বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)-র নিয়মিত নৃত্য শিল্পী হিসেবে চূড়ান্ত তালিকাভুক্ত হয়েছেন সাইফুল

মধুপুর সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নৃত্যাঙ্গনের একজন প্রিয়মুখ সাইফুল ইসলাম । একজন মূলধারার নৃত্যশিল্পী, নৃত্যশিক্ষক ও কোরিওগ্রাফার হিসাবে দীর্ঘদিন ১০ বছর ধরে নিরলস কাজ করে চলেছেন নৃত্যের প্রচার, প্রসার ও বিকাশে। নিজেকে উজার করে দিয়েছেন নৃত্যের প্রতি ভলোবাসায়। আজ তার কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)’র নিয়মিত নৃত্যশিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন।

মুঠো ফোনে জানান “ আমি খুব আনন্দিত ও গর্বিত । আমি একজন নৃত্যশিল্পী, আর নৃত্যশিল্পই আমার নেশাপাশাপাশি পড়াশোনা তো আছেই । সফলতা ব্যাপারটি বড়ই আপেক্ষিক। সফলতার আদৌ কোনো মাপকাঠি নেই। তবে বিশ্বাস করি, পরিশ্রম করলে সফলতা আসবেই।”

মধুপুর উত্তরা আবাসিক এলাকা পৌরসভা ৫ নং ওয়ার্ডে সাইফুল ইসলামের বাসা। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে সে সবার ছোট। বর্তমানে ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজে অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্র।

সাইফুলের নাচ শেখার শুরুটা হয়েছিল বেশ প্রতিকূল পরিবেশে। সারা গ্রামে ছেলে তো দূরে, একটা মেয়েও তখন নাচ করতো না। কিন্তু নাচের প্রতি তার আগ্রহ তৈরী হয়েছিল বিটিভিতে নাচের অনুষ্ঠান দেখে।২০০৮ সালে মধুপুর রানী ভবানী মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নৃত্য প্রদর্শন করেন সুধী মহলের আলোচনায় ও প্রশংসায় ভূষিত হন ।

তার ইচ্ছায় ২০১২ সাল থেকে ২০১৫ পর্যন্ত নৃত্যপ্রাঙ্গন একাডেমী টাঙ্গাইল থেকে সৃজনশীল ও লোকনৃত্য বিষয়ের উপর চার বছর মেয়াদী সার্টিফিকেট কোর্স কমপ্লিট করেন। ২০১৬ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত জেলা শিল্পকলা একাডেমী ময়মনসিংহে নৃত্যের ওপর চার বছর মেয়াদী সার্টিফিকেট কোর্স কমপ্লিট করেন । এছাড়াও বাংলাদেশের প্রখ্যাত নৃত্যগুরুদের সান্নিধ্য লাভ করেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন বিটিভি সহ বিভিন্ন চ্যানেলে নিয়মিত নৃত্য প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেন। বড় কোনো ডিগ্রি নিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার অদম্য ইচ্ছাশক্তি রয়েছে তার । ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার তো অনেকেই হয়, আমি না হয় একজন নৃত্যশিল্পী হলাম। একসময় নৃত্য শিখেছি মনের তাগিদে। কিন্তু এখন এটাই আমার নেশা ও পেশা।

নৃত্য শিল্পী বলতেই সবার চোখে প্রথমে একজন মেয়ের ইমেজ চলে আসে।পুরুষ হিসাবে নাচ শেখাকে কিভাবে দেখেন? সাইফুল তার উত্তরে জানান- সত্য বলতে এখনো পুরুষের নাচ শেখাটাকে সবাই ইতিবাচক হিসেবে দেখে না। কারণ পুরুষের নাচ আমাদের দেশে সমাদৃত নয়।শিবলী মোহাম্মদ স্যার সেই বেড়াজাল ভেঙে দেখিয়েছেন। তিনি আমাদের পথ প্রদশর্ক।ছেলেরা আবার নাচ করে নাকি? এমন পুরনো বাক্য বহুবার উচ্চারিত হয়েছে এদেশের পুরুষ নৃত্যশিল্পীদের প্রতি। যারা এই ধরণের কটাক্ষকে পাত্তা না দিয়ে নিজের কাজটাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন তারাই নাচের ইতিহাসে নিজের নাম লেখাতে পেরেছেন।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় জানতে চাইলে তিনি বলেন। আমি একজন সফল নৃত্যশিল্পী তাই আমি চাইবো সবসময় সাংস্কৃতিক অঙ্গন টা একটু ভর পুর রাখতে। দক্ষ দক্ষ শিল্পী তৈরি করতে যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আরো ভালো কিছু প্রেজেন্ট করতে পারে। যখন আমরা থাকবো না তখন হয়তো তারাই এই অঙ্গন টাকে ধরে রাখবে। এই প্রচেষ্টা নিয়ে আমি মধুপুর সহ বিভিন্ন উপজেলায় এবং গ্রামগঞ্জে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। যাতে সুস্থ ধারার সংস্কৃতি সব জায়গায় বিচরন করে। আমার ভবিষ্যৎ ইচ্ছা আমি মধুপুর একটি সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট করবো যেখানে শিশুরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে দক্ষ শিল্পী তে পরিণত হবে।

সাইফুল ইসলাম মধুপুর নৃত্যাঙ্গন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক হিসেবে ২০১০ সাল থেকে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন ।নৃত্য প্রশিক্ষক , উপজেলা শিল্পকলা একাডেমী ধনবাড়ী।নৃত্য প্রশিক্ষক উদিচী ঘাটাইল । সভাপতি বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা মধুপুর উপজেলা শাখা এবং নৃত্য প্রশিক্ষক উইজডম ভ্যালি ।নৃত্য প্রশিক্ষক মুমুশিল্পাঙ্গন মুক্তাগাছায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)-র নিয়মিত নৃত্য শিল্পী হিসেবে চূড়ান্ত তালিকাভুক্ত হওয়ায় মো: সাইফুল ইসলামকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচছা জানিয়েছেন মধুপুর বাসী।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।