গণহত্যা চালিয়ে হাসিনা কেয়ামত পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল : মেজর হাফিজ
জীবনের ডায়েরী থেকে গল্প সমগ্র : পর্ব-৪৬

[ ড. টি. এন. রশীদ ]
(গত পর্বের পর) : রেশমী আবার পাহাড় বেয়ে নেমে আসল, গাড়ীতে এসে উঠে বসল। গাড়ী ছেড়ে দিল। চারটার ভিতরে এসে জলপাইগুড়ি পৌঁছে গেল। জলপাইগুড়ি পৌঁছে রেশমীর বার বার দার্জিলিংয়ের কথা মনে পড়ল। জলপাইগুড়ি এসে রেজা সব সময় রেশমীর সাথে অযথা তর্কে লিপ্ত হতো। ওভারকোটের ব্যাপারটাই বিরাট আকার ধারণ করল। ওভারকোটের ব্যাপারে দার্জিলিংয়ের দর্জির সাথে কথা ছিল তৈরী হয়ে গেলে ডাকে পাঠিয়ে দেবে। রেজা বলল, কেন তুমি আমার কাছ থেকে হুকুম না নিয়ে ওভারকোট বানাতে দিলে?
রেশমী বলল, সব কিছু হুকুমের অপেক্ষায় বসে থাকা যায় না। টাকা তুমি যদি অনুগ্রহ করে দাও ভাল। রেজা বলল, না দিলে তুমি কি করবে? রেশমী বলল, কি করব, কিছুই করবার নাই। তবে তোমাকে চিনে রাখলাম। রেজা বলল, আস তোমাকে চিনিয়ে দেই। এই বলে রেশমীকে ভীষণ মারতে লাগল। তখন রেশমীর ৮ মাসের বাচ্চা পেটে। বুকে, পিঠে, হাতে বেদম প্রহার করতে লাগল। শেষ পর্যন্ত রেশমীর কাপড়-চোপড় এনে বলল, যা তুই বেরিয়ে যা। রেশমী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদতে লাগল- রেজা বলল, যা তুই আমার বাড়ী থেকে চলে যা- তোকে তালাক দিলাম, তুই চলে যা। রেশমী তবুও গেল না, কোথায় যাবে সে? রেশমীকে মেরে মেরে পরনের কাপড় খুলে ফেলল। চুলগুলো টেনে টেনে এলোমেলো করে দিয়েছে। সমস্ত পিঠ, মুখ, হাত কালো কালো হয়ে ফুলে উঠেছে। রেশমী মুখ ফুলিয়ে কাঁদতে লাগলো। হঠাৎ রেজা এসে রেশমীর কোমরে লাথি মারল। রেশমী ঘুরে পড়ে গেল। পড়ে চিৎকার করে কেঁদে উঠল।
ছেলেমেয়ে তিনটি গিয়ে মাকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগল। রেজা ঘরের ভিতর ছুটে গিয়ে বড় ছুরি নিয়ে এসে বলল, চল তোকে শেষ করে দেই। এই বলে রেশমীকে চুল ধরে টেনে গোসলখানার ভিতরে নিয়ে গেল। ছেলেমেয়ে তিনটি চিৎকার করে কেঁদে উঠল। রেশমী অনুনয় করতে লাগল- আমাকে ছেড়ে দাও, আমাকে মের না-আমাকে বাঁচতে দাও। রেজা বলল, না তোকে আর বাঁচতে দেব না। তোকে আমি সর্বশেষ করব। এই বলে গোসলখানার শিকল তুলে দিল। চাকর, বাবুর্চি ওরা সকলে উকিঝুকি মারছিল- সাহেবের কর্মকা- দেখে তাদের আয়া বাচ্চাটা কোলে করে গোসলখানার সাথে কান পেতে রাখল।
রেশমী বারবার রেজাকে মিনতি করতে লাগল- আমায় ছেড়ে দাও, আমায় ছেড়ে দাও, আমার বুকে ছোরা মের না। আমি চলে যাচ্ছি, আমি তোমার কিছু চাই না। আমায় ছেড়ে দাও। রেজা বলল, এই তোকে ছেড়ে দিচ্ছি। এই বলে রেশমীর বুকে ছোরা বসিয়ে দিল। রেশমী ভীষণ আর্তনাদ করে উঠল। রেজা আক্রোশের সাথে গোসলখানার শিকল খুলে রক্তাক্ত শরীরে বেরিয়ে এল। রেশমী কাতর আর্তনাদে ঘরটা কেঁপে উঠল। জালে তোলা মাছের মত ছটফট করতে লাগল। কাজের লোকগুলো থানায় গিয়ে খবর দিয়ে এল, সাহেব বিবি সাহেবাকে খুন করেছে। রেজা দেখল, রেশমীর বুকের রক্তে সমস্ত গোসলখানা ছেয়ে গেছে। রেশমী কাতর আর্তনাদে রেজার জ্ঞান ফিরে এল। রেশমী বলল, কে আছ আমাকে একটু পানি দাও। রেজা এবার নিজেই এগিয়ে গেল। রেশমী চিৎকার করে উঠল- না না আর মের না, আর মের না, আমি যাচ্ছি।
রেজা হাটু গেড়ে রেশমীকে কোলে করে বিছানায় শুইয়ে দিলেন। আহ! রেশমী বড় করে নিঃশ্বাস ছাড়ল। ওহ করে এপাশ ওপাশ হতে লাগল- ছটফট করে যন্ত্রনায় কালো হয়ে গেল। রেজা তাড়াতাড়ি রিক্সা ডেকে রেশমীকে জলপাইগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে গেল। রেশমী আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে গেল। রেজাকে হাত দিয়ে ইশারা করে বলল- আমার মিঠু, ঝরা, সোহেল রইল। ওদের দেখ, আর আমি বাঁচতে চেয়েছিলাম, বাঁচতে পারলাম না। ডাক্তাররা রেশমীকে সেলাইন দিতে লাগল। বড় ডাক্তারের সাথে পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর ও দুইজন সিপাহী ঘরে ঢুকে রেশমীর মাথার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। পরমুহূর্তেই একজন ম্যাজিস্ট্রেট এসে রেশমীর কাছে বসল। বলল, আপনাকে কে মেরেছে? রেশমী বলল, কেউ মারে নি, আমি নিজেই মরে যাচ্ছি। ম্যাজিস্ট্রেট বললেন, নিজেই মরে গেলেন? রেশমী বলল, হ্যাঁ, আমি নিজেই মরে গেলাম। এই বলে রেশমী অজ্ঞান হয়ে পড়ল। ডাক্তাররা অক্সিজেন দিল- ঘর থেকে সবাই বেরিয়ে এল। ডাক্তাররা রেজাকে বলল, বাঁচবে না তবুও আমরা সবাই চেষ্টা করছি। ছুরিটা হার্টে গিয়ে লেগেছে। আর—–আর—- ? বাচ্চা পেটে মিঠু, সোহেল ঝরাকে সাথে করে রেজা আবার ঘরে ঢুকল। তখন রেশমী প্রায়ই শেষ হয়ে এসেছে। আর চোখ খুলে দেখল না। শুধু রেশমীর চোখ দিয়ে বড় বড় করে দু’ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ল। শেষ রাতের মত সে আস্তে আস্তে করে অসীম অনন্ত লোকে চলে গেল।
(চলবে————–)
