খালেদা জিয়া কি এই পরিণতির কথা কল্পনায়ও, কল্পনা করেছেন ?

খালেদা জিয়া কি এই পরিণতির কথা কল্পনাও, কল্পনা করেছেন ? করলে আজকের এই অবস্থা, হয়তো তাকে দেখতে হতো না ! মানুষ ভাবে এক হয় আরেক। কখন যে কোথা দিয়ে কি হয়ে যাবে কেউ কিচ্ছু জানে না। ৭৫এ বঙ্গবন্ধু এভাবে মৃত্যু বরন করবেন কেউ কল্পনায়ও ভাবেনী, অথচ তারই বিশ্বস্ত অনুগত মোস্তাক ও তার সাথি সেনাবাহিনীর একদল জুনিয়ার অফিসারদ্বারা তিনি নীহত হন। ক্ষমতায় তারই দল এবং অনুগত লোভী বেঈমানের সাথিরা। মাত্র কয়েকমাসের জন্য।
প্রকৃত মাস্টার মাইন্ড আড়ালে তখন মুচকি হাসছে। বিধাতার নিয়ম নির্মোহ বিচারের খরগ কখন যে কিভাবে কার উপর নেমে আসে কেউই তা জানে না। মাত্র সাত বছর ক্ষমতায় জীয়াউর রহমান যখন সেনাবাহিনীর সন্দেহভাজন সকলকে হত্যাকরে, এবং বাকিদের বিভিন্ন জায়গায় সরিয়ে দিয়ে নিজেকে নিরাপদ ভাবছিলেন, ঠিক তখন চট্টগ্রামে সার্কিট হাউজে যখন দলের বিভেধ দুর করে সুখের স্বপ্ন নিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন তখনই তাকে হত্যা করা হয়। এ যেন পঁচাত্তরেরই পুনরাবৃত্তি। দৃশ্যপটে মন্জুর। জিয়া হত্যারপর বিএনপিই ক্ষমতায়, বৃদ্ধ দুর্বল সাত্তারের নেতৃত্বে ! কয়েক মাস পর, ক্ষমতায় জেনারেল হোমো এরশাদ। ঠিক যেন মোস্তাক আর জিয়ার নাটকেরই পুনরাবৃত্তি।
২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর যে নির্মম নির্যাতন, নারী ধর্ষণ, আওয়ামীলীগের হাজার হাজার, নেতাকর্মী গৃহহারা, হাজার হাজার নেতাকর্মী জেলে, জুলুম অত্যাচারে, দিশাহারা, আশাহীন, বিভ্রান্ত ! তারা কি ভেবেছিল আবার তাদের দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে ?
জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি যেভাবে প্রশাসনকে সাজিয়েছিল এবং ইয়াজুদ্দিনের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সাজিয়েছিল, যেভাবে ক্ষমতায় পাকাপোক্ত আসন গেড়ে বসে ছিল, সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, এদেশের অনেক বোদ্ধা বুদ্ধিজীবী ও তারেক জিয়াকে পরবর্তী প্রধান কর্ণধার ভেবে নিয়েছিল ২২ জানুয়ারি নির্বাচন যদি করা যেত হয়তোবা সে পথেই বিএনপি চলেযেত, তাহলে কি হতো এ দেশের অবস্থা ? আওয়ামীলীগের অবস্থা ?
একবার চোখ বুজে আওয়ামী লীগের ভেবে দেখা উচিৎ নয় কি ? এ কথা ঠিক এক এগারোর প্রেক্ষাপট, আওয়ামীলীগ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল। যার পথ ধরে অরাজকতা দমনেরনামে দেশ রক্ষ্যার নামে, মঈন ইউ আহমেদের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী দৃশ্যপটে এসে সব ওলট-পালট করে দেয়। ফকরুদ্দিনকে সামনে রেখে তত্বাবধায়ক সরকারের নামে দুই বছর শাষণ করে তাহারা। প্রথমে দুই দলের শীর্ষ নেত্রীদের ধরে জেলে পুরে তাদের মাইনাস করার চেষ্টা করা হয় এবং নতুন দল গড়ার জন্য নানাভাবে প্রক্রিয়া চালানো হয়। এর সাথে দুই দলেরই শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতা জড়িত ছিলেন। কিন্তু বিধিবাম শেষ পর্যন্ত তাদের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। দুই নেত্রীকে মুক্তি দিয়ে নতুন করে সংসদ নির্বাচন দেওয়া হয় যে নির্বাচনে আওয়ামীলীগ বিপুলভাবে নির্বাচিত হন এবং ক্ষমতায় আসেন। তারপরের ইতিহাস সকলেরই জানা। ৩ মেয়াদে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায়। বর্তমান বিএনপির অবস্থা সবাই জানেন। বিএনপি’র তারেক-কোকোসহ বেগম জিয়ার পারিবারিক জীবন গভীর ভাবে বিপর্যস্ত হয়। তারেক জিয়া নির্বাষনে, আরেক পুত্র কোকে মৃত বেগম জিয়া একা বাংলাদেশের জেলে জীবন কাটছে অনেকদিন ধরে ! এটা কি কেউ কল্পনাও কল্পনা করেছিল ?
