ভোলা ওয়াপদা’র অস্থায়ী কম্পিউটার অপারেটর মোঃ ইউনুসের খুটির জোড় কোথায় ?

ভোলা ওয়াপদায় অস্থায়ী ভিত্তিতে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে মোঃ ইউনুস কাজ করছেন। বিনা ভাড়ায় থাকেন অফিসের কলোনিতে আর খাওয়া-দাওয়া করেন রেস্টহাউজে। এ অফিসের ৩ জন কম্পিউটার অপারেটর থাকা সত্ত্বেও তার কাছে নগদ টাকায় কাজ করতে হচ্ছে। এমনকি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিসিয়াল কাজ করার জন্য সিরিয়াল ম্যানটেন করতে হয়। অফিস চলাকালীন সময় ব্যতিত কম্পিউটার ব্যবহার না করার কথা থাকলেও তিনি গভীর রাত পর্যন্ত কম্পিউটার, কাগজ-কালি ব্যবহার করে ঠিকাদারদের কাজ করে আসছেন এবং তার অত্যাচার ও খারাপ আচরণের কারণে এ অফিসের বেশ কয়েকজন স্টাফ অনত্র চলে যেতে হয়েছে এমন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অস্থায়ী কম্পিউটার অপারেটর হওয়া সত্ত্বেও কিভাবে ইউনুছ এসব কাজ করছেন ? তার ক্ষমতার জোড় কোথায় ? তা  নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, ম্যান অব কুমিল্লা খ্যাত মোঃ ইউনুছ কম্পিউটার অপারেটর হিসাবে দীর্ঘদিন যাবত মাসিক ৫ হাজার টাকা বেতনে অস্থায়ীভাবে ভোলা পওর বিভাগ-১ কাজ করে আসছে। অফিস কলনীতে দীর্ঘদিন যাবত বিনা ভাড়ায় থাকেন ও রেষ্টহাউজে খাওয়া-দাওয়া করেন। অফিসে তিন জন কম্পিউটর অপারেটর থাকা সত্ত্বেও বহিরাগত লোক দিয়ে কম্পিউটার অপারেটরের কাজ নগদ টাকায় করা হয়। এমনকি অফিসে জনবল থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন টেন্ডারের সিএসএ স্বাক্ষর করানোর জন্য মোঃ ইউনুছকে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিকট পাঠানো হয়। তার নিকট বিভিন্ন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অফিসিয়াল কাজ করার জন্য সিরিয়াল ম্যানটেন করতে হয় এবং হয়রানী হতে হয়। সে একা একা বসে রাত ১২টা ১.০০ টা পর্যন্ত অফিসের কম্পিউটার কাগজ-কালি ব্যবহার করে ঠিকাদারদের কাজ করে আসছে দীর্ঘদিন। নিজেও অফিস মেরামতের বিভিন্ন কাজ ও অফিসের দরজা জানালা যাবতীয় ফার্নিচার বিভিন্ন নামে সরবরাহ করে আসছে।
সূতে জানা গেছে, স্থানীয় কিছু ঠিকাদারদের সাথে সক্ষ্যতা বজায় রেখে এমনকি সে জিও-ব্যাগ সাপ্লাই, জিও-টেক্সটাইল ও জিও-ব্যাগ সিলাই সুতার ব্যবসা করে আসেছ। এ ব্যবাপারে অফিসের কিছু শাখা কর্মকর্তা সহযোগীতা করেন। এ নিয়ে স্থানীয় ঠিকাদারদের ক্ষোভ ও অভিযোগ উঠেছে। অফিসের চাবি থাকে একজন বহিরাগত লোকের কাছে। কে এই বহিরাগত লোক, কি তার পরিচয়, কি তার পদবী, তার খুটির জোড় কোথায় ? ভোলার ওয়াপদা’র কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ ভোলার জনগন তা জানতে চায়।
সূত্রে আরো জানা গেছে, ওই কম্পিউটার অপারেটর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রব মিঞা ভোলা পওর বিভাগ-১ দায়িত্ত্বে থাকা অবস্থায় তাকে অফিস থেকে চলে যেতে বললে সে কম্পিউটারের সম্পূর্ন ডকুমেন্ট ডিলেট করে দেয়। পরবর্তিতে নির্বাহীর পা ধরে মাপ চায় এবং চাকুরী নাই বিধায় মানবিক কারনে তাকে রাখা হয়। সে ইমাজেন্সী কাজে প্রত্যেক গ্রুপে ষ্ট্যাম্প লেখা বাবদ ৩ হাজার টাকা করে নিয়ে