সর্বশেষঃ

ভোলার চার আসনেই নৌকা ‘ভারমুক্ত’ ॥ অন্য প্রার্থীদের নেই তৎপরতা

এইচ এম নাহিদ ॥ আসন্ন জাতীয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই নির্বাচনী প্রচার প্রচরনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মাঠ দখলে থাকলেও তৎপরতা নেই অন্য প্রার্থীদের। দেশের অধিকাংশ আসনে নৌকার প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে অস্বস্তিতে পড়লেও ভোলায় এর ব্যতিক্রম। এ চার আসনে নৌকার প্রার্থীরা আছেন খানিকটা দুশ্চিন্তামুক্ত। এসব আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সঙ্গে শক্তিশালী কোনো দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বীতা নেই। নেই অন্য কেনো দলের শক্তিশালী প্রার্থীও। তাই অনেকটা নির্ভার রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলটির এই চার আসনের প্রার্থীরা। রয়েছেন অনেকটাই ‘ভারমুক্ত’। আসনগুলো হচ্ছে- ভোলা-১ (ভোলা সদর), ভোলা-২ (দৌলতখান-বোরহানউদ্দিন), ভোলা-৩ (লালমোহন-তজুমুদ্দিন), ভোলা-৪ (চরফ্যাশন-মনপুরা)।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার দাবি, এসব আসনে যাদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তারা এলাকায় জনপ্রিয়। টানা ১৫ বছর এলাকার ব্যাপক উন্নয়নের কারনে জননেত্রী শেখ হাসিনা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও তাদের যোগ্য মনে করে নৌকার মনোনয়ন দিয়েছেন। এই নির্বাচনেও তারা ব্যাপক ভোটে নির্বাচিত হবেন।
ভোলা-১ আসনে ৮ বারের সংসদ সদস্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহামেদ নৌকা প্রতীক নিয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোলা সদর আসনে নির্বাচন করছেন। এই বয়সেও সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিরতিহীন ভাবে তিনি ভোটারদের কাছে গিয়ে নৌকায় ভোঠ চাইছেন আর ৭ তারিখে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়ার প্রতিশ্রুতি নিচ্ছেন। তিনি এবার পাড়া-মহল্লায় গ্রামে-গঞ্জে সভা সমাবেশে ভোটারদের কাছে ভোট চাইছেন আর ব্যাপক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তিনি ভোটারদের বলছেন, একসময়ে আমরা যে পথে কাঁদামাটির জন্য খালি পায়ে হেটে স্কুলে যেতোম সে পথ এখন সড়ক, মহাসড়কে রুপান্তরিত হয়েছে। ভোলা এখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দৃশ্যমান হয়েছে। আর এটা জননেত্রী শেখ হাসিনার কারনেই হয়েছে। এবারও আমি আপনাদের ভোটে নির্বাচিত হলে ভোলা বরিশাল ব্রীজ করে ভোলার মানুষের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করবো। আর এ স্বপ্নকে বাস্তবায়নে বাঁধা হয়ে দাড়িছে বিএনপি-জামাত। তারা পরাজয়ের ভয়ে নির্বাচনে না এসে আগুন সন্ত্রাস করে নির্বাচন প্রতিহত করার চেষ্টা করছে যাহা কোনদিন সম্ভব হবেনা। এই নেতা সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে এদের প্রতিহত করার ঘোষনা দিয়েছেন।
এ দিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, দীর্ঘ ৫৩ বছর পর্যন্ত নৌকার মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করছেন তোফায়েল আহামেদ। এবারও তার ব্যাতিক্রম ঘটেনি। তিনি রাজনীতি করেন ভোলার মানুষের জন্য। আজ তোফায়েল আহমেদের কারণেই ভোলা দেশের একটি গর্বিত জেলা হয়ে মহান সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছে। এবারও তার ব্যাতিক্রম হবেনা। ৭ জানুয়ারীর নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন।
