সংসদে, রাজনীতিবিদ বনাম আমলা সচীব বিতর্ক, সাধারনের ভাবনা

গত কয়েকদিন যাবত পত্র পত্রিকা এবং বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে জাতীয় সংসদে দেওয়া প্রবিন নেতা, বঙ্গঁবন্ধুর রাজনৈতিক উপদেষ্টা আওয়ামী লীগের প্রথম কাতারের বিদগ্ধ নেতা তোফায়েল আহমেদের ও তাকে সমর্থন করে জাতীয় পার্টির কাজি ফিরোজ রশিদ ও আরও দুজনের দেওয়া একটা বক্তব্য এবং পরবর্তিতে আওয়ামী লীগেরই প্রতিমন্ত্রী সাংসদ খালেদ মাহামুদ চৌধুরী তাদের বক্তব্যের বিরোধিতা করে আমলাদের দায়িত্ব দেওয়াকে সরকারের যুগান্তকারি সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করাতে ব্যাপারটি বেশ জটিল বলে আমা নিকট প্রতিয়মান হয়েছে। তাই এ প্রসঙ্গে আমার একটি মতামত তুলে ধরার ইচ্ছা আমার মধ্যে গত দুদিন ধরে কাজ করেছে।
১। তোফায়েল আহমেদের মত বড় মাপের একজন বিশেষঙ্গ রাজনিতিবিদ সংসদে যখন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেওয়া কোন বিষয়ে কথা বলেন তখন সেটা একটা ভাবনার বিষয় বলে আমার মনেহয়, এবং এই বক্তব্যের সমর্থনে, বসুন্ধরার মালিকানাধিন পত্রিকায় কলামিষ্ট পীর হাবিবুর রহমান যখন বিশাল করে হেডিং দিয়ে অবশেষে তোফায়েল ফিরোজরা মুখ খুলেছেন শিরোনামে পাতাজুডে কলাম লিখেন, পীর হাবিবের ভাষায় রাজনীতিহীন অস্থির অশান্ত মূল্যবোধহীন নষ্ট সমাজের নানান কর্মকান্ডের এই সময়ে অবশেষে সংসদে মুখ খুলেছেন অন্তহীন বেদনা নিয়ে জীবনের পড়ন্ত বেলায় বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী প্রবীন জননেতা ও পার্লামেন্টারিয়ান, ৬৯ এর গনঅভ্যুত্থানের মহানায়ক তোফায়েল আহমেদ ও তার সঙ্গে দীর্ঘদিন বঙ্গবন্ধুর আদর্র্শের রাজনীতিতে পথহাঁটা দু:সাহসী বীর মুক্তিযাদ্ধা ও জাতীয় পার্টির এমপি কাজি ফিরোজ রশিদও একহাত নিতে ছাড়েননি। অভিন্ন সুরে কথা বলেছেন জাসদের হাসানুল হক ইনু ও জাতীয় পার্টির ডা: রুস্তুম আলী ফরাজীও, রাজনীতিবিদদের মানসম্মান ইজ্জত রক্ষায়। এর পেছনে শুধু সচীবদের জেলায় দায়িত্ব দেয়া নয় আরও অনেক মর্মজ্বালা লুকিয়ে আছে।
২। এই বক্তব্যবের বিপরিতে যখন প্রজন্মের সাহসী লডাকু ও ত্যাগি নেতা সরকারের মন্ত্রী ও সাংসদ খালিদ মাহামুদ বক্তব্য দেন তখন ভাবতেহবে যে সরকারের উচ্চ পর্যয়ের ইশারা ব্যাতিত তিনি এ রকম বক্তব্য তোফায়েল আহমেদের বিপরিতে দেননাই। নিশ্চই প্রধানমন্ত্রী তাদের অন্তরজ্বালা অনুধাবন করে খালিদ মাহমুদের মাধ্যমে এক্টা সতর্ক বার্তা দিলেন বলে আমার অনুমান। এখন আসুন আমরা বিশ্লেষণ করে দেখি কেন প্রধানমন্ত্রী রাজনীতিবিদদের রেখে আমলাদের দায়িত্ব দিলেন।
