সর্বশেষঃ

মামলা তুলে নিতে বাদীনিকে হুমকি দিচ্ছে আসামীরা

ভোলায় এনজিওকর্মী ইয়াসমিন হত্যা মামলা নিয়ে তালবাহানার অভিযোগ

(ইয়াসমিন হত্যা মামলার প্রধান আসামী কামরুলের ফাঁসির দাবীতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন। (ইনসেটে কামরুল)

ভোলা জেলার দৌতলখান উপজেলার উত্তর জয়নগর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের (নতুন মসজিদ) এলাকায় সুন্দরবন নামের একটি এনজিও’র মাঠকর্মী হত্যা মামলা নিয়ে তালবাহানার অভিযোগ উঠেছে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাংলাবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে। এদিকে ঘটনার পর থেকে আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরলেও গ্রেফতার করছে না পুলিশ বরং মামলা তুলে নিতে বাদীনিকে প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে আসামীরা।
মামলার বাদীনি মৃত ইয়াসমিন এর বড় বোন জান্নাত বেগম ও তার স্বজনরা জানান, ভোলার লালমোহন উপজেলার ফরাশগঞ্জ ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের খোরশেদ আলম এর মেয়ে ইয়াসমিন এর সাথে ভোলা সদর উপজেলার উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের (নতুন মসজিদ) এলাকার জাহাঙ্গীর আলম এর সাথে ১০ বছর পূর্বে ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক বিবাহ সম্পন্ন হয়। ইয়াসমিন-জাহাঙ্গীর এর দাম্পত্য জীবনে মুন (৮) নামের এক কন্যা সন্তান নিয়ে ভালোই কেটেছিল তাদের সংসার। হঠাৎ এই সুখের সংসারে কাল হয়ে দাঁড়ায় ইয়াসমিনের স্বামী জাহাঙ্গীরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু দৌতলখান উপজেলার উত্তর জয়নগর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুন্দর বন মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড এর মালিক কামরুল।

ফলোআপ

ইয়াসমিনকে বিভিন্ন লোভনীয় অফার দিয়ে কামরুলের মালিকানাধীন এনজিওতে চাকরি দেয়। এরপর আবার ইয়াসমিনের স্বামী জাহাঙ্গীরকে নানানভাবে চক্রান্ত করে স্বামীর সংসার থেকে ইয়াসমিনকে বিচ্ছেদ করান। দাম্পত্য বিচ্ছেদ এর পর এনজিও কর্মী ইয়াসমিনকে বিয়ের প্রস্তাব দেন কামরুল। বিয়ের আশ্বাস দিয়ে ফরাদ মোল্লা নামের এক মালিকের বাসায় বাড়ী ভাড়া নিয়ে স্বামী স্ত্রী’র ন্যায় মেলামেশা করেন ইয়াসমিন ও এনজিও’র মালিক কামরুল। তাদের এমন আচরণ এলাকাবাসীর দৃষ্টিতে পরে। ইয়াসমিন ও কামরুলের অবৈধ সম্পর্ক হাতে-নাতে আজ থেকে দেড় মাস পূর্বে আটক করেন স্থানীয়রা।
আটকের পর কামরুলকে বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করলে কামরুল বিয়ে করবো বলে আশ্বাস দিয়ে এলাকার কিছু নেতাদের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে কামরুল ও তার ভাই বোন ভাগিনা মিলে রুমের দরজা আটকিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে গলায় রশি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখেন। এই ঘটনায় জানাজানি হলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করেন। এই ঘটনায় নিহতের বোন জান্নাত বেগম বাদী হয়ে কামরুলকে প্রধান আসামী করে ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
বাদীনি আরো অভিযোগ করে বলেন, মামলার পর থেকে আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরছে, পুলিশ তাদের আটক করছে না। শুনেছি তারা নাকি হাইকোর্ট থেকে জামিন এনেছেন। কিন্তু তারা সেই জামিনের কোন কপি আজ পর্যন্ত দেখাতে পারেনি। বরং আসামীরা আমাদের প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে মামলা তুলে নিতে। অপরদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাংলাবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ গোলাম মোস্তফা এ পর্যন্ত আমাদের থেকে তিনবারে ১৮ হাজার টাকা নিয়েছে। এখন তিনি আমাদের কথায় কোন পাত্তা দিচ্ছে না বরং আমরা তার কাছে মামলার কপি আনতে গেলে আরো টাকা দাবী করে। আর টাকা না দিলে ফাঁড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে। আমরা তাকে বিশ্বাস করেছি, তিনি আমাদের বলেছেন আমার পুলিশের পোশাকের কসম; এই মামলার সঠিক তদন্ত করে কোন অপরাধীকে ছাড় দিবো না। কিন্তু তিনি সে কথা রাখলেন না।
বাংলাবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ গোলাম মোস্তফার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ভোলার বাণীকে বলেন, মামলা চলমান আছে এবং আসামিরা জামিনে রয়েছে। বাদীপক্ষের সাথে আমার যোগাযোগ আছে। তারা যা বলছেন তা মিথ্যা বরং আমি তাদের যে সাহায্য করেছি তা বিরল।
এ ব্যাপারে দৌলতখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বজলার রহমান এর সাথে কথা বললে তিনি ভোলার বাণীকে জানান, ওই ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচণায় ৩০৬ ধারায় মামলা হয়েছে। আসামিরা হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছে। মামলার তদন্ত চলমান আছে। বাদীপক্ষের দাবির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আসামি কর্তৃক বাদীপক্ষ কে হুমকির বিষয়টি আমার জানা নাই অভিযোগ করলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।