স্থানীয় ভোটাররা বলছেন, এবারের নির্বাচনে ভোলা সদর আসনে নৌকা ছাড়া অন্য কোন প্রার্থীর প্রচার প্রচারনা তেমন একটা চোখে পড়েনা। এখানে তোফায়েল আহমেদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির মো. শাজাহান লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)’র মো. ছিদ্দিকুর রহমান মশাল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন।
ভোলা-২ (দৌলতখান-বোরহানউদ্দিন)’র নৌকার প্রতীক নিয়ে টানা তৃতীয়বারের মত নির্বাচন করছেন বর্তমান সংসদ আলী আজম মুকুল। স্থানীয়রা বলছেন, এ আসনেও নৌকার প্রার্থী আলী আজম মুকুল ছাড়া অন্য কোন প্রার্থীর প্রচার প্রচারনা চোখে পড়ছেনা। এ আসনে জাতীয় পার্টি জেপি) থেকে বাইসাইকেল মার্কা নিয়ে নির্বাচন করছেন মো. গজনবী, বাংলাদেশ কংগ্রেস ডাব মার্কা নিয়ে নির্বাচন করছেন মো. আসাদুজ্জামান, তরিকত ফেডারেশন থেকে ফুলের মালা নিয়ে নির্বাচন করছেন শাহেনশাহ মো. সামসুদ্দিন মিয়া। এদের মধ্যে শুধু নৌকার প্রার্থীর নির্বাচনী অফিস থাকলেও অন্য কোন প্রার্থীর কোন অফিস চোখে পড়েনি। ভোটাররা বলছেন এখানে আলী আজম মুকুল ব্যাপক ভোটে নির্বাচিত হবেন।
ভোলা-৩ (লালমোহন-তজুমদ্দিন)’র আসনটিতে টানা চতুর্থবারের মত নৌকার প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সংসদ নুরুননবী চৌধুরী শাওন। তার সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদন্ধিতা করছেন আওয়ামীলীগের সাবেক সংসদ মেজর (অব) জসিম উদ্দিন, তিনি ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। তিনি তার স্ত্রীকে সাথে নিয়ে ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট চাইছেন। পোষ্টারিং ও মাইকিং করছেন কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোন একটি উঠান বৈঠক করেন নি। এছাড়াও নির্বাচন করছেন জাতীয় পার্টি থেকে মো. কামাল উদ্দিন লাঙ্গল। বাংলাদেশ কংগ্রেস থেকে মো. আলমগীর ডাব। নির্বাচনী মাঠে এদের চোখে পড়ার মত কোন প্রচার প্রচারনা চোখে পড়ছেনা। সাধারন ভোটাররা বলছেন, এ আসনটিতে দিন-রাঁত পর্যন্ত বিরামহীন ভাবে ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে ভোট চাইছেন নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ নুরুননবী চৌধুরী শাওন ও তার সমর্থকরা। আশা করা যায় এক রকম বিনা প্রতিদন্ধিতায় শাওন এবারও বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন।
ভোলা-৪ (চরফ্যাশন-মনপুরা)’র এ আসনটিতেও টানা চতুর্থবারের মত নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন বর্তমান সংসদ আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব। তিনিও নির্বাচনী মাঠে দিন রাঁত পর্যন্ত মানুষের কাছে গিয়ে ভোট চাইছেন আর আগামী ৭ জানুয়ারীতে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার জন্য ভোটারদের আহবান জানান। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন মো. আবুল ফয়েজ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মো. আলাউদ্দিন, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক মো. মিজানুর রহমান, তৃণমূল বিএনপির মো. হানিফ নির্বাচন করছেন। সাধারণ ভোটাররা বলছেন, চরফ্যাশন-মনপুরায় নৌকার বিপক্ষে কয়েকজন প্রার্থী কাগজে কলমে থাকলেও নৌকা ছাড়া এখানে অন্য কোন প্রার্থীকে ভোট চাইতে দেখা যায়নি। এখানেও এক রকম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নৌকা বিপুল ভোটে নির্বাচিত হওয়ার লক্ষণ এখন পর্যন্ত দেখা যায়।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।