মধ্যরাত : পর্ব-১৯২

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন), 

(গত পর্বের পর) : দোলা দোলা, আমার সমস্ত অন্তর দোলার জন্য কেঁদে কেঁদে ফিরছে। আবার মোটেলে ফিরে এলাম। পুলিশ অফিসে আমার মোটেলের ফোন নং দিয়ে এলাম। ওরা বলল আমরা চেষ্টা করছি। ডোরা-কুসুম অসহায় হয়ে মোটেলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে দূর দগিন্ত ব্যাপী পথের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি আবার আকাশ চৌধুরীকে নিয়ে দোলা-কচের সন্ধানে বেরুলাম। কোথায় এই মায়ামিতে আমি কাকেও চিনিনা। কোন বন্ধু-বান্ধবও নেই। তবু আবার অন্তহীন সমুদ্রের কুল ধরে, সীমাহীন জিজ্ঞাসা নিয়ে, আমি ছুটছি ছুটছি। সেদিন পূর্ণিমার বড় চাঁদটা সমুদ্রের কুল ধরে আমার সাথে সাথে চলছিল। চাঁদটা যেন আমার কাছে মনে হয়েছিল এক খন্ড পোড়া রূটি।
তবু আমি চলছি দোলা দোলা করে। যদি কোন খোঁজ পাই, বড়দিও কাছে কেমন করে মুখ দেখাব। আমার দুঃখে-কষ্টে ব্যথা বেদনায় কার সুশীতল হাতের ছোঁয়া পড়বে। আমার দুর্ভোগ কপালে কত কথা, কত স্মৃতি কালমার্কস, মহাত্মা গান্ধী, নেহরু, মাও সেতুং নিয়ে কে আমার সাথে দীর্ঘ আলোচনা করবে ? কে আমাকে এসে বলবে, দাদু তুমি এখনও খাওনি ? এমনি কত কথা, কত স্মৃতি আমার চোখের সামনের মুভির পর্দ্দার মত স্মৃতি আমার চোখের সামনে হাতছানি দিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। তবু আমি গাড়ী চালিয়ে সমুদ্রের অপলকহীন পাড় দিয়ে। কত বিশাল এই সমুদ্র, কত বিশাল এই সমুদ্রের পাড়, এই সীমাহীন পাড়ে ঘুরে ঘুরে কোথা থেকে দোলা-কচকে আমি খুঁজে বের করব।
আমি তবুও ধীরে ধীরে গাড়ী ড্রাইভ করছি। শেষ পর্যন্ত ঐ জেলে দুটোকে আজ দেখলাম। স্প্রীড বোট সমুদ্রের কুলে থেকে গভীর জলের দিকে ঠেলে চলে যাচ্ছে। আমি তাড়াতাড়ি গাড়ী থেকে নেমে দৌড়ে গিয়ে ধরলাম। বললাম, বল ভাই কোন হাসপাতালে ছেলে-মেয়ে দুটো আছে ? বলল দেখ আমাদের এখন মাছ মারার সময় বিরক্ত করনা। আমরা খুবই গরীব, মাছ মেরে দুটো পয়সা রোজগার করি। ছেলে-মেয়ে নিয়ে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি। আমার স্ত্রী ফ্যাক্টরীতে কাজ করে, আচ্ছা বাড়ী গিয়ে ওদের জিজ্ঞাসা করব। আমি বললাম তোমার বাড়ী এখন কত দূর ? ওরা বলল, সে অনেক দূর। আর তাছাড়া আমার স্ত্রী এখন ফ্যাক্টরীতে কাজে গেছে। সে সন্ধ্যা বেলা ঘরে আসে। তখন তোমরা এস। বাড়ীর ঠিকানা দিল। আমি আর আকাশ আবার মোটেলে ফিরে এলাম। কুসুমের খাওয়া-দাওয়া নেই, বেশ ভূষা নেই, খালি চোখ মুছে, চোখ মুখ কাঁদতে কাঁদতে ফুলে উঠেছে। তবু আমি তাকে এসে বোঝালাম রেস্টুরেন্টে খেতে নিয়ে গেলাম। ডোরার মুখেও কোন কথা নেই। বলে এত ফুর্তি আমাদের ভিতর কি ঘটে গেল।
আমি হাসপাতালে গিয়ে দেখলাম, সুশান্ত তখন রুমে বসে সুপ খাচ্ছিল। অনেক সুস্থ্য হয়ে উমার সাথে গল্প করছে। ক্যামেলিয়ার রুমে গেলাম, ক্যামেলিয়া উঠে তখন দুপুরের লাঞ্চ খাচ্ছে, দেবপ্রিয় পাশে বসে ওর সাথে গল্প করছে। দেখলাম এরা দু’জনে এখন আরোগ্যের পথে। আমি দোলা কচের সন্ধান পেলেই বাড়ী মুখো হতে পারি। এই মায়ামি আমার কাছে যেন বিরক্তি থেকে বিরক্তকর হয়ে উঠেছে। কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছি না, পুলিশ ইনফরমেশন অফিস থেকে মোটেলে ফোন এল আমরা দু’টো ইন্ডিয়ান ছেলে মেয়ের খোজ পেয়েছি, ওরা আহত হয়ে কোন গ্রামের হাসপাতালে আছে, তবে মায়ামি থেকে ৩০-৪০ মাইল দূরে।

(চলবে——-)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।