থাকে। ওয়ার্ক অর্ডার ও টাইম এক্সটেনশনের কাগজপত্র ঠিক করার জন্য সে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন। প্রতিটি বিল প্রস্তুত বাবদ ১ হাজার টাকা করে নিয়ে থাকেন। স্থায়ী দুইজন কম্পিউটার অপারেটরকে টাকার কাজ করার কোন সুযোগ দেয়না। এভাবে সে এসও সাহেবদের সাথে সক্ষ্যতা বজায় রেখে চলেন। এসব অনিয়মের কারনে তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী জনাব মাহফুজুর রহমান মোঃ ইউনুছকে চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে অফিস ও কলোনী ত্যাগ করার নির্দেশ প্রদান করেন এবং অফিস থেকে বেরকরে দেন। পরবর্তীতে স্থানীয় ঠিকাদার ও সিবিএ কর্মকর্তাদের হাত পা ধরে ১৫ দিন পরে পুনরায় অফিসে কাজ শুরু করে। সে স্থানীয় পর্যায়ে এবং অফিসারদের মধ্যে সক্ষ্যতা বজায় রেখে একটি সেন্ডিকেট গড়ে তুলেন। সে ভোলার বাহিরের ও স্থানীয় বিভিন্ন ঠিকাদারদের সাথে পার্টনার হিসাবে কাজ করে আসছে। কম্পিউটার শাখার একটি কম্পিউটার গত ২৯-০৬-২০২০ ইং তারিখ চুরি হয়েছে। এদিকে অফিসের সকল কম্পিউটার চুরি হলেও এ যাবতকালে ইউনুছ এর ব্যবহৃত কম্পিউটারটি চুরি হয় না। যা একটি ভাবনার বিষয়।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, ইউনুছ ওই কম্পিউটারটি সরিয়ে পুরাতন অন্য একটি সিপিও স্থাপন করা হয়। করোনার কারনে নির্বাহীর নির্দেশে অন্য অপারেটরগন অফিসে আসেন না। এই সুযোগে সে উক্ত কম্পিউটারটি সারিয়ে ফেলেন। যাতে অন্য অপারেটররা কাজ করতে না পারেন এবং তার কাছে অফিস জিম্মি হয়ে থাকে। বিগত ২০১৬ সালে, ২০১৮ সালে ২০২০ সালে তিনটি কম্পিউটার চুরি এবং অফিস কলোনীর মসজিদের আইপিএস চুরি হয়েছে বিগত ২০১৯ সলে। কিন্তু কর্মকর্তাগন এই বিষয়ে কোন তৎপরতা এ যাবৎ গ্রহণ করেননি।
ওই অফিসের একাধিক লোকের সাথে আলাপ করে জানা যায়, চুরির সাথে তার হাত আছে। এর বিভিন্ন রকম কারসাজির কারনে কোন স্থায়ী কম্পউটার অপারেটর অফিসে ঠিকমত কাজ করতে পারে না। এমতাবস্থায় একজন বহিরাগত লোকের কাছে অফিস জিম্মি হতে পারে না এমনটা দাবী করছেন সাধারন ঠিকাদাররা। তাকে বেতন না দিলেও সে ভোলায় থাকার ক্ষমতা রাখেন যা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ঠিকাদারদের সাথে দাম্ভিকতার সাথে বলে বেড়ান ইউনুছ। তার এমন আচরণ ও কর্মকান্ডের কারণে এ অফিস থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য সকল কর্মচারী ও ঠিকাদাররা দাবী তুলেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে মোঃ ইউনুছ এর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অফিসে আসেন, তখন আপনার সাথে কথা বলব।
নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান বলেন, আগের ইঞ্জিনিয়ার ইউনুছের ব্যাপারে কি করে গেছেন তা আমি জানি না। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা আমার জানা নেই। লিখিত অভিযোগ পেলে তার ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অফিসের চাবি এখন নির্ধারিত লোকের কাছেই থাকে। কম্পিউটার চুরি হয়েছে, মসজিদের আইপিএসও চুরি হয়েছে ঠিকই, তবে আমি বলেছি এগুলো বের করার জন্য। তা না হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।