বাংলার মানুষ এর হৃদয় জুড়ে “বঙ্গবন্ধু”

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মানে বাংলার হাজার বছরের মহাকাব্য। বঙ্গবন্ধু মানে এক আজন্ম সংগ্রামী প্রজন্ম, সাংগাঠনিক প্রতিভা, চিরন্তর দেশ প্রেম সমুজ্জল এক মহান নেতা। বাংলার স্বাধীনতার চুড়ান্ত আবেগে উচ্ছল একম মহান সংগ্রামী মহাপুরুষ, বঙ্গবন্ধু মানে জীবনের সমারোহ, মানবিকতার মহিমায় উজ্জ্বল এক মহান ব্যক্তিত্ব। বঙ্গবন্ধু-কে নিয়ে এমনি ভাবনা বাংলার আপামর জনগণের। বঙ্গবন্ধু বাংলার জনগণের এক অভিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে সবত্র বিরাজমান। তাকে বাদ দিয়ে সমৃদ্ধ বাঙ্গলার স্বপ্ন ভোলা কল্পনাও করা যায়না। স্বাধীনতা লাভের সাথে সাথে তার সমগ্র চিন্তা ভাবনা ছিল বাংলার মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তোলা নিয়ে। কিন্তু তার সতির্থ সাথীদের মধ্যে অনেক রাজনৈতিক, আমলা, সেনা কর্মকর্তার ক্ষমতার মোহ ও অর্থবিত্তের প্রচন্ড আকাংখ্যা বঙ্গবন্ধু-কে বিচলিত ও বাধাগ্রস্ত করে। স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর পুনাংঙ্গ বক্তিতা বিবৃতি পর্যালোচনা করলেই একজন মহান দেশ প্রেমিক এর ছবি আমাদের মানব পটে ভেসে উঠে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু দীর্ঘ অর্ধ শতাব্দি ধরে দেশের মানুষের মুক্তির জন্য রাজনৈতিক চর্চা করে গেছেন। অতিক্রম করেছেন বিপদ সংকুল বিভিন্ন স্তর। এই দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বঙ্গবন্ধু সানিধ্যে এসে ছিলেন ভারতবর্ষের মহান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মহাত্মাগান্ধী, নেতাজী সুভাশ চন্দ্র বোশ, মরহুম হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হক সহ অসংখ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে। তাদের সনিধ্যে থেকে নিজেকে শানিত করেছিলেন ভবিষ্যৎ রাজনীতির লক্ষ্যে। চল্লিশ এর দশকে কোলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত তার তীক্ষ্ম রাজনৈতিক গভীরতা লক্ষ্য করা যায়। বৃটিশ ভারত থেকে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক চিন্তা চেতনা বাংলার মানুষকে ঘিড়ে আবর্তিত হতে দেখা যায়। বঙ্গবন্ধুর সমগ্র রাজনৈতিক জীবনে কোন দ্বৈতসত্বা লক্ষ্য করা যায় নাই। তিনি তার একক চিন্তা চেতনায় ছিলেন স্থীর। ৫৪ হাজার বর্গ মাইল এর বাংলাদেশকে ঘিরেই ছিল তার স্বপ্ন ও সাধনা। সেই জন্য নিজ পরিবার এর প্রতি তিনি বলতে গেলে ছিলেন উদাসীন। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলতুন্নেছা মুজিবই সমগ্র পরিবারকে আকড়ে রেখে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর পিছনে দৃঢ় ভাবে সাহস যোগিয়েছেন আমৃত্যু পর্যন্ত।
বাংলার রাজনীতিতে সেই স্কুল এর পাঠদান এর সময় থেকেই। বাংলায় খেটে খাওয়া ভূমিহীন থেকে শুরু করে শহরের সর্বহারা মানুষের প্রতি দরদ পরিস্ফুটিত হতে দেখে গেছে। বঙ্গবন্ধু পিতার গোলাঘর থেকে চাউল, ধান নিয়ে বিলিয়ে দিতে দেখা গেছে গ্রামের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ এর মাঝে। বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনে কোলকাতায় থাকাকালিন নেতাজী সুভাষ চন্দ্র এর সাথে একাত্ম হয়ে হলওয়েল মুভমেন্ট অপসারনের আন্দোলনে শরিক হন। ৪৭ এর সামপ্রদায়িক দাঙ্গায় বঙ্গবন্ধুকে দেখা গেছে ভয়ভীতি হীন এক অকুতভয় সৈনিক হিসাবে নেতা সোহরাওয়ার্দীর পাশে থেকে দাঙ্গা পিড়িত মানুষ এর পাশে থেকে তার চিন্তুা চেতনায় এসেছিল আমুল পরিবর্তন। যা পরবর্তীতে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক ও সমাজ গঠনে লক্ষ লক্ষ গ্রামবাসীকে যতটা অনুপ্রনিত করেছিলেন তা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে অনুভুত হয়েছিল। তিনি নিজের অজান্তেই কাজ করেছেন বাংলার হিন্দু, মুসলমান সকল ধর্ম সম্প্রদায়ের সাথে শান্তি গণতন্ত্রের সংযোগকারী হিসাবে। বাংলার মানুষকে স্বাধীনতার চেতনায় গড়ে তোলার জন্য নিবস্ত্র হয়েও বীরের মতো বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়েছেন বার বার। বঙ্গবন্ধু সব সময় গণতান্ত্রিক সমাজবাদে বিশ্বাস করতেন বঙ্গবন্ধু তার লেখা নিজের আত্মজীবনীতে এ সম্পর্কে লিখে গেছেন। একজন মানুষ হিসাবে সমগ্র মানবজাতী নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙ্গালী হিসেবে বা কিছু বাঙ্গালীদের সাথে সম্পৃক্ত তাই আমাকে গভীর ভাবে ভাবায়। এই নিরন্তর সম্পত্তির উৎস্য হলো ভালোবাসা, অক্ষয় ভালোবাসা, যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে। বঙ্গবন্ধু তার সারা জীবনের চিন্তা চেতনা ছিল বাঙলার দুঃখি মানুষকে ঘিরে। কিন্তু বাংলাদেশের সামাজিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট কোন সময়ই মধুর ছিলনা।
