সর্বশেষঃ

ছুঁত-ছায়া লাগা

ঋতুবতী কোন নারী রোগী-অসুস্থ্য কোন ব্যক্তির নিকটে গেলে বা নিফাস চলাকালীন কোন নারীর ঘড়ে ঐ ব্যক্তি গেলে ছুঁত লাগে (অকল্যাণ, সুস্হ না হওয়া, নাপাক হওয়া) বলে ধারণা আমাদের সমাজে প্রচলিত। অনুরূপ কোন লাশ বা মৃতদেহ দেখতে যাওয়ার ক্ষেত্রেও ইসলামে যার কোন ভিত্তি নেই।
ঋতুবতী নারী আশ-পাশের সব কিছুকে নাপাক করে দেয় তা হচ্ছে ইয়াহুদীদের বিধান ও ‘আক্বীদাহ্। যা আমাদের সমাজে ও অনেকাংশে দেখা যায়। ইয়াহুদীদের পুরাতন নিয়ম ঋতুবতী মহিলাদেরকে এবং তাদের আশ-পাশের সব কিছুকে নাপাক হিসেবে গণ্য করেছে। যে কোন জিনিস ষ্পর্শ করলেই পুরো দিন ব্যাপী তা নাপাক থাকবে। যদি কোন মহিলার শরীরে কোন প্রবাহিত রক্ত থাকে যা গোশতের উপর প্রবাহিত হয়, তাহলে সে এক সপ্তাহ পর্যন্ত অপবিত্র থাকবে। যে তাকে ষ্পর্শ করবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত নাপাক থাকবে। সে যার উপর বসবে বা শয়ন করবে তা নাপাক বলে গণ্য হবে। যে তার বিছানা ষ্পর্শ করবে তার শরীরের পোশাক ধৌত করতে হবে। গোসল করতে হবে এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত সে নাপাক থাকবে। সে যার উপর বসেছে এমন কোন আসবাবপত্রকে ষ্পর্শ করলেও অনুরূপ তাকে গোসল ও তার পোশাক ধৌত করতে হবে। এমতাবস্থায় সে সন্ধ্যা পর্যন্ত নাপাক থাকবে। (লেভিটিকাসঃ১৫/১৯-২৩)।
* এ কারণে মাঝে মাঝে নারীদেরকে কারো সাথে কোন ধরণের আচার-আচরণ বা উঠাবসা করতে নিষেধ করা হতো। তাদের কেউ ঋতুবতী হলে উক্ত সময়টা “নাপাক ভবন” – এ পাঠিয়ে দেয়া হতো। (ওনরফ. পৃ-১৩৮).
* কিন্তু ইসলাম কোন ঋতুবতী মহিলাকে বলেনা যে তার আশে -পাশের জিনিসকে নাপাক করে দেয়। সলাত ও সাওমের মত কয়েকটি “ইবাদাত থেকে অব্যাহতি পাওয়া ব্যতীত সে সম্পূর্ণ সাধারণ জীবন-যাপন করবে। (ইসলামে নারী বনাম-ইয়াহুদী-খৃষ্টান ধর্মে নারী পৃ:-১৫-১৫- ওংষধসযড়ঁংব.পড়স).
* নাবী (সা:) বলেছেনঃ “তোমরা ইয়াহুদের বিপরীত কর (আবূ দাঊদ,তিরমিযী, মিশকাত হা/১৬১৮; হাসান)।
* উম্মুল জননী ‘আয়িশাহ্ (রা:)থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, নাবী (সা:) আমার কোলে হেলান দিয়ে কুরআন তিলাওয়াত করতেন। আর তখন আমি হয়িযের অবস্থায় ছিলাম;তিনি ইতিকাফ অবস্থায় মাথা বের করে দিতেন, আর আমি হায়েয অবস্থায় মাথা ধুয়ে দিতাম। আমি ও নবী (সা:) জানাবাত অবস্থায় একই পাত্র হতে পানি নিয়ে গোসল করতাম।(সহীহুল-বুখারী/২৯৯,২৯৭,৩০১)।
* উম্মু সালামাহ (রা:)- থেকে বর্ণিত, হায়েয অবস্হায় তিনি ও আল্লাহর রাসুল (সা:) একই চাদরের ভিতর শুয়েছেন। (সহীহুল বুখারী/২৯৮)।
* ঋতুস্রাব পুরো শরীরকে অপবিত্র করে না; বরং শরীরের যে অংশে লাগে,কেবল সে অংশকেই অপবিত্র করে।আর এ কারণে রাসুল(সা:) মহিলাদের যে অংশে ঋতুস্রাব লাগে,তা ধুয়ে ফেলে ঐ পোশাকে সালাত পড়ার বিধান করেছেন (ইবনে আল উসাইমিন (রহ)। আসমা (রা:) থেকো বর্ণিত, একদিন একটি মহিলা নাবী (সা:)- এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল!আমাদের কারো যদি কাপড়ে হায়েযের রক্ত লেগে যায় তখন সে কি করবে? তিনশ বললেনঃ রক্তের জায়গাটি ভালভাবে ধুয়ে ফেলবে,তারপর ঐ কাপড় পরপ সালাত আদায় করতে পারবে।(সহীহ মুসলিম/২০৭৮)।
* আর লাশ দেখতে যাওয়ার ক্ষেত্রেও নেই কোন অপবিত্রতা ও অকল্যাণ। আর না আছে নিষেধাজ্ঞা। এমনকি আল্লাহর রসুল (সা:) সাহাবীদেরকে নিয়ে মৃত মহিলার জানাযাও আদায় করেছেন যিনি নিফাস অবস্থায় মারা গিয়েছিল।তাই বরং এসবে রয়েছে আরও বিশেষ গুরুত্ব ও ফযীলাত।
* আবূ হুরায়রাহ (রা:) থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জানাযার সালাত আদায় করা পর্যন্ত লাশের সাথে থাকে, তাকে এক কীরাত সাওয়াব দেওয়া হবে।আর যে ব্যক্তি দাফন করা পর্যন্ত লাশের সাথে উপস্থিত থাকে,তাকে দু’কীরাত সাওয়াব দান করা হবে।কেউ জিজ্ঞেস করল, দু’কীরাত বলতে কি পরিমাণ বুঝায়? তিনি বললেনঃ দু’টি বিরাট পাহাড় সমতূল্য। (সহীহ মুসলিম/২০৭৮)।
* সামুরাহ ইবনে জুনদুব (রা:) হতে বর্ণিত তিনি বলেন,আমি রাসুলুল্লাহ(সা:)- এর পিছনে এক মহিলার জানাযার সালাত আদায় করেছি।মহিলাটি নিফাস অবস্থায় মারা গেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা:) জানা-যার সালাতে তার মাঝ বরাবর দাঁড়িয়েছিলেন। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত-১৬৫৭)।
* তবে মৃত ব্যক্তির লাশের পেছনে মহিলাদের যাওয়া নিষেধ।উম্মু আতীয়াহ(রা) থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন, আমাদের জানাযার অনুগমন করতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু এব্যাপারে আমাদের ওপর কঠোরতা আরোপ করা হয়নি। (আবূ দাঊদ/৩১৫৩; সহীহ)।
* ইবনু উমার (রা:) থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন,কোন লাশের সাথে বিলাপকারিণী থাকলে,রসুলুল্লাহ (সা:) তার অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন।(সুনানে ইবনে মাজাহ/১৫৮৩; হাসান)।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।