‘ব্লাক বেবি তরমুজ’ চাষে ভোলায় কৃষকদের সফলতা

ভোলাতে এ বছর ব্লাক বেবি জাতের তরমুজ চাষে সফলতা পেয়েছেন কৃষকরা। কৃষকদের বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেতে এখন বেবি তরমুজের সমারোহ। একদিকে যেমন ফলন ভালো হওয়ায় খুশি তারা; অন্যদিকে বাজার দামও সন্তোষজনক। উন্নত জাতের এই তরমুজ চাষে কৃষককের আগ্রহ অনেক বেড়ে গেছে।
কৃষকরা জানান, দেশীয় জাতের তরমুজ বা অন্য ফসলের তেমন একটা লাভের মুখ দেখছিলেন না তারা। তাই ভাগ্য বদলাতে এবারই প্রথম অসময়ের ফসল বেবি তরমুজ চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছেন তারা। উন্নত কৃষি-প্রযুক্তি ব্যবহার করে যেমন ফলন ভালো হচ্ছেন, তেমনি বাজার দামও অনেক ভালো হয়েছে। তাই ব্লাক বেবি জাতের তরমুজ চাষে ফের আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন জেলার কৃষকরা। দিন দিন বাড়ছে এর আবাদ।


কৃষক শাহাজল বলেন, এ বছর প্রথম বারের মত ২৮ শতাংশ জমিতে বেবি তরমুজ চাষ করেছি, ফলন অনেক ভলো। আগামীতে আরও বেশি জমিতে এ তরমুজের চাষ করবো। কৃষক চান মিয়া জানান, গত বছর তরমুজ চাষে একজন কৃষক লাভবান হয়েছেন দেখেতে পেয়ে এ বছর বেবি তরমুজের চাষ করেছি। এই প্রথম বারের মত তরমুজ আবাদ করেই সফলতার মুখ দেখতে পেয়েছি। ক্ষেতে কোন পোকার আক্রমণ নেই। আবহাওয়া অনেক ভালো, তাই ফলন ভালো হয়েছে। ২০ শতাংশ জমিতে বেবি তরমুজের আবাদ করেছেন মিথিল চৌধুরী। তিনি বলেন, বেবি তরমুজের নাম আগেও শুনেছি, এরপর এই তরমুজ চাষে আগ্রহ বেড়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, গতবছর ভোলায় প্রথম বারের মতো বেবি তরমুজ চাষ করে সফলতা পায় সৌরভ হাওলাদার নামে এক যুবক। কম খরচে বেশি ফলন ও বাজারে চাহিদা থাকায় বেবি তরমুজ চাষে অন্যরাও আগ্রহী হতে শুরু করে। কৃষকদের আগ্রহের কথা বিবেচনা করে চলতি বছর পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের পেইজ প্রকল্পের আওতায় গ্রামীণ জন উন্নয়ণ সংস্থার সহযোগিতায় ভোলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় ৬০ জন কৃষককে বেবি তরমুজের প্রয়োজনীয় বীজ, প্রশিক্ষণ সহ নানা উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা করা হয়। সহযোগিতা পেয়ে কৃষকরা বেবি তরমুজ চাষ শুরু করে। বীজ রোপণের মাত্র এক মাসের মধ্যেই ফলন আসে বলে জানান কৃষকরা। এদিকে গত বছর চার শতাংশ জমিতে তরমুজের চাষ হলেও এ বছর জেলায় আড়াই হেক্টর জমিতে ব্লাক বেবি তরমাুজে চাষ হয়েছে বলে জানা গেছে।


কৃষকদের সাথে কথা বলে আরও জানা গেল, পতিত জমিতে এর ফলন করে বেশি লাভবান তারা। কেউ কেউ দেখতে আসেন এবং চাষ করার জন্য পরামর্শ চান। বাজারে দাম ভালো পাওয়া যায়, এ তরমুজ খেতেও অনেক মিষ্টি ও সুস্বাদু।
গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মহিন বলেন, আগে ভোলাতে ব্লাক বেবি তরমুজের চাষাবাদ হতো না, গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা পরীক্ষামূলকভাবে একজন চাষীকে দিয়ে গত বছর তরমুজের চাষাবাদ করায়, এতেই ওই কৃষক সফলতা দেখতে পান। তার সফলতা দেখে স্থানীয় অনেক কৃষক এ জাতের তরমুজ চাষে আগ্রহ প্রকাশ করে। এরপর ৬০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ দিয়ে বীজ ও অন্যন্য উপকরণ দিয়ে সহযোগীতা করেছি। এ বছর তরমুজ চাষে সবাই এখন বেশ সফল। এ তরমুজ চাষাবাদের ফলে এ অঞ্চলের কৃষকদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে ভুমিকা রাখতে বলে আমি মনে করছি।
ভোলা সদর কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন বলেন, প্রথম দিকে নতুন ফসল হিসাবে কৃষকদের অনাগ্রহ থাকলেও এখন সবাই এ ফসলের উৎপাদনে আগ্রহী। বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে এ তরমুজের চাষ করছেন কৃষকরা। কৃষিবিভাগও কৃষকদের সার্বিক সহযোগীতা করছে।

 

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।