সর্বশেষঃ

ত্রিশ বছর নদীতে জাল ফেলেও জেলে কার্ড পাইনি

ত্রিশ বছর ধরে নদীতে জাল ফেলেও আইজ পর্যন্ত কোন জেলে কার্ড পাইনি। চেয়ারম্যান-মেম্বাররা এক পয়সাও দেয়নি। সরকারের কোন সহযোগিতা পাই নাই। আমরা জেলে কার্ড না পাইলে কারা জেলে কার্ড পাইলো? আর কত বছর ধরে নদীতে জাল ফেললে আমরা জেলে কার্ড পামু? আক্ষেপ করে সাংবাদিকদের কাছে এমন প্রশ্নই ছুঁড়ে দিলেন ভোলা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের ভোলা খাল পাড়ের জেলে দুলাল। ষাটোর্ধ এ জেলের বাড়ি একই উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে। তিনি প্রতিদিন মাছ ধরার ইঞ্জিন চালিত নৌকা নিয়ে নদীতে মাছ শিকার করে ভোলার খালে আসেন। নদী থেকে যে মাছ পান সেগুলো এ মাছঘাটের আড়তদারদের কাছে বিক্রি করেন। কিন্তু এ বছর নদীতে আশানুরূপ মাছ না পাওয়ায় হতাশ জেলে দুলাল। তার সংসার চলছে কষ্টে। বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে সেই টাকা দিয়ে ঘরের বাজার করছেন। নদীতে পর্যাপ্ত মাছ না পেলে ঋণের টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হবে না বলেও জানান উপকূলের দরিদ্র এ জেলে দুলাল।

ভোলা খাল পাড়ের অপর জেলে মালেক (৫০) প্রায় ১৫ বছর ধরে নদীতে জাল ফেলেও এখনো জেলে কার্ড পাননি। তার বাড়িও সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে। জেলে মালেক জানান, তিনি ত্রিশ হাজার টাকা খরচ করে ৮ জন জেলেসহ মাছ ধরার ইঞ্জিন চালিত নৌকা নিয়ে নদীতে গিয়ে মাত্র পনেরো হাজার টাকার মাছ পেয়েছেন। মালেক বলেন, চেয়ারম্যান-মেম্বাররা কিছু দেয়নাই। আমি ১৫-১৬ বছর ধরে নদীতে জাল বাই। কিন্তু আইজ পর্যন্ত সরকারের এক টাকার মালও পাইনাই। জেলে মালেক আরও বলেন, নদীতে যাইয়া যেই টাকা কামাই করছি হের চেয়ে বেশী দেনা করছি। নদীতে মাছ না পাওয়ায় বিভিন্ন এনজিও থেকে হাজার হাজার টাকা ঋণ নিয়ে এখন প্রায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন হতদরিদ্র উপকূলের এ জেলে মালেক।
ভোলার খালে একরকম অলস সময় কাটানো জেলে আমির হোসেন, রুবেল, বিল্লাল, মালেক, দুলালসহ অন্ততঃ ৬-৭ জন জেলের কেউই জেলে কার্ড পাননি। তাদের সবার বাড়ি ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে। তারা জানান, ভেদুরিয়া ইউনিয়নের প্রায় সহস্রাধিক প্রকৃত জেলে কোন জেলে কার্ড পাননি। পাননি সরকারি কোন সাহায্য সহযোগিতা। অথচ নদীতে মাছ শিকার করেননা, এমন লোককে জেলে কার্ড দিয়ে সরকারি খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন সাধারণ জেলেরা।
এ বিষয়ে ভোলা জেলা মৎস্যজীবী জেলে সমিতির সভাপতি মো. এরশাদ ফরাজি বলেন, বিভিন্ন কারনে ভোলায় প্রায় ১৫ হাজার জেলে কার্ড পায়নি। তবে, এটা চলমান রয়েছে। পরবর্তী সময়ে তাদেরকে কার্ডের আওতায় আনা হবে।
এ ব্যাপারে ভেদুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ তাজুল ইসলাম জানান, তার ইউনিয়নে ১৯০০ জেলে কার্ডের মধ্যে এবার ১৩০২ জন জেলে কার্ডের চাল দেওয়া হয়েছে। এর বাইরেও প্রায় দুই শতাধিক প্রকৃত জেলে জেলে কার্ড পাননি। তবে, দেড় হাজার নতুন জেলের তালিকা গত ছয় মাস আগে ভোলা সদর উপজেলা মৎস্য অফিসে জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো তাদের জেলে কার্ড হয়নি।
এ বিষয়ে ভোলা সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ জামাল হোসাইন মঙ্গলবার দুপুরে  ভোলার বাণীকে বলেন, আমি এখন ছুটিতে আছি। যে সব জেলেদের তালিকা অফিসে জমা আছে সে সব তালিকার বিষয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।