সর্বশেষঃ

ভোলায় তরমুজের বাম্পার ফলন হলেও দালালের কারণে নেই হাঁসি কৃষকের মুখে

মো: আফজাল হোসেন ॥ ভোলার মাটি অনুকূলে থাকায় চলতি বছরে সাড়ে ৯ লাখ টন তরমুজ উৎপাদন হয়েছে। তবে কৃষকের মুখের হাঁসি কেড়ে নিচ্ছে স্থানীয় কতিপয় দালাল নামের প্রভাবশালীরা। যাদেরকে প্রতিটি তরমুজের বিপরীতে দিতে হচ্ছে ৭ থেকে ১০টাকা। এদের কারণে সরাসরি বেপারীদেরকাছে বিক্রি কিংবা মোকামেও পাঠাতে পারছে না কৃষকরা।
জানা গেছে, দ্বীপজেলা ভোলা তরমুজ চাষের জন্য বেশ উপযোগী। যে কারণে গতবছর বেশ ভালো ফলন আর দাম পেয়েছে কৃষকরা। একই সাথে কৃষকরা লাভবান হয়েছে বলেই চলতি বছরে আরো বেশি জমিতে তরমুজের চাষাবাদ করেছে। তাইতো জেলায় গত বছরের চেয়ে ৭ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজের বেশি চাষাবাদ হয়েছ্। চলতি মৌসুমে জেলার ৭ উপজেলায় ১৮ হাজার ৩শ’ ৮৩ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৭ হাজার হেক্টর বেশি। চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ হাজার ২শ’ ৪৯ হেক্টর। হেক্টর প্রতি তরমুজ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫২ টন করে। আর মোট তরমুজ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা হাতে নেওয়া হয়েছে ৯ লাখ ৪৮ হাজার ৩শ’ ৭৬ টন। বর্তমানে কৃষকদের মুখে হাসি থাকার কথা থাকেেলা রয়েছে চরম ক্ষোভ। একটি তরমুজের পিছনে ৭০ থেকে ৮০টাকা খরচ থাকলেও মাঠে বিক্রি হচ্ছে ১শত থেকে ১শ’ ১০টাকা দরে। আর স্থানীয় প্রভাবশালীদের দিতে হচ্ছে ৭ থেকে ৮টাকা করে। নিজের ফসল নিজে বিক্রি কিংবা গাড়ীতে তুলে দিতে পারছে না কৃসকরা। সবই দালালদের মাধ্যমেই দিতে হচ্ছে বলে প্রতারনার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থ্য হচ্ছে এসব অসহায় কৃষকরা।


জেলার চরফ্যাশন উপজেলার চরকলমী ইউনিয়নের একাধিক তরমুজের খেতে গেলে একই ধরনের সমস্যার কথা বলেন তরমুজ চাষীরা। চরম ক্ষোভ করে মো: রফিকুল ইসলাম, মো: বেল্লাল হোসেন এবং মো: শরীফ বলেন, রোদ পুড়ে চাষাবাদ করি। লোন আর ধারদেনা করে ফসলাদী ফলাই দুটা আয় করবো বলে, অথচ স্থানীয় নেতা আর প্রভাবশালী ব্যক্তি যারা দালালী করে; এদের জন্য পারছি না। আমার ফল আমি খেত থেকে কেটে মাথায় করে ট্রাকে পৌছে দিব এবং ২/৪ টাকা লাভবান হবে। অথচ তা পারছে না, কারণ এসব দালালদের দিতে হবে। আমার তরমুজ আমি দাম দিতে পারি না, এরা এসে দাম ধরে বিক্রি করছে। লেবার তারা দিবে। আমাদের উপর জুলুম করছে এই স্থানিয় নেতাফেতারা। চাষাবাদ করি আমরা আর এরা এসে ফাও টাকা নিয়ে যাবে। আমাদের তরমুজ সরাসরি বেপারীর কাছে আমরা বিক্রি করবো এবং খেতেই টাকা যাতে পাই এজন্য আমরা সরকারের কাছে সহযোগীতা কামনা করছি।
এদিকে তরমুজের খেতে কৃষকদের সাথে কথা বলছি দেখে ছুটে আসেন, স্থানীয় প্রভাবশালী (দালাল) চর কলমী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার মো: আবুল বাশার বাচ্চু এবং একই ইউনিয়নের যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মো: জাহাঙ্গীর হোসেন। তাদের সাথে কথা বললে তারা জানান, কৃষকরা সরাসরি বিক্রি করছে না। গাড়ীর চালক কিংবা বেপারীরা কৃষকদের বিশ্বাস করছে না বলেই আমরা সহযোগীতা করছি তাতে আমরাও লাভবান হচ্ছি। খেত থেকে আমাদের লোক দিয়ে ট্রলার কিংবা ট্রাকে তুলে দিচ্ছি তাতে তরমুজ প্রতি ৭/৮টাকা দিচ্ছে আমাদের। এসব দালালরা অসহায় মানুষদের প্রতারণা করে কৃষকদের কাছ থেকে লোড-আনলোডের নামেও টাকা আদায় করছে বলে স্বীকার করে নিলেন, স্থানীয় এসব দালালরা।
অপরদিকে বাম্পার ফলনের কথা জানিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এএফএম শাহাবুদ্দিন জানান, তরমুজের খেতে পোকার আক্রমন হয়েছে, তবে এজন্য কৃষকদের আমরা প্রশিক্ষণ দিেেয়া থাকি। এছাড়া সাড়ে ৯ লাখ মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদন হয়েছে জেলায়। তবে পরিবহন ব্যবস্থা এবং প্রতারনা না হলে কৃষকরা আরো লাভবান হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।