২১ আগস্ট এর গণহত্যা ও ষড়যন্ত্র

আগস্ট মাস শোকের মাস। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে গণহত্যা কান্ড, আরো একটি শোকাবহ দিন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হাজার বছরে শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক-কে স্বপরিবারে হত্যা করার একই ধারাবাহিকতায় খুনি জিয়ার উত্তরশুরী, খালেদা, তারেক জিয়ার ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের প্রত্যক্ষ মদদে ২১ শে আগস্ট এই পৈচাচিক হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়। এই হত্যাকান্ডের মুল লক্ষ ছিল জাতির জনক এর সুযোগ্য কন্যা তৎকালীন বিরোধী দলের নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সহ আওয়ামীলীগ এর জাতীয় ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে যুদ্ধে ব্যবহৃত গেনেড হামলার মাধ্যমে নিচিহ্ন করে ফেলা। সৌভাগ্যক্রমে জননেত্রী শেখ হাসিনা আহত হয়েও অলৌকিক ভাবে বেঁচে যান।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু-কে স্বপরিবারে হত্যা করেও ষড়যন্ত্রকারীরা নিশ্চিত না হতে পেরে জেল অভ্যন্তরে বঙ্গবন্ধুর চার রাজনৈতিক সহকর্মী জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেও আওয়ামীলীগকে নেতৃত্ব শূণ্য করতে পারে নাই। কারণ বঙ্গবন্ধুর রক্তের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ষড়যন্ত্রকারীদের সর্বশেষ টার্গেট। তাকে হত্যা করতে না পারলে আওয়ামীলীগকে নেতৃত্ব শূণ্য করা যাবে না। জননেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড হামলা সহ ২১ বার হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। সৌভাগ্যক্রমে আল্লাহ পাকের অসীম রহমতে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। জননেত্রী শেখ হাসিনা আল্লাহ পাকের তরফ থেকে জনগণের কল্যাণ এর জন্য রহমত স্বরুপ হিসাবে বেঁচে আছেন। এই হামলায় আওয়ামীলীগ জাতীয় নেতা প্রাক্তণ রাষ্ট্রপতি জিল্লু রহমান এর সহধর্মীনি, মহিলা আওয়ামীলীগ এর সভানেত্রী বেগম আইভী রহমান সহ ২৪ জন নিহত হন এবং শতাধিক আওয়ামীলীগ জাতীয় ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ মারাত্মক ভাবে আহত হন।
এই হামলার মুল পরিকল্পনা হয়েছিল তারেক জিয়ার ষড়যন্ত্রের আড্ডাখানা হাওয়া ভবনে। মুলত: খালেদা জিয়াও এই দায় এড়াতে পারেন না। তিনি প্রধানমন্ত্রী তার মন্ত্রী পরিষদের সদস্য স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান রহমান বাবর, তার ছেলে তারেক জিয়া, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিস চৌধুরী সহ প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্কার কর্মকর্তাবৃন্দ এই হত্যাকান্ডের নীল নকশাকারী।
হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত মুফতি হান্নান গ্রেফতার হয়ে ১৬৪ ধারায় আদালতে জবান বন্দিতে বলেন, ২০০৪ সালে আগস্ট মাসে সিলেটে গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদে ঢাকার কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ অফিস এর সামনে জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতিবাদ সমাবেশের কথা জানতে পারেন। সেখানে শেখ হাসিনাও আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের উপর গ্রেনেড হামলায় চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হাওয়া ভবনে বসে গ্রহণ করে। সেই বৈঠকে তারেক জিয়া ও রাষ্ট্র তন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিস চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, ডি.জি.এফ.