সর্বশেষঃ

বোরহানউদ্দিনে জমি বিক্রির ১৬ বছর পর মামলা ॥ বিপাকে এক পরিবার

মোঃ ইকবাল হোসেন ॥ ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নে জমি সংক্রান্ত একটি দীর্ঘদিনের পারিবারিক লেনদেন এখন রূপ নিয়েছে আইনি লড়াইয়ে। প্রায় ১৬ বছর পূর্বে আপন ভাই আবু তাহেরের কাছে ২৭ শতাংশ জমি বিক্রি করেছিলেন আবুল কালাম। কিন্তু ২০১৮ সালে আবু তাহের মৃত্যুবরণ করার পর, ২০১৯ সালে হঠাৎ আবুল কালামের স্ত্রী হালিমা খাতুন ওই জমি ফেরত পেতে আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে চলমান রয়েছে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুনাল, ভোলা-তে। মামলা নম্বর: ৭৬৭/২০১৯।
জানা যায়, ২০০৮ সালে কাচিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আবুল কালাম, তার পিতা কুট্টি মাল এর জমি থেকে ২৭ শতাংশ অংশ আপন ভাই আবু তাহেরকে দলিলের মাধ্যমে হস্তান্তর করেন। জমিটি পারিবারিকভাবেই বুঝিয়ে দেওয়া হয় এবং আবু তাহের তা ভোগ-দখল করে আসছিলেন। সেই সময় আবুল কালাম সপরিবারে ঢাকায় চলে যান।
আবু তাহেরের ছেলে রিয়াজ বলেন, আমার চাচা আবুল কালাম ২০০৮ সালে আমাদের বাবার কাছে জমি বিক্রি করে চলে যান। আমরা সেই জমিতে গাছ লাগিয়ে এখন বড় বড় গাছ করেছি। হঠাৎ করে ২০১৯ সালে আমাদের কাছে কোর্ট থেকে নোটিশ আসে-আমরা তখন জানতে পারি, চাচার স্ত্রী হালিমা খাতুন আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তিনি দাবি করছেন, তার স্বামী নাকি আগেই ওই জমি তাকে দিয়েছেন। যদি তাই হয়, তাহলে পরে আমার বাবাকে কেন আবার দলিল দিলেন?
তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, আমরা ভাইয়েরা ছোটবেলায় বাবার দেওয়া জমির টাকা দেওয়ায় অনেক কষ্টে বড় হয়েছি। আমাদের তিন ভাইয়ের ২ জন প্রতিবন্ধী। বাবা মারা যাওয়ার পর আমাদের খুব কষ্টে দিন চলে। মামলা চালাতে গিয়ে বাবার রেখে যাওয়া দুটি গরুও বিক্রি করেছি। আজকে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি, অথচ আমরা জমির প্রকৃত মালিক। আমরা আমাদের ন্যায্য জমি ফেরত চাই।
আবু তাহেরের স্ত্রী জানান, আমরা খেয়ে না খেয়ে, ছোট ছোট বাচ্চাদের মুখে তুলে জমির টাকা দিয়েছি। আবুল কালাম আমাদের নিজ হাতে দলিল দিয়েছেন। আজকে তারা আমাদের হয়রানি করছে-বলছে, জমি নাকি তার স্ত্রীকে আগে দিয়ে দিয়েছেন। এটা কেমন কথা? আমরা আমাদের অধিকার চাই।
ঘটনার অন্য সাক্ষী আবু তাহেরের আরেক ভাই আব্দুল আলী বলেন, আমি নিজে উপস্থিত থেকে টাকাটা গুনে দিয়েছি। আজকে শুনছি, আবুল কালাম নাকি তার স্ত্রীকে আগেই দলিল দিয়েছে-এটা যদি সত্যি হয়, তাহলে এটা অমানবিক এবং নিন্দনীয় কাজ। ভাইয়ের সঙ্গে এমন প্রতারণা কেউ করে?
স্থানীয় সূত্র জানায়, জমিটি বর্তমানে আবু তাহেরের ছেলে রিয়াজদের দখলে রয়েছে। তারা সেখানে গাছপালা লাগিয়ে ঘর করে বসবাস করছে এবং জমিটি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করছে। এ বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে আবুল কালাম বলেন, আমি ঢাকায় থাকি। আমি আবু তাহেরকে ২৭ শতাংশ জমি দলিল দেইনি। সে জাল দলিল করেছে। আদালতে মামলা চলমান আছে, আদালত যে রায় দেবে, আমি তা মেনে নেব।
এলাকার সচেতন মহল জানান, জমি সংক্রান্ত এই বিরোধ এখন আদালতের বিবেচনায় রয়েছে। দীর্ঘ ১৬ বছর পর স্ত্রী পক্ষের পক্ষ থেকে এমন মামলা করায় সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা এবং মানসিক চাপ। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর দাবি-দাওয়ার প্রেক্ষিতে এখন বিচারিক রায়ই নির্ধারণ করবে, কে এই জমির প্রকৃত মালিক।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।