ঘূর্ণীঝড় ইয়াস

ঘূর্ণীঝড় আতংকে মনপুরা উপকূলের দেড় লক্ষ বাসিন্দা

মেঘনা ও বঙ্গোপসাগর মোহনায় ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরা। চারটি ইউনিয়ন ও ছোট-বড় ১০ টি চর নিয়ে এই উপকূলে দেড় লক্ষ মানুষের বসবাস। প্রতিনিয়ত দুর্যোগ ও ঘূর্ণীঝড়ের সাথে মোকাবেলা করে বসবাস করে এখানারকার বাসিন্দারা। স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত এই দ্বীপে আজও ঘূর্ণীঝড় কিংবা প্রাকৃতি দুর্যোগ মোকাবেলায় গড়ে ওঠেনি পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র। তাই ঘূর্ণীঝড়ের পূর্বাভাস পেলেই আঁতকে উঠেন স্থানীয়রা। তবে এই সরকারের আমলে স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের প্রচেষ্টায় অল্প সংখ্যক সাইক্লোন সেন্টার ও সাইক্লোন সেন্টার কাম স্কুল ভবন নির্মান হলেও উপকূলের মানুষের দূর্যোগ মোকাবেলায় অপ্রতুল। তাই যে কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলায় ও ঘূর্ণীঝড়ে প্রাণহানি থেকে এই দ্বীপের বাসিন্দা ও গৃহপালিত পশু-পাখিদের রক্ষা করতে সাইক্লোন সেন্টার ও মাটির কিল্লা নির্মানের দাবী স্থানীয়দের।

* বেড়ীবাঁধহীন অরক্ষিত চরাঞ্চলের ৩০ হাজার মানুষ
* গত ৫০ বছরে দুর্যোগে ৩০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি
* সাইক্লোন সেন্টার ও বেড়ীবাঁধ নির্মানের দাবী

এদিকে বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপের আরেকটি বিচ্ছিন্ন অংশ চর কলাতলী। যেখানে প্রায় ২০ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস। তবে বেড়ীবাঁধ নেই। বেড়ীবাঁধহীন এই চরে মেঘনার পানি একটু বৃদ্ধি পেলেই ৩-৪ ফুট জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। শুধু চর কলাতলী নয় চরনিজাম, কাজিরচর, মহাজনকান্দি, ঢালচর সহ এই রকম বিচ্ছিন্ন আরো ১০ টি চরে আনুমানিক ৩০ হাজারের বেশি মানুষ বসবাস করে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা ঘূর্ণীঝড় আঘাত হানলে এই দ্বীপ উপকূলে আশ্রয়কেন্দ্রের অভাবে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি আশংকা স্থানীয়দের।
পরিসংখ্যান সূত্রে জানা যায়, ১৯৭০ সালে ঘূর্ণীঝড় গোর্কির (যা ভোলা সাইক্লোন নামে পরিচিত) আঘাতে তখনকার সময়ে বেড়ীবাঁধহীন মনপুরায় আশ্রয়কেন্দ্রের অভাবে ৩০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। বন্যার পানিতে ভেসে যায় প্রায় লক্ষাধিকের উপরে গৃহপালিত পশু-পাখি। এরপর ১৯৯১ এর সালে ঘূর্ণীঝড়, সিডর, আইলা, নার্গিস ও আম্পান সহ সব ঘূর্ণীঝড়ে এই উপকূলে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমানটা একটু বেশি।
উপজেলা এলজিইডি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলা এলজিইডি ৩৬ টি স্কুল কাম সাইক্লোন সেন্টার, এনজিও কারিতাস ১২ টি, রেড ক্রিসেন্টের অর্থায়নে ৭ টি ও ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অর্থয়ানে ৪ টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ৩ টি মাটির কিল্লা নির্মান করা হয়। এছাড়াও সরকারী-বেসরকারী ভবন সহ আশ্রয়কেন্দ্রে সবমিলিয়ে ৫০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। তবে দুর্যোগ আঘাত হানলে আশ্রয় নিতে না পারা লক্ষাধিক মানুষের প্রাণহানির আশংকা স্থানীয়দের।


এ ব্যাপারে বিচ্ছিন্ন কলাতলীর চরের বাসিন্দা সামাদ, আরজু, শমসের, কালাম, রসিদ, কামাল, হাসনা, রফিজল, রাসেদসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, ঘূর্ণীঝড়ের কথা জানতে পারলে আঁতকে উঠি। আশ্রয়কেন্দ্র যাই না জায়গা হয়না, তাই ঘরের মধ্যে থাইকা আল্লারে ডাকি। চরে বেড়ীবাঁধ সহ আরো আশ্রয়কেন্দ্রে নির্মানের দাবী করেন চরবাসী। একই দাবী করেন মনপুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমানত উল্লা আলমগীর, কলাতলী চরের ইউপি সদস্য আবদুর রহমান ও আমিন।
মনপুরা উপকূলের মূল ভূ-খন্ডে জনসংখ্যার আনুপাতিকহারে নতুন আশ্রয়কেন্দ্র নির্মানের দাবী করেন হাজিরহাট ইউপি চেয়ারম্যান শাহরিয়ার চৌধুরী দীপক, হাজিরহাট সরকারী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আলমগীর হোসেন। ঘূর্ণীঝড় আঘাত হানলে আশ্রয়কেন্দ্রে অভাবে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির আশংকা করছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ ইলিয়াছ মিয়া জানান, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের ৩ টি সাইক্লোন সেন্টার নির্মানের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শামীম মিঞা জানান, বিচ্ছিন্ন উপকূল মনপুরায় জনসংখ্যার তুলনায় আশ্রয়কেন্দ্র অপ্রতুল। আরোও নতুন আশ্রয়কেন্দ্র নির্মানের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বিচ্ছিন্ন চরকলাতীতে বেড়ীবাঁধ নির্মানে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।