জেলে হারেজ এখন কৃষক

এখন চলছে বর্ষা মৌসুম। বর্ষা মৌসুমই হচ্ছে ইলিশের ভরা মৌসুম। অথচ উপকূলীয় জেলা ও ইলিশের অভয়াশ্রম নামে খ্যাত ভোলার মেঘনা ও তেতুঁলিয়া নদীতে এখনো ইলিশের দেখা মেলেনি। জেলার জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না কাঙ্খিত রুপালী ইলিশ। ফলে হতাশার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে ভোলার জেলেরা। তাই বাধ্য হয়ে জেলে পেশা ছেড়ে দিয়ে এখন কৃষকের পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন ভোলা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের জেলে মোঃ হারেজ। তার সাথে কথা হয় গতকাল রোববার ভোলা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেঘনার পাড়ে। তার বাবার নাম জয়নাল আবদীন।

প্রায় ৬৩ বছর বয়স্ক হারেজ বলেন, আষাঢ়-শ্রাবন দুই মাস পুরো বর্ষা মৌসুম। আর প্রতি বছর এ মৌসুমই ইলিশের ভরা মৌসুম। অথচ ইলিশের এ ভরা মৌসুমে ভোলার নদ-নদীতে ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে না। টানা ৬৫ দিনের অভিযান শেষে ইলিশ শিকারের আশায় জেলেরা প্রতিদিন দল বেঁধে ভোলার মেঘনা ও তেতুঁলিয়া নদীতে জাল ফেললেও মিলছে না কাঙ্খিত রুপালী ইলিশ। ২-৪ টা পেলেও তা দিয়ে ট্রলারের তেলের খরচ উঠে না। তাই, আমি জেলে পেশা ছেড়ে দিয়ে এখন কৃষি কাজ করছি।

হারেজ জানান, তিনি প্রায় ৬ মাস আগে গত ফাল্গুন মাসে এক কানি (২০ গন্ডা) জমিতে ১৫ হাজার টাকা খরচ করে আউশ ধান রোপন করেছিলেন। কিন্তু তখন তীব্র গরমের কারণে সেই আউশ ধানেও লোকসান গুনতে হয়েছে। তবুও থেমে যাননি জেলে পেশা থেকে কৃষকের পেশায় আশা অদম্য হতদরিদ্র হারেজ। তিনি এখন আবার আমন ধান রোপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। হারেজ বলেন, ২ কানি (৪০ গন্ডা) জমিতে এখন তিনি আমন ধান রোপন করবেন। ভোলার নদীতে মাছ ধরা না পরায় গ্রামে সুদের ওপরে ঋণ নিয়ে ধারদেনা করে জেলে থেকে এখন কৃষি কাজে মনোনিবেশ করেছেন হারেজ।
ভরা মৌসুমেও নদীতে মাছ ধরা না পড়ায় হারেজের মতো অনেক জেলেই এখন জেলে পেশা বদলে অন্য পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। অনেক জেলে নদীতে যাওয়া একরকম বন্ধ করে দিয়েছেন। কারণ হিসাবে জেলেরা বলছেন, মাছ না পেলে নদীতে গিয়ে কোন লাভ নেই। বরং ক্ষতি। তেলের খরচ বাড়ে। এরপর নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ড সদস্যদের ঝামেলা তো রয়েছেই।
অন্যদিকে, প্রতিদিনই মহাজন ও তেলের দোকানের দেনা পরিশোধের চাপে বিপাকে পড়তে হচ্ছে জেলেদের।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবি জেলে সমিতির ভোলা জেলা শাখার সভাপতি মোঃ এরশাদ বলেন, এখন ইলিশের ভরা মৌসুম। সে অনুযায়ী নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মাছ পড়ার কথা। কিন্তু, ভোলার নদীতে এখনো কাঙ্খিত রুপালী ইলিশ ধরা পড়ছে না। তাই, বাধ্য হয়ে অনেক জেলেই তাদের পেশা বদল করেছে। তিনি আরও বলেন, ভোলায় দুই লক্ষাধিক জেলে নদীতে মাছ শিকার করছেন। এর মধ্যে নিবন্ধিত জেলে রয়েছে এক লাখ ৩২ হাজার। এমুহূর্তে নদীতে মাছ না পড়ায় জেলায় প্রায় ২০ হাজার জেলে পেশা ছেড়ে দিয়েছে। এদের মধ্যে অনেকে কৃষি কাজসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থাকলেও বহু জেলে অন্য কোন কাজ না করতে পেরে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
ভোলার নদীতে ভরা মৌসুমেও কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মাছ ধরা না পড়ায় জেলেদের মতো হতাশ ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, নদীতে এই মুহূর্তে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ার কথা থাকলেও জেলেদের জালে এখনো তেমন ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে না। তাই, আমরাও চিন্তিত। তিনি আরও বলেন, এখন সাগরে ইলিশ ধরা পড়ছে। অথচ নদীতে ইলিশ মাছ এখনো ধরা পড়ছে না। কিছুদিন আগে কিছু ইলিশ নদীতে ধরা পড়লেও এখন আবার কম পড়ছে। তবে, আশা করা হচ্ছে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই জেলেদের জালে কাঙ্খিত রুপালী ইলিশ ধরা পড়বে। তখন জেলেদের দুঃখ দূর হবে বলে মনে করেন এ মৎস্য কর্মকর্তা।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।