সর্বশেষঃ

অবশেষে চরফ্যাশনের আলোচিত প্রতারক দিপু গ্রেফতার

ভোলার বাণী ডেস্ক ॥ প্রতারণা দায়ে গ্রেফতার আশরাফুল আলম দিপুকে নিয়ে এখন আলোচনা-সমালোচনা চলছে পুরো এলাকায়। দিপু মাঝে মধ্যে এলাকা এসে রাজকীয়ভাবে চলাফেরা করতো। খুব অল্প সময়েই কোটিপতি বনে যান এই প্রতারক দিপু। ঘর থেকে বের হলেই মাইক্রোবাস নিয়ে ঘোরাফেরা করতো। মানুষকে বোঝাতো সে উচ্চপদে চাকরি করে। এমন কৌশলেই সে প্রতারণা করে আসছিলো।
দিপুর বাড়ি চরফ্যাশন উপজেলার নজরুল নগর ইউনিয়নের বাবুরহাট এলাকায়। তার বাবা আব্দুল জলিল। পেশায় ছাগল পালক। চার ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সবার ছোট দিপু। পড়াশুনা করেছেন অস্টম শ্রেণি পর্যন্ত। এরপরে চলে যান ঢাকায় শুরু করেন প্রতারণা। সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন জেলা ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়াই ছিলো তার নেশা।
চরফ্যাশন দক্ষিণ আইচা এলাকার ফারুক দিপুর প্রতারণা ফাঁদে পড়েছেন। তিনি বলেন, তার ছেলেকে ঢাকার একটি নামকরা স্কুলে ভর্তি করানোর কথা বলে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় দিপু। পরবর্তীতে তার প্রতারণা বুঝতে পেরে টাকা ফেরত চাইতে গেলে গড়িমসি শুরু করেন দিপু।
নজরুল নগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, দিপু যখন এলাকায় আসতো তখন ভিআইপি ব্যক্তিদের মত চলাফেরা করতো। তার এমন রাজকীয় চলাফেরায় অনেকেই হতবাক হয়ে যেতেন। এলাকায় প্রতরণা করে বহু টাকা আত্মসাৎ করেছে দিপু। বাবুরহাট বাজারেও তার কাছে অনেকে টাকা পায়।
দক্ষিণ আইচা থানা যুবলীগের আহ্বায়ক বাবুল হাওলাদার জানান, দরিদ্র পরিবারের সন্তান দিপুর চলাফেরা রাজকীয় কায়দার। ক্লাস সিক্সে পড়া অবস্থায় সে প্রতারণা শুরু করে। এরপর দিপু নিজেকে কখনো এনএসআই কর্মকর্তা, কখনো গোয়েন্দার শীর্ষ কর্মকর্তা পরিচয় দিতো। ভোলার বিভিন্ন উপজেলায় চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রতারণা করে আসছিলো।

দক্ষিণ আইচা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশিদ জানান, দক্ষিণ আইচা থানায় তার বিরুদ্ধে একটি প্রতারণা ও একটি মাদকের মামলা ছিলো। মাদক মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছিলো। পরে জামিনে বের হয় সে। পরবর্তীতে ওই মামলা খারিজ হয়। অন্যদিকে যাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছিলো তাদের টাকা ফেরত দিয়ে মামলা থেকে রক্ষা পায় দিপু। তবে এলাকায় তাকে কোন পুলিশ প্রটোকল দেওয়া হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশরাফুল আলম দিপু এলাকায় প্রভাবশারীদের সঙ্গে চলাফেরা ছিলো। নিজস্ব ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলে নামি-দামি ব্যক্তিদের সঙ্গে তোলা ছবি ও ভিডিও আপলোড করতো সে। নিজেকে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিতো। সে শীর্ষ কর্মকর্তাদের পরিচয় ব্যবহার করে সিল ব্যবহার করতো। এছাড়াও করোনার সময় এলাকায় এসে বেশ কিছু ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছে সে। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নেওয়া ওইসব মালামালের টাকা না দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। বাবুরহাট বাজার এলাকায় একাধিক ব্যবসায়ী তার কাছে টাকা পেলেও সেই টাকা ফেরত দেয়নি দিপু।
ভোলার পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, চাকরি দেওয়ার নাম করে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে বলে জানতে পেরেছি। বিষয়টা জানতে পেরে পুলিশকে নির্দেশনা দিয়েছি, তার বিরুদ্ধে যদি কেউ প্রতারণা মামলা করতে চায় তাহলে তা গ্রহণ করতে। তিনি আরো বলেন, ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে দিপু বিভিন্ন এলাকায় প্রতারণা করতো, এমন খবর জানতে পেরে তার বিরুদ্ধে গোয়েন্দা বিভাগ থেকে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছিলো। তদন্ত করে তাদের রিপোর্ট দিয়েছি, ওইসব রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই তাকে গ্রেফতার করা হয়।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।