বঙ্গবন্ধুর সাথে যাদের রাজনীতি করার চলার সৌভাগ্য হয়েছে, যারা প্রজন্মকে দেশপ্রেমের আদর্শের শিক্ষা দেবার যোগ্য ছিলেন তারা স্বাধীনতার পর নিজেদের আদর্শকেই বিসর্জন দিলেন। তারা নিজেদের রাজা মহারাজা বলে মনে করতে থাকলেন, রাজনৈতিক আদর্শহীন একদল চামচা এবং মাস্তানদের মাধ্যমে নিজেদের আজীবন ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার চেষ্টায় সত্যিকারের আদর্ষবান ত্যাগি রাজনৈতিক নেতা কর্মিদের দলে কোণঠাসা করে ফেললেন। ফলশ্রুতিতে স্বাধীনতা বিরোধীরা পাক মার্কিন মদদে দেশে অরাজকতার শৃষ্ঠি করতে সক্ষ্যম হলো।
অধিকাংশ খেত্রে দলের আদর্শবান নেতা কর্মীরাই শাশ্তিভোগ করলেন। সিরাজ সিকদার ও সিরাজুল আলম খানের নকশাল ও জাসদের নামে নীজ দলীয় কর্মিদের জেলে ভরা হলো। তরান্বিত হলো বঙ্গবন্ধু, তার পরিবার এবং দেশপ্রেমিক জাতীয় চার নেতার মৃত্যু। ১৯৭৫এর পরে দলের নেতারা যখন কেউ জেলে কেউ আত্মগোপনে তখন স্থানীয় পর্যায়ের নেতা কর্মীরা এবং কেন্দ্রিয় দ্বিতীয় সারির নেতাদের নির্দেশনায় দল এগিয়ে চললো সকল অত্যাচার নিপিডন সহ্যকরে।
তারপর দীর্ঘপথ পরিক্রমায় ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার দুরদর্ষি নেত্রীত্বে যখন দল আবার ক্ষমতায় এলে , আবারও সেই একই পথ অনুসরন করলেন নেতারা। এবার আরো একধাপ এগিয়ে অযোগ্য অপদার্থ আত্বীয়দের এবং তাদের বাধ্যগত দলছুট কাউয়াদের দলের স্থানীয় নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত করা হলো।এদের পরামর্শ ও পরিচালনায় এলাকার সবকিছু পরিচালিত হয়। লুটপাটের সীমাহীন অর্থবিত্ত তাদের দুর্বিনীত বেপোরোয়া করে তুলেছে। এমন কোন অপকর্ম নেই যা এরা করেনাই।
স্থানীয় প্রশাসন তাদের ভয়ে দিশেহারা। এটা কি রাজনীতিবিদদের কাছ জনগন যাদের ভোটে ওনারা নির্বাচিত হোন, তাদের প্রাপ্য ? এমন অনেক মানুষ আছেন যারা পদ পদবীর, অর্থ বিত্ত কোন কিছুর প্রত্যাশা না করেই এই দলকে ভাল বেসে তাদের সবকিছু দিয়ে কাজ করেছেন, তাদের প্রত্যাশা ছিল তাদের প্রতিনিধি দেশের এবং জনতার প্রতিনিধিত্ব করবে, তাকি তারা করেছেন? একেকজন জনপ্রতিনিধি যেন একেক জন লর্ড ক্লাইভ।
এ পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা যিনি জাতীর জনকের কন্যা, দেশের জন্য যিনি বাবা মা ভাই বোন হারিয়েছেন, প্রবাসে দৈন্য দসায় মানুষের অনুগ্রহে জীবন যাপন করেছেন তাকেতো মানুষের কল্যাণে বিরুপ সিদ্ধান্ত নিতেই হবে শেষ চেষ্টা হিসেবে। যেমন নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু বাকশাল প্রতিষ্ঠাকরে। যদি তিনি সাফল্য অর্জনের সময় সুযোগ পেতেন তাহলে দেশ আজ অন্য মাত্রার অবস্থানে থাকতো। আজ জাতীর মহানায়কের বিকল্প দার করাবার অপচেষ্টাকারি তাকতো না, অনেক আগেই আমরা উন্নত বিশ্বে মাথা উচুকরে দাঁড়াতে পারতাম। শেখ হাসিনাও সময় সুযোগ পেলে সাফল্য পাবেন বিশ্বাস করি। যদি তা পান ইতিহাস তাকে স্বরণীয় বরনীয় করে রাখবে।

লেখক : মাহবুবুল আলম নীরব মোল্লা
মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।