দুর্ভিক্ষ, রোগ বালাই, শোষণ-নীপিড়ন বিভিন্ন শাসন আমলে লেগেই ছিল। এই জন্যই বঙ্গবন্ধু মনোজগতে সর্ব সময় কাজ করতো বাঙ্গলার সার্বিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক মুক্তির চিন্তা। পঞ্চাশ দশকে বঙ্গন্ধুর চীন সফরকালীন তার লেখা বই, আমার দেখা নয়া চীন বইতে দেখি চীনের সমাজ ব্যবস্থায় অর্থনৈতিক মুক্তি প্রচেষ্টায় তাদের নিরলশ প্রচেষ্টা সম্পর্কে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখা ও বিশ্লেষণে বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরেছেন। রাজনীতির মাঠে জনগণের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ঘুরে বঙ্গবন্ধু ছায়া সুনিবিড়, শান্তির নীড়, ছোট ছোট গ্রামগুলির জনগণের চেহারা অবলোকন করেছেন প্রতিনিয়ত। নিজ দেশের গ্রামের প্রতিচ্ছবি যেমন বঙ্গবন্ধুকে আকৃষ্ট করতো, চীন সফরে ট্রেনের কমপার্টমেন্টে বসে মিলিয়ে দেখায় চেষ্টা করেছেন চীন এর গ্রাম ও জনপদগুলিকে বাংলাদেশের গ্রামের সাথে।
পাকিস্তান শাসক গোষ্ঠির শোষণ-নিপিড়ণ বঙ্গবন্ধুকে কাঁদাতো, তাই তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধপরবর্তী রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণ করে বিধ্বস্ত অর্থনীতি পুন:গঠনের ক্ষেত্রে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। জাতীয় সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে তিনি চেয়ে ছিলেন গৃহীত রাষ্ট্রীয় মূলনীতির মাধ্যমে বাংলার জনগণের নিউক্লিথাসকে দ্রুত কাজে লাগাতে। কিন্তু বাংলার রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তের আত্মকেন্দ্রিক চিন্তা চেতনার কাছে বার বার হোচট খাচ্ছিলেন। রাজনৈতিক, আমলা, ব্যবসায়ী সবাই যেন এক যোগে দ্রুত অর্থ বিত্তের মালিক হওয়ার জন্য পিছনের দরজা দিয়ে উতলা হয়ে উঠলো। যেন তাদের আর তর সইতে ছিলনা। এমতাবস্থায় তাদের রাশ টেনে ধরার জন্য বাকশাল গঠনের মাধ্যমে রাষ্ট্রিয় ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিতে চেয়ে ছিলেন। কিন্তু সম্রাজ্যবাদ, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি, কায়েমি স্বার্থবাদ চক্র বঙ্গবন্ধুকে বাঁচতে দেয় নাই। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট তাকে স্বপরিবারে হত্যা করলো। ইতিহাসে যা এক পৈচাশিক নারকিয় হত্যাকান্ড হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বাধীনতার চেতনা ও মূল্যবোধকে নির্বাসিত করে, জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামকে পিছিয়ে দিলো। মোস্তাক, জিয়া, এরশাদ, খালেদা হয়ে উঠলেন উচ্চাবিলাসি লুটপাট চক্রের ধারক ও বাহক। পিছিয়ে গেল দেশ তাদের ২১ বছরের শাসন আমলে। তাদের হাতে গড়ে উঠলো সুবিধাভোগী নব্য বুদ্ধিজীবি চক্র। তারা একযোগে সার্টিফিকেট দিতে লাগলো- জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া চক্রকে। এর থেকে বের হয়ে আসার জন্য প্রয়োজন হয়ে পড়লো যোগ্য দেশেপ্রেমিক নেতৃত্বের।
১৯৮১ সনের আওয়ামীলীগ কেন্দ্রিয় কাউন্সিলে তাই বঙ্গবন্ধুর রক্তের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সভাপতি নির্বাচিত করে দল ও দেশের দায়িত্বভার অর্পন করা হলো। সেই থেকে বঙ্গবন্ধুর রক্তের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার, সফল রাষ্ট্র নায়ক জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে সমৃদ্ধির পথে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার লক্ষে।

লেখক : ফজলুল কাদের মজনু
সভাপতি
ভোলা জেলা আওয়ামী লীগ।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।