সর্বশেষঃ

বাঁশখালীর প্রাচীন নিদর্শন ৪৫০ বছরের বকসি হামিদ জামে মসজিদ

মুহাম্মদ আতিকুর রহমান হান্নান, বাঁশখালী প্রতিনিধি ॥ মুসলিম সভ্যতার অনুপম নিদর্শন ৪৫০বছরের প্রাচীন বাঁশখালীর বখশী হামিদ জামে মসজিদ। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে কয়েক শ’ বছর ধরে প্রাচীন মসজিদটি মুসলিম সভ্যতার অন্যান্য ইসলামের দ্যূতি ছড়াচ্ছে। চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের ইলশা গ্রামের দীঘির পাড়ে অবস্থিত মুসলিম প্রাচীনতম সভ্যতার অনুপম মসজিদটির অবস্থান। মসজিদে স্থাপিত ফলকে আরবিতে লেখা রয়েছে “বানাল মাসজিদুল মোকারেম ফি আহমিদ মূলক, ইসনাদুল মিলাত ওয়াদ্দিন সুলতানুল মুয়াজ্জাম সুলাইমান (কররানি) সালামালাহু আনিল ওয়াফাত ওয়াল বলিয়্যাতি মুরেখাত তিসযু রমজান, খামছুন ও সাবয়িনা ওয়া তিসআতু মিআত হিজরি আলাইহিস সালাম।”
যার বাংলায় অর্থ দাড়ায়-এই মসজিদ নির্মাণ হয়েছে সেই বাদশাহর যুগে যাকে উপাধি দেয়া হয়েছে দ্বীন এবং মিল্লাতের সুলতানুল মুয়াজ্জম তথা মহান সম্রাট হিসেবে, আর তিনি হলেন সুলাইমান কররানি (আল্লাহ তাকে বিপদাপদ থেকে মুক্ত রাখুন), তারিখ ৯৭৫ হিজরি সালের ৯ রমজান,এবং ১৫৬৮ সালের ৯ মার্চ। ১০ অক্টোবর ২০২০ সালে ওই মসজিদের খতিব মাওলানা আবদুল মজিদ প্রাচীন আরবি লেখা শিলালিপিতে লেখা আরবির বাংলায় অনুবাদ করে নতুন শিলালিপি স্থাপন করেন। ওই শিলালিপির বক্তব্য মতে, এটি সুলাইমান কররানি কর্তৃক প্রতিষ্ঠা করার কথা বলা হলেও প্রাচীনকাল থেকে লোকমুখে বখশী হামিদের নির্মিত মসজিদ বলে পরিচিত লাভ করে মসজিদটি।
বখশী হামিদের পুরো নাম মুহাম্মদ আবদুল হামিদ, বখশী তার উপাধি। বখশী ফার্সি শব্দ। এর অর্থ কালেক্টর বা করগ্রহীতা। স্থানীয় প্রবীণ মুরব্বিরা জানান, তারা বংশপরম্পরায় জেনে আসছেন তৎকালীন সময়ে বখশী হামিদ এই অঞ্চলের কালেক্টর ছিলেন। তারা বলেন, তৎকালীন সময়ে এ এলাকায় তেমন জনবসতি ছিল না। ইউসুফ ও কুতুব নামে গৌড়ের দু’জন আমির শাহ্ আবদুল করিম নামক জনৈক সুফীর সাথে উপযুক্ত বাসস্থানের সন্ধানে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে বাঁশখালীতে অবতরণ করে বাঁশখালীর বাহারছড়া ইউনিয়নের ইলশার দরগাহ বাড়ির স্থানে পৌঁছলে শাহ্ আবদুল করিম তার ছড়ি পুঁতে রেখে সেখানে বসবাসের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন এবং বসবাস শুরু করেন।
বখশী আবদুল হামিদ উক্ত শাহ্ শাহের বংশধর বলে প্রাচীনকাল থেকে স্থানীয়দের মাঝে প্রচলিত রয়েছে। ওই সময়ে সবাই তাকে সুলতান বলে ডাকতেন। তিনি এ মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেন এবং পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করে গেছেন। মুঘল স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত এ মসজিদটি তিন গম্বুজবিশিষ্ট। মাঝেরটি অপেক্ষাকৃত বড় এবং ছোট গম্বুজ দুটি ধনুকের মতো করে ছাদের সাথে যুক্ত। প্রাচীন এই মসজিদটি নির্মিত হয়েছে ইট, পাথর ও সুড়কি ব্যবহার করে। মসজিদটির নির্মাণ শৈলীর সাথে ঢাকার শায়েস্তা খান মসজিদ এবং নারায়ণগঞ্জের বিবি মরিয়ম মসজিদের মিল পাওয়া যায়। মসজিদের পূর্ব পার্শ্বে একটি সু-বিশাল পুকুর রয়েছে। পুকুরে মাছ চাষ করা হয় এবং পানি ব্যবহার করে মুসল্লিরা অজু করেন। মসজিদের পশ্চিমে রয়েছে কবরস্থান। পূর্ব-উত্তরে গড়ে উঠেছে মাদ্রাসা ও এতিমখানাসহ ইসলামী কমপ্লেক্স।
এ কমপ্লেক্সের নাম রাখা হয় দারুল কুরআন মুহাম্মদিয়া শাহ আব্দুল হামিদ মাদ্রাসা ও এতিমখানা। প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি সমবেত হয় এই মসজিদে। ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর প্রাচীনতম বখশী হামিদ মসজিদ সস্ত্রীক পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত জ্যাঁ মেরিন সুহ। ওই সময় তার সাথে ছিলেন ফ্রান্সের দ্যা ক্রাইসিস অ্যান্ড সাপোর্ট সেন্টারের পরিচালক এরিক সেভালিয়াস। পরিদর্শনের সময় ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত জ্যাঁ মেরিন সুহ বলেছিলেন, এই ঐতিহাসিক বকশি হামিদ মসজিদটি দেখে সত্যিই তিনি মুগ্ধ। এটি একটি প্রাচীনতম নিদর্শন বলে অবহিত করে গেছেন।
উল্লেখ্য এই ঐতিহাসিক স্থাপনায় প্রবেশের রাস্তাটি খুবই সংকীর্ণ যার দরুণ বহিরাগতদের যাতায়াতে অসুবিধা হয়। যাতায়তের এ সড়কটির সংস্কারের কাজ চলছে কচ্ছপ গতিতে যার ফলে সাধারণ যানবাহন ত দূরের কথা স্বাভাবিকভাবে লোকজনের হাঁটাচলাও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। বড় কোন গাড়ী প্রবেশ করতে পারছে না। তাই জনসাধারণের দাবি এই রাস্তাটির সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ করা।
অবস্থান : গ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের মধ্য ইলশায় অবস্থিত ৪৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী বখশি হামিদ মসজিদটি।
যে ভাবে যাবেন : চট্টগ্রাম শহর বহদ্দারহাট টার্মিনাল থেকে সোজা আনোয়ারা-বাঁশখালী আঞ্চলিক সড়কে (বাঁশখালী স্পেশাল সার্ভিস, সুপার সার্ভিস, সিনেমাপ্যালেস থেকে এস.আলম সার্ভিস) বাসে করে গুনাগরী খাসমহাল বাজারে নামতে হবে। বাজার থেকে সোজা পশ্চিমে ইলশা মোশাররফ আলী সড়ক হয়ে সিএনজি যোগে যাওয়া যায় এ মসজিদে। ঢাকা থেকে আসতে চাইলে সৌদিয়া সার্ভিসে করে সোজা গুনাগারি স্টেশনে নেমে যাওয়া যায়।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।