অথচ এটাই বাস্তব আজ। বাস্তব খুবই নির্মম আমরা সবাই জানি। কিন্তু এর থেকে কি আমাদের শিক্ষণীয় কিছুই নেই ? আমরা কি অন্ধ ? গণতান্ত্রিক নেতৃত্তের অন্ধত্বে চলাই দেখতে থাকব ? কোন দিনকি আমাদের বোধোদয় হবে না ? দল ক্ষমতায় এলেই প্রকৃত ত্যাগী নেতৃবৃন্দ দেয়ালের একপাশে হারিয়ে যায়। স্তাবক, তোষামোদকারী জি হুজুর মার্কা সুবিধাবাদী উমি চাঁদের দল নেতাদের প্রিয় হয়ে যায়। তাদের দাপটে প্রকৃত রাজনীতির লোকরা অবহেলিত উপেক্ষিত অভিমানের বোঝা নিয়ে দূরে চলে যায়। আর স্তাবক মৌসুমী রাজনীতি জীবিরা নেতাদের ভুল পথে পরিচালিত করে। তারা যেন দেখেও দেখেনা, তারা যেন বুঝেও কিছু বোঝেনা, তারা যেন অন্ধ, তারা যেন বধির হয়ে যায়। যেমন করে তাজউদ্দিনকে বঙ্গবন্ধুর পাশ থেকে সরিয়ে দিয়ে পরিবার পরিজনসহ জাতির জনক কে হত্যা করা হয়েছিল, হত্যা করা হয়েছিল তাজউদ্দিন কেও। শত্রুরা বুজতে ভুল করেনি যে তাজউদ্দিন অন্ধকারে, আবার আলোহয়ে পথকরে নেবেন। তাইতো তাজউদ্দীন কেও তারা ছেড়ে দেয় নাই, নেত্রী তখন বাংলাদেশে নিষিদ্ধ।
এক অনিশ্চিত, কষ্টকর জীবন যাপন করছেন। কেউ ভাবেনি তিনিই একদিন আল্লাহর ইচ্ছায় আবার এইদেশে তার পিতার পতাকা বহন করবেন এবং একজন বিশ্ব নেতায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। আজ আবার যখন চারদিকে নাগীনীরা ফেলিতেছে বিশাক্ত নিশ্বাস তখন ভয় হয়, আবার’না, বিপর্যয় নেমে আসে ? হাজারো তাজউদ্দীন আজ উপেক্ষায়, অভিমানে জর্জরিত হয়ে প্রিয় দলের সর্বনাশ দেখে বুকে পাথর চাপা দিয়ে বসে আছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের হাজারো অর্জন তাই দেশ দেখতে পায় না, কেবল উন্নয়নই জনগণের প্রশান্তি দেয় না, আইনের শাসন অনুপস্থিত থাকলে মানুষ সেটা মেনে নেয় না, সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত না নিতে পারলে কি হয় বঙ্গবন্ধু জীবন দিয়ে প্রমান রেখে গেছেন।
পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিএনপি আন্দোলনের যে দাবানল জ্বেলেছিল, আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের তা দিশেহারা করে দিয়েছিল। হাইব্রিড কাউয়ারা তখন রণেভঙ্গ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, কেউ কেউ। আর জনগণ দেখেছিল বিএনপি’র উল্লাস। তারা ধরেই নিয়েছিল আওয়ামীলীগের পতন সময় সাপেক্ষ্য ! শুরু হয়ে যায় আন্দোলনের নামে বিএনপির চাঁদাবাজি, হুংকার। যা জনগণকে আতঙ্কিত করে তোলে। তারা (বিএনপি) অনেক ভুলের পুনরাবৃত্তি করেছিল, তাই তাদের উপর জনগণ সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়। তাদের আন্দোলন ব্যার্থ হয়। ফলশ্রুতিতে পুনরায় তাদের পরাজয়। ফলে যা হবার তাই হল, আওয়ামীলীগ পুনরায় ক্ষমতায়। এটা শেখ হাসিনার একক কৃতিত্ব, দলের ক্ষমতায় আরোহন।
দলকে ক্ষমতায় রাখার কৃতিত্ব শেখ হাসিনার একার। আর সুবিধায় দলের ক্ষমতালোভী অপরিণামদর্শী একদল নেতাকর্মী। এরা দীর্ঘদিন ক্ষমতার হালুয়া-রুটি খেয়ে এতটাই ফুলে-ফেপে উঠেছে যে, এদের অহংকার আকাশ ছুয়েছে। দেখা দিয়েছে বিশৃংখলা, কেউ কাউকে মানছেনা। এর জন্য মনে হয় এক গভীর অন্ধকার অপেক্ষা করছে। ভাবনায় দলপ্রেমিক হাজারো-লাখো অবহেলিত নেতাকর্মীরা।
আদর্শহীন চাটুকাররা নিজের লাভের হিসাব করে নেয়, নেতা বা দলের নয়। অযোগ্য লোকদের জন্য ইতিহাস প্রবাদ মানুষও, খলনায়ক হয়ে অভিশাপ কুড়ায়। অনেক গৌরবউজ্জল ভূমিকাও কালিমালিপ্ত হয়ে যায়। অতএব সাধু সাবধান।

 

লেখক : বীরমুক্তিযোদ্ধা মাহাবুবুল আলম নীরব মোল্লাহ

কালিনাথ রায়ের বাজার, ভোলা।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।