বাদামেই স্বপ্ন তজুমদ্দিনের সঞ্জয় দাসের

মোঃ ইকবাল হোসেন ॥ মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষে যেখানে জীবনের কোলাহল আর গন্তব্যে পৌঁছানোর তাড়া। সেই ভোলা জেলার তজুমদ্দিন স্লুইজ লঞ্চ ঘাটে এক দৃঢ়চেতা মানুষের দেখা মেলে। তিনি সঞ্জয় দাস। চাঁদপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের এই বাসিন্দা দীর্ঘ ৩৫টি বছর ধরে বাদাম ভেজে বিক্রি করে চলেছেন। যাঁর জীবনের একটাই উদ্দেশ্য-সংসারের চাকা সচল রাখা।
প্রতিটি দিন তাঁর শুরু হয় এক নতুন সংগ্রামের অঙ্গীকার নিয়ে। কাকভোরে বাদাম কেনা, এরপর সেগুলোকে যতœ করে ভেজে বিক্রি করার প্রস্তুতি। রোজ দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত, লঞ্চ ঘাটের ভিড়ে তাঁর কণ্ঠস্বর শোনা যায়-“গরম বাদাম, গরম বাদাম!” সময়ের কাঁটা ধরে প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা করে এভাবে তাঁর জীবন কেটে যায় ঘাটে। সঞ্জয় দাসের সংসারটা ছোট হলেও ভালোবাসায় ভরা। তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। তাদের মুখের হাসি আর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার স্বপ্নই তাঁকে এই কঠিন পরিশ্রমের প্রেরণা যোগায়।
আসলে, বাদাম বিক্রি করাটা আমার কাছে শুধু একটা কাজ নয়, এটা আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন। এই সামান্য বাদামের লাভেই আমার ছেলে-মেয়েরা স্বপ্ন দেখে আবেগতাড়িত কণ্ঠে বলেন সঞ্জয় দাস। দৈনিক গড়ে ৮০০ টাকা বিক্রি করে যা লাভ থাকে। তা দিয়েই তিনি টেনেটুনে সংসার চালান। এই সীমিত আয়ের প্রতিটি পয়সা আসে তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম আর নিষ্ঠার ফসল হিসেবে। রোদ-বৃষ্টি, ঝড়-ঝঞ্জা কোনো কিছুই তাঁর এই নিরন্তর ছুটে চলাকে থামাতে পারেনি। ৩৫ বছরের এই পথচলায় হয়তো বড় কোনো প্রাপ্তি নেই, নেই প্রাচুর্যের ছোঁয়া; কিন্তু আছে এক সংগ্রামী পিতার অপার মমতা, যা তাঁর পরিবারের ভিতকে মজবুত রেখেছে।
সঞ্জয় দাসদের মতো মানুষেরা নীরবে আমাদের সমাজের ভিত্তি হয়ে থাকেন। তাঁদের মতো অসংখ্য সংগ্রামী মানুষ আছেন, যাঁরা সামান্য আয় দিয়েও পরিবারকে সর্বোচ্চ ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখেন। ভোলার তজুমদ্দিনে লঞ্চ ঘাটের এই বাদাম বিক্রেতার জীবন যেন সেই কথাই আবারও মনে করিয়ে দেয়-অল্পতেই সন্তুষ্ট থেকে কীভাবে কঠিন জীবনেও হাসিমুখে লড়াই করা যায়।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।