সর্বশেষঃ

ধেয়ে আসছে আমফান

করোনার দুঃসময়ে ঘূর্ণিঝড়ের চ্যালেঞ্জ

করোনার দুঃসময়ে আরেক বিপদের মুখোমুখি দেশ। উপকূলের দিকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় আমফানের কারণে নতুন এক চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের অভিজ্ঞতা থাকলেও আমফান এমন এক সময়ে আসছে, যখন দেশ লড়ে যাচ্ছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে। এ অবস্থায় সর্বোচ্চ সতর্কতার সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে উপকূলীয় অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে নানা সমস্যায় পড়তে হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গতকাল রোববার রাত ৮টা পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় আমফান এগিয়ে আসছিল আইলা, ফণী ও বুলবুলের পথ ও গতি অনুসরণ করে। আবহাওয়াবিদদের মতে, আজ সোমবার এটি প্রবল রূপ নিতে পারে। দিক বদল না হলে বুধবার দুপুরের দিকে এটি বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে উপকূলীয় জেলাগুলোয় সাইক্লোন শেল্টারগুলো প্রস্তুত রাখতে মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গতকাল মন্ত্রণালয়ে এক ব্রিফিংয়ে প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, করোনা পরিস্থিতি মাথায় রেখে আশ্রয়কেন্দ্র বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ব্রিফিংয়ে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামাল উপস্থিত ছিলেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে উপকূলীয় জনপদের প্রায় ২৫ লাখ বাসিন্দাকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে হবে। আশ্রয়কেন্দ্রে যাতে গাদাগাদি অবস্থা না হয়, সে জন্য স্থানীয় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মোহসীন  বলেন, স্বাভাবিক সময়ের ঘূর্ণিঝড়ে নেওয়া উদ্যোগের পাশাপাশি এবার নতুন করে ভাবতে হচ্ছে করোনা সংক্রমণের বিষয়টি মাথায় রেখে। গত বছরের নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত হানার আগে মাত্র ৮ থেকে ৯ ঘণ্টার মধ্যে ২২ লাখ বাসিন্দাকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এবার যেহেতু করোনার কারণে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিদ্যমান, ফলে সেটি মাথায় রেখে পরিকল্পনা নিতে হয়েছে। উপকূলের বেশিরভাগ এলাকায় এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমণ তুলনামূলক কম বলে খুব বেশি সমস্যা হওয়ার কারণ দেখছেন না তিনি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়টি ঘণ্টায় ৬ থেকে ১০ কিলোমিটার গতিতে এগোচ্ছে। এটি আরও শক্তিশালী হয়ে সুন্দরবনের উপকূলীয় অঞ্চলের দিকে এগিয়ে আসছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার। যা দমকা হাওয়ার আকারে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, গতিপথ বদল না হলে আমফান আঘাত হানতে পারে দেশের পশ্চিম উপকূলে। খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরায় এর ভয়াবহতা দেখা যেতে পারে। এই এলাকাগুলোতে গতকাল পর্যন্ত করোনাভাইরাসের তীব্রতা তুলনামূলক কম লক্ষ্য করা গেছে। ফলে এখানকার বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে রাখার ক্ষেত্রে তেমন অসুবিধা হবে না বলে মনে করছে স্থানীয় প্রশাসন। খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা মিলিয়ে গতকাল পর্যন্ত করোনা শনাক্তের সংখ্যা ৫০ জনের কম। তবে পূর্ব উপকূলের ছয় জেলা- চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চাঁদপুরে শনাক্তের সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার।
মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা সংক্রমণ বেশি এমন জনপদে উপকূলবাসীকে সতর্কতার সঙ্গে আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে হবে। যত বেশি সম্ভব স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি-বেসরকারি উঁচু দালানঘর কাজে লাগাতে হবে। আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত সাবান ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী সরবরাহ করতে হবে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, সামাজিক দূরত্ব পুরোপুরি নিশ্চিত করা না গেলেও যথাসম্ভব বন্দোবস্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ১৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি এক হাজার ৭৯৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে যাতে গাদাগাদি করে থাকতে না হয়, সে জন্য এলাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যবহার করার চিন্তা রয়েছে। এখন পর্যন্ত ৭০১টি আশ্রয়কেন্দ্র ঠিক করা হয়েছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ আপৎকালীন সেবা দিতে মেডিকেল টিম প্রস্তুত থাকবে। তবে বাগেরহাটে মাঠপর্যায়ে এখনও আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত নয় বলে জানিয়েছেন সেখানকার জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ। তিনি বলেন, ৩৪৫টি আশ্রয়কেন্দ্রের সঙ্গে কতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যুক্ত করতে হবে, সে তালিকা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সূত্র- সমকাল

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।