলে ১০ টাকায় কিনে নেন। যা শ্রমের তুলনায় অত্যন্ত কম মূল্য দিয়ে থাকেন বলে তাদের অভিযোগ। অবশ্য হোগলা পাতাগুলি পাইকারগণ সংগ্রহ করে তাদেরকে বিনামূল্যে দিয়ে থাকেন বলে স্থানিয়রা যানান। এ রশি পণ্য বহনের ব্যাগসহ বিভিন্ন কুটির শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং বিদেশে রপ্তানি করা হয়।
এ বিষয়ে সুশীল সমাজের সাথে আলোচনা করলে তারা জানান, যারা হোগলা পাতা শিল্পের সঙ্গে জড়িত তাদের ক্ষুদ্র ঋণের আওতায় এনে এ শিল্পকে আরও এগিয়ে নিতে হবে। তা হলেই কিছুটা হলেও এ সকল হত দরিদ্ররা তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারবে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।