মধ্যরাত : পর্ব-১৪৪

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : কচ বলল, তা জানলে দোষকি ? আমিত এখন আপনার সামনেই জল খেতে চাই। দিন আমি দু’হাত পেতে আছি। কিন্তু আপনারা বিয়ে নামে মন্ত্র পাঠ না হওয়া পর্যন্ত আপনাদের কুসংস্কার পূর্ণ মন নিয়ে এগিয়ে আসতে সাহস পান না। উমা বলল, ওটা আমাদের ধর্ম। আমাদের সমাজ, আমাদের শিক্ষা, আমাদের কৃষ্টি, আমাদের কালচার। কচ বলল, ওটার নাম হলে ডিসিপ্লিন। কিন্তু হন হল সব। নজরুল বলেছেন, এই হৃদয়ের বড় কোন কাবা-মন্দির নেই।
উমা ঘর থেকে গীটার, বেহালাটা এনে কচ এর কাছে রাখল। কচ তার উপর হাত বুলাতে লাগল। আর উমার সাথে তর্কে মেতে উঠল। কচ বলল সব চেয়ে বড়হ ল ভালবাসা-প্রেম। দু’জনের মধ্যে প্রেমের গভীরতা না থাকলে কোথায় মন্ত্র পাঠ। অগ্নি সাক্ষী, শুভদৃষ্টি, আশির্বাদ, বাসি বিয়ে, ফুলশয্যা, সব জলের ¯্রােতের মত কালের গর্ভে মিলিয়ে যায়। উমা বলল, বাবা আমি দার্শনিক নই। আমি দাদু তোমার সাথে পেরে উঠব না। আমি এতক্ষণ এঘর, ওঘর করছিলাম। আর ওদের কথা শুনে মৃদু মৃদু হাসছিলাম। কচ বেহালাটায় ছড় টানতে লাগল। বেহালাটা একটা করুন সুর বাজতে লাগল। ভালবাসি বলে আমার এত কাঁদান ভাল।
আমি গান জানি। আর জানি বলেই আমি সব গানের সব সুরের মর্যাদার আসন দেই। ভালবাসার সম্মান নেই। আমি নিজেও একদিন ভালবাসার অকুল সমুদ্রে পাড়ি জামিয়েছিলাম। কচ সুরটা অনেকক্ষণ ধরে বাজিয়ে চলল। এরি মধ্যে সুশান্ত এসে দরজায় বেল টিপল। দোলা চলে গেল, আমি উমা বাজনার সমজাদার হলাম। কচ বাজিয়ে বাজিয়ে ক্লান্ত হয়ে পরল। বলল, আসি দাদু। বললাম, এসো। দীর্ঘজীবি হও। সুশান্ত বলল, আমি পনেরো তারিখ কচকে আশির্বাদ করার ডেট দিয়ে আসলাম। আমি বললাম, শুভষ্য শীঘ্রম——–। তার আশির্বাদে কি দেবে ঠিক করেছ। সুশান্ত বলল, রিং কাপড়-চোপড় আর কি দেবার মত আছে ? আমি বললাম, বেশ হবে। সুশান্ত বলল, প্রশান্ত আশির্বাদ তুই করিস। দোলা খুশী হবে। আমি বললাম, তথাস্তু।
সেদিনের মত কথা সেখানেই শেষ হল। আমি আগের চেয়ে অনেক সুস্থ্য হয়ে উঠেছি। নিজে এখন অনেক কাজ-কর্ম করতে আনন্দ পাই। দোলার বিয়ের বাজার সুশান্ত উমা আমি এই ৩ জনেই করে ফেলেছি। শুধু শাড়ী কেনার সময় উমাকে বললাম, দোলাকে সাথে করে ওর পছন্দ সই কেনা কাটা কর। উমা আমার কথা মত একদিন বিকালে দোলাকে নিয়ে শাড়ীর দোকান গেল। আমিই ড্রাইভ করে নিয়ে গেলাম। সুশান্ত তখন ভার্সিটিতে ছিল। কত হাজার রকমের বানারসী, কাতান, তানচুই কাতান, আরও যে কত নাম। অত নাম আমার মনে নেই। মনে থাকলেও লেখার সময় নামগুলি সব ভুলে বসে আছি। একটা বানারসী একটা ব্রকেট, দুটো সিল্কের শাড়ী, তাঁতের শাড়ী, হাফ সিল্ক, গায়ে হলুদের শাড়ী, ব্লাউজ-পেটিকোট এসব নানা প্রয়োজনীয় জিনিস অনেক অনেক কেনা হল।

(চলবে——)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।