সর্বশেষঃ

আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদিচ্ছার অভাব বলছেন স্থানীয়রা

ভোলায় স্পিডবোটেই চলছে মাদক সরবরাহ !

মাদকের রাজধানী মিয়ানমারের সান স্টেট থেকে তুয়াঙ্গী-ইয়াঙ্গুন হয়ে নৌপথে সিত্তেই (মিয়ানমার) হয়ে কক্সবাজারের মহেষখালী। মহেষখালী থেকে কারবারিরা সিত্তেই রুট ব্যবহার করে উপকূলীয় অঞ্চল ভোলায় নিয়ে আসছে মাদক। নৌপথে মাদক সরবরাহ সুবিধা হওয়ায় কারবারিরা বেশিভাগ সময়ে বড় বড় চালান গুলো সরবরাহে মেঘনা ও তেঁতুলিয়ার অবৈধ স্পিডবোট ব্যবহার করছে। গাঙ্গেয় অববাহিকার নি¤œাঞ্চলে অবস্থিত দেশের একমাত্র দ্বীপজেলা ভোলা। সমেয়র পরিক্রমায় তেঁতুলিয়ার তীরে গড়ে উঠা ভোলা সদর উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহী অঞ্চল হলো ভেদুরিয়া ইউনিয়ন, এখানে ৩০ হাজার মানুষের বসবাস। কলেজ সহ ২০টিরও অধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিদ্যমান। মাদকের বিস্তার ক্রমাগত এক ভয়ঙ্কর রুপ নিচ্ছে এখানে। স্থানীয়রা বলছেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদিচ্ছার অভাবেই এমনটা হচ্ছে।


সুত্রমতে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক অভিযানে মাদক সরবরাহের স্থান চিহ্নিত হওয়ায় কারবারিরা সরবরাহেরর রুট পরিবর্তন করে তেঁতুলিয়া নদী বেষ্টিত ভেদুরিয়া ও তার কাছাকাছি ইউনিয়নগুলোকে বেছে নিয়েছে। স্থানগুলোতে রাঁত গভীর হওয়ার সাথে সাথেই মাদক ব্যবসায়ীরা সংঘবদ্ধ হতে থাকে। প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, দ্রুতগামী সিএনজি, মটর সাইকেল ও দ্রুতগামী স্পিডবোটের ইঞ্জিনের শব্দে স্থানীয়দের ঘুম ভাঙ্গে। মাদক ব্যবসায়ীরা রাঁত ১২ টার পর থেকে ভোর রাঁত পর্যন্ত তেঁতুলিয়া নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট ব্যবহার করছেন। সংশ্লিষ্টি সুত্র বলছে, এই কাজে ৭টি স্পিডবোটেই মাদক সরবরাহ করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ভোলার তেঁতুলিয়া, মেঘনায় অবৈধ স্পিডবোটে সয়লাব। ভেদুরিয়া ঘাটেই ১২৪ টি স্পিডবোট, এর মধ্যে মধ্যে স্পেসাল নামে ৭টি বোড শুধু মাত্র মাদক কারবারি ও বিভিন্ন বে-আইনি কাজে ব্যবহাহৃত হয়। রাঁত ৩ টা থেকে ৪টার মধ্যে নদীর ডুবো চরগুলোতে স্পিডবোট নোঙ্গর করে ঢাকাগামী লঞ্চ আসার অপেক্ষায় থাকে। কাঙ্কিত লঞ্চ আসলে লঞ্চ থেকে মাদক পাচারকারি চক্রের সদস্য দুধর্ষ সাহানুর বেগম (৩০) সহ একাধিক আন্ডার গ্রাউন্ডের মাদক ব্যবসায়ীদের সহচর কর্তৃক মাদক বুঝে নদী পাড়ি দিয়ে ভেদুরিয়া সংলগ্ন তেঁতুলিয়া নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে অপেক্ষাকৃত মাদক ব্যবসায়ীদের হাতে পৌছে দেয়।
তেঁতুলিয়া সংলগ্ন ভেলুমিয়ার শীল বাড়ির দরজার ৪ রাস্তার মোড়, বিশ্বরোডের মাথার লঞ্চ ঘাট, চরগাজী গাছালীর মোর, ভেলুমিয়া বাজার, শরীফ খাঁ বাজার এবং ভেদুরিয়ার ব্যাংকের হাট, বউ বাজার, ভাওয়ালী কান্দা, বান্দের পাড়, হামিদ খাঁ ব্রীজ, টেকের হাট, চাঁন মাঝির বাগান, মোল্লা বাজার, শেরে-বাংলা, চর চটকিমারা, চর চন্দ্রমোহন ও মুনসীর চরের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে সরবরাহ হয় সব ধরনের মাদক পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করা হয়।
তথ্যসুত্রে আরো জানা যায়, ভেদুরিয়া ঘাট থেকে মাদক ব্যবসার ডিলার লাল মনির (৩০), সোহরাব (২৫) (বর্তমানে মাদক মামলায় জেলে আছে), কালু (২৫), ইঊনুছ (৩০) মিলন (৩০), ইউছুপ ফলপান (৩৫), মনির চকিদার (৩০) ছোটন (৩৫), কোষ্টগার্ডের সোর্স জিয়া (৩৫), ইব্রাহীম (৩০), ইব্রাহীম মহুরী (৩৫), শহিদুল মেম্বার (৪০) ও রফিক (৪৫) সহ ৩০ সদস্যর এই স্থানীয় চক্রটি স্থল পথে মাদক পাচার করে জেলার পাইকার ও খুচরা বিক্রেতাদের হাতে তুলে দেন। এদের অনেকেই মাদক মামলার চিহিৃত আসামী।
স্পিডবোট মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ মোসলেউদ্দিন পাটওয়ারী ঘটনার সত্যতা শিকার করে বলেন, অপরাধী যেই হউক তাকে আইনের আওতায় আনা জরুরী।


অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, ২০১৯ সালের ৫ জুন মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র কওে ইউপি সদস্য হাকিম মিঝিকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ২০১৬ সালের ২ নভেম্বর মাদক ব্যবসায়ী কর্তৃক স্কুল ছাত্রী শিশু নাবিলাকে ধর্ষন করে হত্যা করা হয়। ২০২১ সালের ২৯ অক্টোবর শুক্রবার ঐ চক্রের সংঘবদ্ধ চক্র ইয়াবা সংক্রান্ত একটি ভিডিওকে কেন্দ্র করে ৪ নং ওয়ার্ডের মোল্লা মসজিদের (চৌরাস্তার) সামনে থেকে স্পিডবোট ব্যবসায়ী সোহেল (৩০) কে দিনে দুপুরে অপহরণ করার চেষ্টাকালে স্থানীয়দের প্রতিরোধের মুখে পালিয়ে যায়। স্থানীয় মাসুদ মিস্ত্রী (৪২), মোতাহার হোসেন ব্যাপারী (৬৫), ইব্রাহীম চকিদার (৪৫), বিবি রহিমা (৫৫) ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। তারা বলছেন, আমরা স্থানীয়রা যদি সেদিন এই সন্ত্রাসীদের ধাওয়া না দিতাম তাহলে এখানে বড় ধরনের খুন খারাবি হওয়ার ঘটনা ঘটতো। ১০টা বছর হইছে এই এলাকায় নেশা ব্যবসায়ীদের আনা গোনা, এদের কারনে আমগো পোলাপাইনও আজ নেশা ধইরা নষ্ট হইতাছে।
স্থানীয় কামাল মেম্বার, ডাক্তার আলমগীর, ঘাট ইজারাদার মাইনুদ্দিন বলেন, যাতায়াত মাধ্যম নদী নির্ভর হওয়ায় এই নদীগুলোতে অবৈধ স্পিডবোটে সয়লাব হয়ে রয়েছে। স্পিডবোটে মাদক চালান করতে সুবিধা। এই চক্রের সাথে ৩০-৩৫ জনের একটি গ্রুপ রয়েছে। প্রশাসন ইচ্ছা করলেই এদের সায়েস্তা করতে পারে। আমরা এলাকায় বসবাস করতে হবে, এর চেয়ে বেশি কিছু বলা যাবেনা।


ভেদুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই মাষ্টার বলেন, জেলা শহর থেকে মাত্র সাড়ে ১০ কিলোমিটার দুরত্বের হলেও মাদকে সয়লাভ হয়েছে ইউনিয়নটির ৪০ বর্গ কিলোমিটার। প্রায় এক যুগ ধরে এই অবস্থা চলতে থাকলেও প্রশাসনের অভিযান চোখে পড়ার ছিলনা। সমাজের প্রভাবশালী অনেক ব্যক্তিবর্গ মাদক সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত থাকায় তাদের টিকিটি স্পর্শ করতে পারেনা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তিনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সদইচ্ছাকে দায়ি করে বলেন, এই অবস্থার পরিবর্তন খুব জরুরী।
চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম মাষ্টার বলেন, ঘটনা সত্য। আমিও কয়েকটি মাদক স্পট সহ অপরাধীদের তালিকা প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছেনা। এদের প্রভাবে আমার ইউনিয়নের বহু তরুণ-তরুণী নষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে।
জেলার মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আব্দুল আলিম বলেন, সামাজিক সচেতনতা ও সাংবাদিকদের সহযোগিতা ছাড়া সমাজ থেকে মাদক নির্মূল সম্ভব নয়। তাছাড়া সরকারের আরো কিছু সংস্থাও মাদক নির্মূলে কাজ করছে। সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।