ভোলাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জন্য সম্বনিত উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রসঙ্গে

সারাদেশের মধ্যে দেশের দক্ষিণাঞ্চল বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকা সবচেয়ে পচ্ছাদ পদ এলাকা হিসাবে চিহ্নিত। অথচ দেশে আমদানি রপ্তানী বাণিজ্য এই উপকূলীয় এলাকা দিয়েই সঞ্চালিত হয়ে থাকে। এছাড়া দেশের খাদ্য ও মৎস্য উৎপাদরে এক বৃহৎ অংশ এই দক্ষিণাঞ্চল থেকে যোগান দিয়ে থাক। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন এর বিরুপ প্রভাব এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের জনগণ। দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে ঘিরে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা সত্বেও সম্বনিত উন্নয়ন পরিকল্পনা না থাকার কারনে নতুন কোন সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছেনা। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় উন্নয়ন এর কোন বৃহৎ পরিকল্পনা না থাকা বা অবকাঠামোগত উন্নয়ন সহ যোগাযোগ ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে দক্ষিণাঞ্চলের ১৯ জেলার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়তেছেনা। অন্যান্য এলাকার সাথে বৈষম্যের ব্যবধান ও দারিদ্র কমানো যাচ্ছে না। অথচ এই অঞ্চলের বিস্তৃত উর্বর জমি, উপকূলীয় ম্যানগ্রোব বাগান, প্রাকৃতিক গ্যাস, ইকোট্যুরিজম সহ অন্যান্য সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে, সর্ব প্রথম মানব সম্পদ উন্নয়নে উচ্চতর কারিগরি শিক্ষার দিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিক নজর প্রদান করতে হবে। পল্লী অঞ্চলে জনসাধারনের জীবনমান উন্নয়নের জন্য পল্লী অঞ্চলে সেবার প্রসার ঘটতে হবে। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের জেলা সদর ও উপজেলা সদরের সুপরিকল্পিত দীর্ঘ মেয়াদী ভিত্তিতে পরিকল্পিত নগরায়ন এর পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। এছাড়া বর্তমান পৌরসভাগুলির ক্ষেত্রে সুশাসন এর উন্নয়ন ঘটাতে হব্ েভয়ঙ্কর ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসের কারণে বাংলাদেশের দক্ষিণের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রতিবছর ব্যাপক প্রাণহাণী ঘটে, এছাড়া ঘর-বাড়ী, ভূমি, ফসল জানমালের ক্ষতি হয় ব্যাপক ভাবে। এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দক্ষিণাঞ্চলের জন্য দুর্যোগ্য প্রতিরোধ এর জন্য একটি টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার। দক্ষিণাঞ্চলের বিচ্ছিন্ন চর এলাকাগুলিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রতি অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে। আমরা জানি ২৬ ফেব্রুয়ারি-২০১৩ দেশের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ এক সভায় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন, পরিবেশ নিরাপত্তা এবং সামাজিক ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে প্রথম বারের মতো ১০ বছর মেয়াদী জাতীয় টেকসই উন্নয়ন কৌশলগত ঘঝউঝ নামের একটি উন্নয়ন দলিল অনুমোদন প্রদান করে। এই উন্নয়নের কৌশল পত্রের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১০-২০২১ ইং সাল পর্যন্ত। দেশের উন্নয়ন যাতে স্থীতিশীল হয় সেজন্য এই কৌশলপত্রটি একটি রোড ম্যাপ হিসাবে ধরা যায়। কৌশলপত্রের মূল লক্ষ্য টেকসই উন্নয়ন। এজন্য দেশের একটি বৃহৎ এলাকা বা অংশ দক্ষিণ এর উপকূলীয় এলাকার জন্য সকল প্রকার সুসম উন্নয়নের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা দরকার এর মেয়াদ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এর জন্যে উপকূলীয় দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম প্রদান চ্যালেঞ্জ হলো কৃষিকে সামুদ্রিক অতি জোয়ার এর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য উপকূলে টেকসই বেড়ীবাধ নির্মাণ করা। যা বন্যা ও জলোচ্ছাস থেকে উপকূলীয় এলাকার জানমাল ও প্রাকৃতিক সম্পদ ফসলকে রক্ষা করবে।
