সর্বশেষঃ

ভাঁটফুলের শুভ্রতায় পুলকিত প্রকৃতিপ্রেমীরা

জাহিদ দুলাল ॥ ভোলার লালমোহন উপজেলার গ্রামীণ জনপদের মেঠোপথের দুই পাশে থোকায় থোকায় ফুটে রয়েছে ভাঁটফুল। অনেকটা নীরবেই নিজের সৌন্দর্য বিলিয়ে যাচ্ছে ফুলটি। স্নিগ্ধ শোভার সুরভিত ভাঁটফুলের রূপে আকৃষ্ট হয়ে আসছে অনেক পাখি-পতঙ্গ। গ্রামীণ জনপদের মেঠোপথের দুই ধারে ফুটে থাকা নয়নাভিরাম ভাঁটফুলের শুভ্রতায় পুলকিত হয়ে উঠছে প্রকৃতিপ্রেমীদের মন।
অযত্নে নিজ থেকেই সৃষ্টি হয়ে লালমোহন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভাঁটফুলের সুবাস ও সৌন্দর্য মাতিয়ে রাখে প্রকৃতি। এই ফুল গ্রামবাংলার অতিপরিচিত একটি বুনো ফুল। এই বুনো ফুলটি এখন ভোলার লালমোহন উপজেলার গ্রাম-গঞ্জের গ্রামীণ জনপদের পথের দুই পাশে, ঝোপঝাড়ে ও পতিত জমিতে দৃষ্টি কাড়া রূপে খুবই অপরূপভাবে ফুটে আছে। রাতের আঁধারেও ভাঁটফুলের মধুগন্ধ ভেসে বেড়ায় চারিদিকে।
লালমোহন হা-মীম রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী সাবিকুন নাহার ফারিহা ও বুশরা আকতার বলেন, ফুলগুলো দেখতে খুবই সুন্দর। কারও যত্ন ছাড়াই মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে এ ফুল। এ ফুল দেখলে মনে হয় কেউ যেন তোড়ায় তোড়ায় ফুলগুলোকে সাজিয়ে রেখেছে। সবচেয়ে বিষ্ময়কর বিষয় হচ্ছে- এই ফুল চাষ না করেই আমরা এর নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপভোগ করছি।
জানা যায়, ভাঁটফুল (Clerondendron viscosum) ছোট আকৃতির নরম শাখা-প্রশাখাবিশিষ্ট ঝোপজাতীয় গুল্মশ্রেণির বহুবর্ষজীবী সপুষ্পক উদ্ভিদ। বসন্তের সময়েই এই ফুলটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। ফুলটি জন্মগতভাবেই নানা কারুকাজে পরিপূর্ণ। ভাঁটফুলের পুংকেশর, পাপড়ি, পাতা ও কা- যেন নিখুঁতভাবে সাজানো। ফুলের পুংকেশরই ফুলটির প্রধান সৌন্দর্য। সাদা রঙের এ ফুলে আছে পাঁচটি পাপড়ি। প্রতিটি ফুলের অভ্যন্তরে বেগুনি রঙের ঢেউ ফুলটিকে করে তুলেছে ভীষণ আকর্ষণীয়।
লালমোহন করিমুন্নেসা-হাফিজ মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমান লিপু বলেন, ছোট বলো থেকেই আমরা রাস্তার দ্বারে এই ফুল ফুটে থাকতে দেখে আসছি। যা সত্যিই অপরূপ সুন্দর। কোনো রকমের পরিচর্যা ছাড়াই এই ফুল তার সৌন্দর্যে আকৃষ্ট করছে মানুষজনকে। এই ভাঁটফুল গ্রাম-গঞ্জের মানুষের কাছে অতিপরিচিত। এই ফুলকে দেখলেই বুঝা যায়, কোনো রকমের যত্ন ছাড়াও নিজের মতো করে নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করা যায়।


লালমোহন উপজেলা দুর্ণীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদ দুলাল জানান, ভাঁটফুল অযত্নে বেড়ে উঠে। তবে এর রূপ নয়নাভিরাম। বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অহরহ এই ফুলের দেখা মিলছে। ভাঁটফুলের সৌন্দর্যে মুহুর্তেই মনজুড়িয়ে যায়। তবে যারা ফুল ও উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণা করেন, গ্রামীণ এ ফুলের সৌন্দর্য ও উপকারিতা সম্পর্কে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জানাতে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এ জন্য তারা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে আমরা আশা করছি।
এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ভাঁটফুল একটি গুল্ম জাতীয় শোভা বর্ধণকারী ওষুধি উদ্ভিদ। এ ভাঁটফুল গ্রাম-গঞ্জের শোভা বর্ধণ করে। এ ছাড়া মৌমাছিরা এই ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে। নিজ থেকে জন্ম হলেও এই ভাঁটফুল গাছে কৃমিনাশক, ডায়রিয়া ও চর্ম রোগের ওষুধি গুনাগুন রয়েছে। তাই সকলের প্রতি আহ্বান থাকবে; অবহেলা না করে এই গাছের প্রতি যত্ন নেওয়ার ও সংরক্ষণ করার। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে এর উপকারিতা সর্ম্পকে মানুষজনকে বিস্তারিত জানানো হবে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।