প্রাক বাজেট ভাবনা ২০২০-২১ প্রসঙ্গে

মানুষের কল্যাণে ও দেশের উন্নয়নে সরকারের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও ব্যাবস্থাপনার প্রতিফলন এক দলিল হলো জাতীয় বাজেট। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান এর ৮৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রতি বছর সরকারের প্রাক্কলিত আয় ব্যায় এর হিসাব সহ নুতন পরিকল্পনা ও বরাদ্দ স্থীর করা হলো বাজেট।
মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে ভোক্তা চাহিদা ও পন্য সরবরাহের ভারসাম্য বজায় থাকটাই হলো অর্থনীতির মুল চালিকা শক্তি। বাজেট এর মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন এর সুচক পরিমাপ করা হযায়। সেই সাথে প্রবৃদ্ধি অর্জন হলো বাজেটের অন্যতম লক্ষ্য। প্রবৃদ্ধি দেশের জন্য প্রয়োজন, কিন্তু তা যদি ক্রমাগত সম্পদ ও আয়ের বৈশম্য বাড়িয়ে চলে, সেই ক্ষেত্রে সামাজিক ভাবে অচলায়তন সৃষ্টি হতে বাধ্য। কাজেই বাজেট এর প্রণয়ন এর ক্ষেত্রে বাজেট হওয়া উচিৎ সামাজিক ভারসাম্যমূলক সুসম বাজেট। যাতে করে সমাজ এর সকল ক্ষেত্রে একটি ভারসাম্য তৈরী হয়।
কারণ মহামারি সংকটে লকডাউনের ফলে রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে এক অচল অবস্থা তৈরী হয়েছে। শিল্প উৎপাদন, কৃষি, যোগাযোগ, আমদানি-রফতানিসহ সকল ক্ষেত্রে এক অচল অবস্থা চলছে। যার ফলে শুধু আমাদের দেশেই নয়, সমগ্র বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ও অর্থনৈতিক প্রতিকুলতার মাঝে বাজেট এর কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়ন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দারিদ্র বিমোচন ও টেকসই উন্নয়ন এর লক্ষ্যে সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রার ব্যায় সহনশীল রাখা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং কৃষি ও শিল্প খাতের অগ্রগতি অব্যাহত রাখার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ সঠিক দিক নির্দেশনা থাকবে বলে আশার করি।
এছাড়া দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তোলার জন্য কারিগরী ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। আমাদের কৃষির সাথে দুই কোটির ও বেশি নারী-পুরুষ যুক্ত থাকলেও উৎপাদিত কৃষি ফসলের ৬৯ শতাংশ বিপননের বাইরে থেকৈ যাচ্ছে। কৃষি খাতে নিয়োজিত দেশের মোট শ্রম শক্তির ৪৩.৬ শতাংশ এ ক্ষেত্রে কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতিকে শিল্প ভিত্তিক অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য কৌশল নির্ধারন করতে হবে। ব্যাপক কর্মসংস্থান এর দিকে লক্ষ্য রেখে ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্প খাতের উন্নয়নে গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। এর জন্য সরকারী-বেসরকারী বিনিয়োগ এর জন্য আর্থিক মূলধন সরবরাহ বাড়িয়ে দিতে হবে। চ্যালেঞ্জ সমূহ ঃ দেশের বিনিয়োগ পরীস্থিতি স্বাভাবিক ও গতিশীল করতে হলে সুশাসন ও আইন শৃঙ্খলার প্রতি অতিব গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।
রাষ্ট্রীয় সঞ্চয় ও ব্যক্তি সঞ্চয় বারাবার সুযোগ রাখতে হবে। কৃষি পন্যের ন্যায্য মুল্য নিশ্চিত করতে হবে। ক্রটিপূর্ণ বাজার ব্যবস্থা ও পন্য সংরক্ষণ এর সুবিধা না থাকাতে সকল ক্ষেত্রে বাম্পার ফলন এর সুবিধা পাচ্ছে না কৃষক। ক্রেতার অভাবে মাঠের ফসল মাঠেই নষ্ট হচ্ছে। এর জন্য প্রয়োজনীয় হিমাগার ও প্রক্রিয়াকরণ শিল্প এর অভাব অন্যতম কারণ।
বাজেট বাস্তবায়নের জন্য কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। এই মূহুর্তে বাজেট বাস্তবায়নের প্রতিবন্ধকতা হলো : জলবায়ু পরিবর্তন, উতপ্ত হচ্ছে পৃথিবী। পরিবর্তিত হচ্ছে জলবায়ু, ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির অন্যতম হলো বাংলাদেশ।
বর্তমান অর্থনীতির প্রতিবন্ধকতা হলো : করোনা মহামারী প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুর্নীতি। এই সকল সংকটকে কেন্দ্র করে গোটা বিশ্চে খাদ্য পন্যের দাম বাড়ছে প্রতিনিয়ত। সামনে আরো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এর খাদ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার মূল কথাই হচ্ছে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এর জন্য খাধ্য মওজুদ ও প্রত্যাশিত উৎপাদন এর জন্য প্রনোদনা অর্থের যোগান নিশ্চিত করা। করোনা মহামারি সংকটে এবার স্বাস্থ্য চিকিৎসা ক্ষেত্রের অবকাঠামো ও সার্ভিস প্রদান এর দুর্বলতা সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এর জন্য স্বাস্থ্য খাতে অবকাঠামো নির্মাণ সহ চিকিৎসা যন্ত্রপাতি, ডাক্তার সহ জনবল নিয়োগ এর ব্যবস্থা ও অর্থ সংস্থান ব্যাবস্থা রাখতে হবে। জেলা হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ, সিসিইউ, এর ব্যবস্থা রাখার জন্য বরাদ্দ প্রদান করতে হবে। প্রতি ইউনিয়নে একজন করে ডা: নিয়োগ দিতে হবে।
দেশের উৎপাদিত জন্য সামগ্রির সুরক্ষা সহ বাজারজাত নির্বিঘœ করার স্বার্থে বিদেশী পন্যের উপর আতিরিক্ত শুল্কহার নির্ধারণ করতে হবে বা বিধি নিষেধ আরোপ করতে হবে।
কৃষি খাতকে যান্ত্রিকি করণ সহ উৎপাদিত ধান মওজুদ রাখার জন্য জেলায় জেলায় খাদ্য গুদাম ও সাইলো নির্মাণ এর জন্য অতিরিক্ত বরাদ্দ রাখতে হবে। এছাড়া সল্প সুদে অটো-রাইস প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দিতে হবে। সল্প পরিশরে এই প্রস্তাবগুলি বাজেটে অন্তর্ভূক্ত করার দাবী রাখে।

 

ফজলুল কাদের মজনু মোল্লা
সভাপতি
ভোলার জেলা আওয়ামীলীগ।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।