সর্বশেষঃ

সন্তানের কাছে প্রতিটি দিবসই হোক বিশ্ব মা-বাবা দিবস

জীবিত থাকাকালীন কম বুঝলেও বাবা-মা মারা যাওয়ার পর অনুভূতি প্রগাঢ় হয়। বিশ্ব বাবা দিবস উপলক্ষে এক সন্তান তার বাবা সম্পর্কে উত্থাপন করেছেন। মোজাম্মেল হক মিয়া (ইরি মোজাম্মেল)। জন্মঃ-১৯৩৩, মৃত্যুঃ-১৯৯০ খ্রী। উত্তর দীঘলদী, ভোলা সদর, ভোলা। ভোলা জেলার ইতিহাসে ইরি মোজাম্মেল বলে খ্যাত। মোজাম্মেল হক মিয়া ১৯৩৩ সালে ভোলা সদর উপজেলার উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নে হাজী আব্দুর রফিক মাতাব্বর ও মোসাম্মৎ মালেকা খাতুনের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। ৩ ভাই, ৩ বোনের মধ্যে বড় বোনের পরেই তার জন্ম। তৎকালীন মাইনোর পাস সচেতন পিতা হাজী আব্দুর রফিক মাতাব্বর ছেলে মেয়ে এবং নাতি-নাতনিদের পড়াশুনার ব্যাপারে খুবই সচেতন ছিলেন। মোজাম্মেল হক মিয়া ১৯৫১ সালে ভোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (তৎকালীন ভোলা রাজকীয় উচ্চ বিদ্যালয়) হইতে কৃতিত্বের সহিত মেট্রিক এবং বরিশাল বিএম কলেজ হইতে ১৯৫৩ সালে উচ্চমাধ্যমিক ও ১৯৫৫ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করিলে বাবা হাজী আব্দুর রফিক মাতব্বর উচ্চ শিক্ষার জন্য ঢাকাতে প্রেরণ করেন। সেখান থেকেই তিনি ব্যবসায়ের প্রতি বিশেষ আকৃষ্ট হন এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন লাভজনক ব্যবসায় সাফল্য অর্জন করেন। ভোলা চরফ্যাশন রোডের বাংলাবাজারস্হ ব্রিজ সংলগ্ন খাসের হাট বাজারের ৩০ ঘোড়া বিইকো ইঞ্জিনের রাইস মিলটি হতেই তাহার সুনাম-সুজস, খ্যাতি-পরিচিতি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। ঘুইংঙ্গার হাটেও তার একটি ৩০ ঘোড় বিইকো ইঞ্জিন রাইস মিল ছিল।
ব্যবসার পাশাপাশি শিক্ষার প্রসারের জন্য ও আমৃত্যু বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে গেছেন এবং বিনা পারিশ্রমিকে জয়নগর মাধ্যমিক বিদ্যালযে ছয় (৬) বছর স্বেচ্ছাশ্রম শিক্ষকতা করেন। যার জন্য অনেকেই তাকে মোজাম্মেল মাস্টার হিসেবে চিনতেন। দুর- দুরান্ত হতে আগত ছাত্রদের লজিং না হওয়া পর্যন্ত তিনি সর্বাধিক আট (৮) জন ছাত্রকেও তার বাড়ির একাধিক বৈঠকখানায় থাকা-খাওয়া ও পড়াশুনার সুব্যবস্থা করেন।
ভোলা চরফ্যাশন রোড সংলগ্ন জয়নগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়টিতে তার পিতা ও চাচার জমি দানের অবদান অনন্য। একান্তই নিজের পৃষ্ঠপোষকতায় এলাকার জনগণকে নিয়ে ও সরকারি অনুদানে বৃহৎ জয়নগর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবনটি নির্মাণ করে উদ্বৃত্ত টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত দিলে পাকিস্তান সরকার তাকে সততার সনদ প্রদান করেন। সাবেক শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এর মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত বাংলাবাজার ফাতেমা খানম বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি জনাব তোফায়েল আহমদ এর সার্বিক সহযোগিতায় মোজাম্মেল হক মিয়া এর তত্ত্বাবধানে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তিনি ই এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির ম্যানেজিং কমিটির আমৃত্যু চেয়ারম্যান ছিলেন। বর্তমানে বাংলাবাজার ফাতেমা খানম ডিগ্রী কলেজটি প্রতিষ্ঠার সূচনা লগ্নেও মোজাম্মেল হক মিয়া প্রয়াত