আই চীপ বিগ্রেডিয়ার জেনারেল রেজ্জাফুল হায়দার, বিগ্রেডিয়ার আঃ রহিম উপস্থিত ছিলেন। এক কথায় বলা যায় ৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির জনক-কে স্বপরিবারে হত্যা করা সহ ৩ রা নভেম্বর একই চক্রের ষড়যন্ত্রে চার জাতীয় নেতা হত্যার ধারাবাহিকতা অংশ হিসাবে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস হিসাবে আখ্যায়িত করা যায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করার জন্য জিয়া ক্ষমতায় এসে একই ভাবে সেনা বাহিনীর ১১৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা অফিসার ও জোয়ানকে ফায়ারিং স্কয়ার্ড ও ফাঁসিতে ঝুলিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করেন। জিয়া ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ রাখার জন্য জঘন্য ইনডেমোনেটি বিল পাশ করেন। আমরা জানি কোন হত্যা বিচারই তামাদি হয় না। প্রমাণ স্বরুপ বলা যায় জাতির পিতা হত্যা কান্ডের দীর্ঘ ২৩ বছর ২ মাস পর জাতির পিতার হত্যার বিচার সম্পন্ন হয়েছে।
এই একই চক্র জিয়া পরিবার ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সহ আওয়ামীলীগকে নেতৃত্ব শূণ্য করার চেষ্টা চালায়। ২০০৫ এর ১৭ই আগষ্ট পুনরায় খালেদা জিয়া সরকারে প্রশ্রয় ও মদদে সারাদেশ জঙ্গিদের মাধ্যমে সারাদেশে ৫০০ স্পটে একযোগে বোমা হামলা চালায়। ২১ গ্রেন্ডে মামলা নিয়ে বি.এন.পি খালেদা জিয়া সরকার এর আমলে নানা তাল বাহানা করা হয়। জজ মিয়া নামক একজন সাধারণ মানুষকে ভূয়া আসামী সাজিয়ে জজ মিয়া নাটক সাজানো হয়। অবশেষে ১৪ বছর পর ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর এই মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। এই মামলায় রায়ে আদালত ১৯ আসামীকে মৃত্যুদন্ড এবং ১৯ জনকে যাবৎ জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়। তার মধ্যে খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক জিয়া, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিস চৌধুরী রয়েছেন। এছাড়া পুলিশ এর সাবেক আই.জি. আশরাফুল হুদা, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ড কমান্ডার অব: সাইফুল ইসলাম ডিউক সহ পুলিশের উদ্ধর্তন কর্মকর্তা ও সামরিক কর্মকর্তাদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড প্রদান করা হয়।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় বাংলাদেশের বিচারিক ইতিহাসে একটি মাইল ফলক হয়ে থাকবে। রায়টি পর্যালোচনায় যদি এমনটি থাকতো তৎকালীন ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও বি.এন.পি বাংলাদেশের রাজনীতিতে সম্পূর্ণভাবে অযোগ্য নিষিদ্ধ ও গণতন্ত্রের হত্যাকারী হিসাবে তাদের রাজনীতি করার অধিকার থেকে অযোগ্য ঘোষণা করা গেল। তা হলে বাংলাদেশের গনতন্ত্রের ধারাবাহিকতা আরো জোড়দার ও শক্তিশালী হতো। হত্যা ও খুনের রাজনীতি চিরতরে বন্ধ হয়ে যেত। এই ব্যাপারে জাতিয় সংসদে একটি বিল আনা একান্ত জরুরী ছিল। কারণ এই স্বাধীনতা বিরোধী চক্রটি বার বার একই কায়দায় হত্যা, সন্ত্রাস, চালিয়ে যাচ্ছে, তাদেরকে বাধাগ্রস্ত করা যেত।
এ পর্যন্ত ২২ বার সারাদেশের মানুষ এর শেষ আশা ভরসার স্থল জননেত্রী শেখ হাসিনা-কে হত্যা করার চক্রান্ত করেছে এবং তা এখনো অব্যাহত আছে। এই মামলার একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামী কি করে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নিয়োজিত রাজনৈতিক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হয়। আমাদের আইন প্রনেতারা ও রাষ্ট্রীয় নির্বাচন কমিশন কি করে এর স্বীকৃতি দিলেন। এর জন্য আইনের ফাঁক-ফোকর থাকলেও সংসদে সুধরে নিয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত। আমাদের এই দুর্বলতার কারণে লন্ডনে বসে তারেক জিয়া একের পর এক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও সন্ত্রাসীদের মদদ প্রদান করে যাচ্ছে। ২১ এর গ্রেনেড হামলার বিচারিক রায় এর নিরিখে রাষ্ট্রীয় মদদে পৃষ্ট পোষকতায় সন্ত্রাসের বিষয়টি উন্মেচিত করেছে। কাজেই এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মদদ দাতাদেরকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করার আইন পাশ করা হউক এটাই আমাদের শপথ।

লেখক : ফজলুল কাদের মজনু
সভাপতি
ভোলা জেলা আওয়ামীলীগ।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।