এছাড়া উদাহরন হিসাবে বলতে পারি, পকিস্তান আমলে ক্রগ মিশন এর রির্পোট এর বিত্তিতে উপকূলীয় এলাকা প্রথম সিডেক বেড়ীবাধ এর উদ্ধোধন করা হয়েছিল। সেই সিডেক বেড়ীবাধ নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকার নদী তীর ঘেষে হওয়ায় নদীর ভাঙ্গন প্রতিরোধ করার জন্য তীর সংরক্ষণ প্রকল্প না থাকার কারণে নির্মিত অধিকাংশ সিডেক বেড়ী নদীতে ভেঙ্গে যায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করেই প্রথমে ১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ দ্বীপজেলা ভোলাতে আসেন ১৯৭০ এর প্রলংকারী ঘূনিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে রক্ষা করার নিমিত্তে ১৬ফুট হাইট ৫৬ ফুট স্লোভ এর সিডেক বেড়ীবাধ নির্মান পুনরায় কাজ উদ্ধোধন করেন। কিন্তু বর্তমানে যে হাইটে বেড়ীবাধ নির্মাণ হচ্ছে যা মোটেই নয়। পরিকল্পিতভাবে নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্প যথাযথ ভাবে বাস্তবায়ন করার পরে ভোলা জেলা সদরের রাজপুর, ইলিশা হয়ে চরফ্যাশন এর কচ্চপিয়া পর্যন্ত সার্কুলার সিডেক বেড়ীবাধ নির্মাণ করে সি,সি ব্লক এর মাধ্যমে স্লোব প্রটেকশনের মাধ্যমে দৃষ্টি নন্দন বেড়ীর উপর মেরিন ড্রাইভ প্রসস্ত সড়ক নির্মাণ করার যায়, তাহলে উপকূল শুধু রক্ষাই পাবে না, এই বেড়ীবাধ কেন্দ্রিক মেরীন ড্রাইভ একটি আকর্শনীয় একটি টুরিস্ট স্পটে পরিনত হতে পারে। জলবায়ু বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পাবে এই ভোলা জেলা। কৃষিতে নোনা পানি প্রটেক করতে পারলে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এর সাথে নদী তীর সংরক্ষণ পকল্প যথাযথ সম্পূর্ন করতে পারলে নদী ভাঙ্গন রোধ হলে, নদী সিকস্তি ভূমিহীন মানুষ এর সংখ্যাও কমে যাবে। গড়ে উঠবে নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থা, নতুন জনপদ। উপকূলীয় এলাকার টেকসই উন্নয়ন কৌশল পত্রে চারটি খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ শুরু করা যায়।
প্রথমত ঃ টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন এর জন্য নদী তীরবর্তী বিপুল সমতল ভূমিতে শিল্প কারখান গড়ে তোলা। তাতে নদী কেন্দ্রিক যোগাযাগ ও বেড়ীবাধ কেন্দ্রিক সড়ক যোগাযোগ সহজ হবে।
দ্বিতীয়ত ঃ কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ন কাঠামোর জন্য সমন্ধিত পরিকল্পনা গ্রহণ।
তৃতীয়ত ঃ সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
চতুর্থত ঃ পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা গ্রহণ করা।
পঞ্চমমত ঃ জলবায়ু পরিবর্তন জনিত সংকট মোকাবেলায় বিভন্ন টেকসই ডিজাইন প্রবর্তন।
৬ষ্ঠত ঃ স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয় সরকারে সুশাসন, মানব সম্পদ উন্নয়ন এর জন্য কারিগরি শিক্ষা, স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য পচ্চাদপথ মূল ভূখন্ড এর সাথে বিচ্ছিন্ন যোগযোগ কারনে আধুনিক হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ স্থাপন এর পরিকল্পনা গ্রহণ।
চ্যালেঞ্জ সমূহ হলো এই উপকূলীয় বিশাল জনগোষ্ঠির জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ, বস্ত্র, নুন্যতম আশ্রয়, উৎপাদনশীল বিনিয়োগ, গুনগত কর্মসংস্থান ভিত্তিক কারিগরি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও উপযোগী সেবা, পর্যাপ্ত সামাজিক নিরাপত্তা এবং পরিবেশ রক্ষার নিশ্চয়তা বিধান করা হলো বৃহত্তম চ্যালেঞ্জ।

লেখক : ফজলুল কাদের মজনু
সভাপতি
ভোলা জেলা আওয়ামীলীগ।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।