জুতা সেলাইয়ে মনোরঞ্জনের ৬০ বছর পার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মনোরঞ্জন রবিদাসের বয়স প্রায় ৭৫ বছর। মোট বয়সের ষাট বছরই কাটিয়েছেন মানুষের জুতা সেলাই আর পলিশ করে। গত ১৮ বছর ভোলার লালমোহন পৌরসভার উত্তর বাজারের টেম্পুস্ট্যান্ড সংলগ্ন স্থানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত করছেন জুতা সেলাইয়ের কাজ। এর আয়েই চলছে তার জীবন।
মনোরঞ্জন রবিদাস বলেন, আমার পুরনো বাড়ি নোয়াখালীর হাতিয়ায়। সেই বাড়ি নদীতে ভেঙে যায়। এরপর সেখান থেকে চলে আসি লালমোহনে। এখানে এসে পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের সাবেক মধুচন্দা সিনেমা হলের কাছে একটি ভাড়া বাসায় থাকতে শুরু করি। তবে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর উপহারের একটি বসতঘর পেয়েছি। এখন সেখানেই থাকি।
তিনি বলেন, বংশগত ভাবেই আমাদের এ পেশা। আমার যখন ১৫ বছর, তখন থেকেই এ পেশায় জড়িয়ে যাই। লালমোহনে এসে ১৮ বছর ধরে এ কাজ করছি। এর আগে, অন্তত ৪২ বছর জুতা সেলাই আর পলিশ করেছি হাতিয়ায়। সব মিলিয়ে জীবনের প্রায় ৬০ বছর এই জুতার সঙ্গেই কাটিয়েছি।
মনোরঞ্জন আরো বলেন, প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত লালমোহন পৌরসভার উত্তর বাজারের টেম্পুস্ট্যান্ড সংলগ্ন স্থানের কাছে বসে মানুষের ছেঁড়া জুতা সেলাই আর পলিশ করি। এতে তেমন আয়ও নেই। দৈনিক গড়ে দুই থেকে আড়াইশ’ টাকার মতো উপার্জন করি। এরমধ্যে খরচ বাদে দেড় থেকে দুইশ’ টাকার মতো আয় হয়। এ দিয়ে এখন কোনো রকমে চলছি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত হয়তো এ কাজই করে যেতে হবে।
তার স্ত্রী মারা গেছেন অনেক আগে। তাই মেজো মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পর থেকেই তার সঙ্গে বসবাস করছেন। তিনি বলেন, মেয়ের জামাইও অসুস্থ-অসচ্ছল। তাই তাদেরও আমার আয়ে চলতে হয়। জুতা সেলাই আর পলিশ করে খেতে-পরতে কষ্ট হয়। এজন্য বয়স্ক ভাতা পেতে এ বছর আবেদন করেছি। ঐ ভাতা পেলে সুবিধা হতো।
এ বিষয়ে লালমোহন পৌরসভার প্যানেল মেয়র মো. সাইফুল কবীর বলেন, মনোরঞ্জন রবিদাস একজন প্রকৃত অসহায়। এজন্য তাকে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের জমিসহ একটি বসতঘর দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তাকে পৌরসভার পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। যেহেতু তিনি এবার বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদন করেছেন, তাই সরকারিভাবে যখন আমাদের কাছ থেকে চাহিদা চাওয়া হবে তখন তার নামটি বয়স্ক ভাতার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করবো।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।