সর্বশেষঃ

করোনা ভাইরাস এর প্রেক্ষাপটে ধরনী

পৃথিবীর এখন গভীর, গভীরতর অসুখ। চিনের উহান শহরে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার পর পরই আজ সমগ্র পৃথিবী আক্রান্ত। এই সময়ে কলুষিত বিশাক্ত বাতাস পৃথিবীর শত বছরের ইতিহাসে আর কখনো প্রবাহিত হয়নি। সমগ্র পৃথিবী যেন আজ থমকে দাঁড়িয়ে গেছে। এক সময়ের কোলাহলপূর্ণ শহর জন পদগুলি হঠাৎ যেন খালি হয়ে গেছে। নিউইয়ার্ক এর টাইমস্কোয়ার এক সময় দিনে রাতে সমান তালে মানুষ ওড়ে বেড়াত। প্যারিস এর আইফেল টাওয়ার এসে সারা পৃথিবীর মানুষ জড়ে হতো। পর্যটন রগরি ইটালির ভ্যানিস নগরীতে আজ সেই কোন কোলাহল। কেনেলগুলিতে নেই ঐতিহ্য মন্ডিত বোটগুলি। সেখানে রিথর স্বাদ পানিতে রঙ্গিন মাছগুলি আজ আপন মনে ওড়ে বেড়ায়।
স্পেন এর কার্সিলোনা শহরের স্টেডিয়ামগুলি আজ দর্শক শূন্য। নিউইয়ার্ক এর লিবার্টি অব স্ট্যাচুতে গাংচিল বসে আছে আমপ মনে, নেই কোন জন সমাগম। দিনে রাতে এম্ভুলাসগুলি সাইরেন বাজিয়ে ছুটা ছুটি চলছে সমান তালে। কোলাহলপূর্ণ শহর জন পদগুলি হঠাৎ যেন খালি হয়ে গেছে, নেই কোন কোলাহল, গাড়ির শব্দ, ট্রেনের হুইসেল, বিমান এর প্রপেলার এর বিকট শব্দ। আজ ব্যস্ত শহর জনপদ এর সকল স্তরের মানুষ সকল কোরেনটাইনে চলে গেছে নিজ নিজ বাসগৃহে। এর রকম এক প্রতিকুল পরিবেশে কী এক অস্থীরতার মধ্যে কিশোর, তরুণদের দিন কাটাতে হচ্ছে তা ভাবতে অবাক লাগে।
পৃথিবীব্যাপী লকডাউনে গৃহ বন্দি আজ শুধু মানবকুল, পক্ষান্তরে খালি জনপদে আজ অবাধ স্বাধীনভাবে বিচরণ করে বেড়াচ্ছে জীবজন্তু ও পশুপাখি। তারা জেন আজ ভয়হীন মুক্ত স্বাধীন। প্রকৃতিতে আজ জীবন্ত পশুপাখির মেলা বসেছে। বায়ুদূষণ ধুলোবালিহীন গাছ প্রকৃতি যেন নুতনরূপে মেলে ধরেছে প্রকৃতিকে। ইলেকট্রনিক মিয়িা, ফেইসবুক, ইউটিউব অন করলেই দেখা যায় ইউরোপ এর ব্যস্ত জনপদে শহরে, ব্রীজ, শপিং সেন্টারে ভয়হীন স্বাধীনভাবে হেটে বেড়াচ্ছে বাঘ, চিত্রল হরিন, পাহাড়ী ছাগল, বানর, হনুমান, বন ময়ুর, হাস সহ বিভিন্ন জীব বৈচিত্র, এ যেন প্রকৃতির এক নতুনরূপ।
বাংলাদেশের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে অসংখ্য মানুষ এর ভীড়, জাহাজ বয় যান্ত্রিক শব্দের কারণে আমাদের চোখে পরেনি এতদিন সৈকত এর জলারাশিতে ডলফিন এর বিচরণ ও খেলা। আজ জন কোলাহলহীন সমুদ্র তীর যেন প্রকৃতিকে মেলে ধরেছে আপন ছন্দে। নীল সমুদ্র জলরাশি যেন ডলফিনরা ফিরে পেয়েছে তাদের হারানো অতিতকে। এই প্রসঙ্গে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের সেই উক্তি – দাও ফিরিয়ে সে অনন্য পথ ও নগর।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে, পরিবেশ এর ভারসাম্য রক্ষায় সমগ্র বিশ্বব্যাপী নগরসমূহকে দূষণমুক্ত করার কাজ চলছে। রবীন্দ্রনাথ আজ বেঁচে থাকলে, প্রকৃতির এই নির্মল শান্ত পরিবেশকে উপভোগ করতে পারতেন। রবীন্দ্রনাথ যেমন করে প্রকৃতির নির্মল পরিবেশে গড়ে তুলেছিলেন শান্ত নিকেতন। রবীন্দ্রনাথ এর পরিবেশ ভাবনার আলোকে দূষণমুক্ত পৃথিবী গড়তে এমনভাবে নগর পরিকল্পনা করতে হবে, যাতে প্রকৃতির সাথে আমাদের বিচ্ছেন না ঘটে। রবীন্দ্রনাথ এর ভাষায় সভ্যতা টিকিয়ে রাখতে হলে পরিবেশ ভানার বিকল্প নেই। মানুষ এর বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তোলার জন্য রবীন্দ্রনাথ’র কথায়-

“অন্ন চাই, প্রাণ চাই, আলো চাই, চাই মুক্ত বায়ু,
চাই বল, চাই স্বাস্থ্য, আনন্দ উজ্জ্বল পরমায়ু।

লেখক : ফজলুল কাদের মজনু
সভাপতি
ভোলা জেলা আওয়ামীলীগ।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।