সর্বশেষঃ

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভোলা জেলার সমস্যা নিয়ে টেলিকনফারেন্স প্রসঙ্গে

১২ এপ্রিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ভোলা জেলা প্রশাসন এর হলরুমে সরাসরি গণভবন থেকে টেলিকনফারেন্সে ভোলার সমস্যা নিয়ে বক্তব্য প্রদান অত্যন্ত অনুধাবনযোগ্য ও তাৎপর্যপূর্ণ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে একটি বিষয় ভালোভাবে উপলব্ধি করেছেন ভোলার নদী ভাঙ্গনে গৃহহীন মানুষের সমস্যা সম্পর্কে।
বাংলাদেশের একমাত্র দ্বীপজেলা ভোলা। বাংলাদেশের ৩টি প্রধান নদী পদ্মা, মেঘনা ও বহ্মপুত্রের শাখা-প্রশাখা বিধৌত এই ভোলা দ্বীপ। বঙ্গোপসাগর এর অববাহিকায় ভোলা ছিড়ে অবর্তিত মেঘান ও তেঁতুলিয়ার চেনেল দিয়ে প্রতি বছর বর্ষা মৌসূমে সমগ্র দেশের বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলের পানি তীব্রবেগে প্রবাহিত হয়ে থাকে। যার ফলে প্রতি বছর মেঘনা ও তেঁতুলিয়ায় তীরবর্তী এলাকা তীব্র ভাঙ্গনের মুখে পরে। গৃহহারা হয় হাজার হাজার পরিবার। নদী ভঙ্গনে সহায় সম্ভলহীন হয়ে পরে এক সময়ের অবস্থাসম্পন্ন গৃহস্থ পরিবারগুলি।
১৮৪৫ সালে নোয়াখালি জেলার অধিনে ভোলা মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হয়। যার কেন্দ্র ছিল দৌলতখান এর আমানিয়া। পরবর্তীতে ১৮৬৯ সালে ভোলা মহকুমা বরিশাল জেলার অন্তর্ভূক্ত হয়। মেঘনার তীব্র ভাঙ্গনের ফলে দৌলতখান এর আমানিয়া মহকুমা সদরটি ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে ১৮৭৬ সালে ভোলা মহমুকা সদর দপ্তরটি দৌলতখান থেকে বর্তমান ভোলা সদরে স্থানান্তরিত হয়। অবশ্য পরে ১৯৮৪ সালে ১লা ফেব্রুয়ারী ভোলা জেলায় উন্নিত হয়। ভোলা জেলার মোট আয়তন ৩,৪০৩ বর্গ কিলোমিটার। ৭টি উপজেলা, ৫টি পৌরসভা, ৬৪টি ইউনিয়ন, ৪৮টি ওয়ার্ড, ৪৯০টি মৌজা ও ৪৭৩টি গ্রাম নিয়ে ভোলা জেলা।
ভোলার ৭টি উপজেলাকেই বঙ্গোপসাগর এর তীরবর্তী উপকূলীয় এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতি বছর মেঘান, তেঁতুলিয়ার তীব্র ভাঙ্গনের ফলে জেলার দরিদ্র ও অতি দরিদ্র গৃহস্থালির সংখ্যা যথাক্রমে ৪৪% ও ২৩% হারে বাড়ছে। ভোলা জেলার নদী ভাঙ্গনের কারণে একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ভূমিহীনদের সংখ্যা ৫৫%।
নদী ভাঙ্গন, সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ভোলার প্রধান কয়টি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত। ভোলার প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলির মধ্যে অন্যতম হলো নদী ভাঙ্গন। সাম্প্রতিককালে মেঘনার ভাঙ্গনের আঘাতে তীরবর্তী উচ্চু জমি বাধ ধ্বংস হতে শুরু করেছে। শহর রক্ষা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। প্রতি বছর জেলার ভোলা, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন, লালমোহন উপজেলার ফসল এর মাঠ বন্যা ও ভাঙ্গনের প্রভাবে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বর্তমান ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা, রাজাপুর, তেঁতুলিয়া কুলে ভেদুরিয়া, ভেলুমিয়া, দক্ষিণ দিঘলদী অংশে ভাঙ্গনের প্রবনতা দেখা যাচ্ছে। বোরহানউদ্দিন এলাকার মির্জাকালু, পক্ষিয়া, হাসাননগর, তজুমদ্দিন উপজেলার চাচড়া, সোনাপুর, দৌলতখান উপজেলার সৈয়দপুর ও বড়ধলী, চরফ্যাশন উপজেলার মাদ্রাজ, আসলামপুর, চর কলমি, নীল কমল, আজ ভয়াবহ ভাঙ্গনের হুমকির সম্মুখিন।
ইতিমধ্যে হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। মেঘনা, তেঁতুলিয়া নদীর একদিকে ভাঙ্গন ও প্রবাহিত পলিদ্বারা নতুন নতুন চর জেগে উঠছে। এই সমস্ত চর অঞ্চলে বাহিরের জেলা থেকে জীবিকার তাগিতে মাছ ধরতে আসা লোকজন ও পরিবার এসে আস্তানা নিচ্ছে।
বি.বি.এস ১৯৯৬ এর জরিপ এর সূত্র অনুসারে জেলার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩.৪৮% অর্থ্যাৎ ৫১,৩৭৬ জন ভোলার বাইরে থেকে আগত লোকজন। নদী ভাঙ্গনের কারণে ভীটে-মাটিহীনদের মধ্যে পরিকল্পিতভাবে ভূমি বন্টন করতে এবং নতুন জেগে ওঠা চরে পরিকল্পিত আবাসন আশ্রায়ন গড়ে তোলার কথা বলেছেন জেলা প্রশাসনকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
এই বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি অগ্রাধিকার প্রকল্প। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী টেলিকনফারেন্সে এও বলেছেন যে, কাউকে আশ্রয়হীন রাখা যাবে না। প্রত্যেক এর জন্য নিজস্ব বাসস্থান, নিজস্ব ঠিকানায় একটি করে বাড়ী তৈরী করে দেয়া হবে। এর জন্য চাই নতুন জেগে ওঠা চরের খাস জমির সুষ্ঠ বন্টন ও ব্যবস্থাপনা।

 

লেখক : ফজলুল কাদের মজনু মোল্লা
সভাপতি
ভোলা জেলা আওয়ামীলীগ।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।