আব্দুল কাদের চেয়ারম্যান, ডাক্তার আব্দুল জব্বার, শহিদুল ইসলাম সাজিয়া মিয়া, শফি হাওলাদার, নিজামুল হক মিয়াসহ আরো অনেকের সহযোগিতা নিয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামস্থ তার ছাত্র ব্যবসায়ীদের শরণাপন্ন হন। নিজ গ্রাম উত্তর দিঘলদীতেও শহীদ সালাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠায়ও তিনি প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন। এক্ষেত্রে তৎকালীন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নাজিউর রহমান সার্বিক সহযোগিতা দিয়েছেন। একজন মার্জিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত মোশারফ হোসেন শাজাহান সাহেবের কাছেও তিনি ছিলেন একজন পছন্দের লোক। পড়াশুনার শেষান্তে উচ্চপদস্থ সরকারি চাকুরীর হাতছানি পেয়েও তা ত্যাগ করে দেশ, মাটি ও মানুষের সেবার পাশাপাশি নতুন সৃজনশীল অনেক কাজ করে খ্যাতি অর্জন করেন।
বাংলাবাজারের খাসেরহাটে সুবৃহৎ একটি লঞ্চ তৈরি করেছিলেন। অজ্ঞাত কারণে লঞ্চটি নামানো হয় নাই। ভোলা জেলায় ইরি ধান চাষের তিনিই প্রথম একজন উদ্যোক্তা ছিলেন। সে সময়ে মানুষ ছিল ধর্মান্ধ, কুসংস্কারে নিমজ্জিত। মৌসূম বিনা কৃত্রিম উপায়ে উৎপাদনকে বেদায়াতি কাজ মনে করত। ঠিক সেই সময়ে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন এর সহযোগিতায় সেচের মাধ্যমে ইরি চাষে সবুজ বিপ্লব ঘটিয়ে সকলকে চমকিয়ে দিয়ে বিপ্লবী কৃষক হিসেবে পরিচিতি পান। আর তখনই বিভিন্ন সংগঠন- সংস্থা, এবং সরকার এগিয়ে এসে তথ্য উপাত্ত, উপকরণ দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িড়িয় দেন। সমগ্র দেশে ছড়িয়ে গেল বড় মিয়া খ্যাত মোজাম্মেল হক মিয়ার খ্যাতি-সুনাম আর সাফল্য। পাকিস্তান সরকার তাকে। ইরি মোজাম্মেল উপাধিতে ভূষিত করে স্বর্ণপদক প্রদান করেন এবং একটি কেরোসিন চালিত কলের পাখা পুরস্কার দেন যা আজও তার উত্তর সুরীরা প্রদর্শনী হিসেবে সংরক্ষণে রাখেন। কৃষি গবেষক হিসেবে তিনি বিভিন্ন ফসলের উপর বিশ্লেষণ নিয়ে কেন্দ্রীয় কৃষি গবেষণাগারে তার সুচিন্তিত মতামত দিতেন।
বড় মিয়া বলে খ্যাত মোজাম্মেল মাস্টার একজন অতিথি পরায়ণ ব্যক্তির ছিলেন। সর্বজন শ্রদ্ধেয়, নির্দোষ, নির্লোভ, সহজ-সরল, ধর্মভীরু মোজাম্মেল হক মিয়া সারা জীবন মানুষের উপকার করে গেছেন। প্রতিবেশীদের অভুক্তি -অনাহার তাকে ব্যথিত করত। সাধ্যানুসারে অসহায় দুস্থদের সাহায্য করতেন, ডেকে এনে খাবার খাওয়াতেন এবং বহু অসমর্থ, অসহায় পরিবারের বয়স্ক ছেলেমেয়েদের নিজ খরচে বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতেন। সমাজ সেবার বহু কাজের মধ্যেও বেশ কয়েকটি খামার সাফল্যের সহিত পরিচালনা করেছেন। কথিত আছে, তার বিভিন্ন খামারে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ক্ষেতমজুর আসতে থাকতো। অনেকে কেবল হাজির হয়েই পারিশ্রমিক নিয়ে যেত। তখন পাজায় ইট পোড়ানো হতো। মোজাম্মেল হক মিয়া দুইটি ইটের ভাটা চালাতেন। নিজস্ব উৎপাদিত ইট দিয়ে স্বাধীনতার পরের বছরেই নিজ গ্রামে দৃষ্টিনন্দন পাকা বাড়িটি নির্মাণ করেন। শখের বসে তার নিজ গ্রামে যত তাল গাছ ছিল তা হতে গাছির মাধ্যমে হাড়ি বসিয়ে রস বের করে গুড় ও রস মানুষকে খাওয়াইয়ে বেশ সুনাম অর্জন করেছেন।
নিজ এলাকা ছাড়াও দূর দূরান্তের বহু লোক ন্যায় বিচারিক কাজে তার সহযোগিতা পেতেন। চোখ রাঙ্গিয়ে বা শাসিয়ে নয়, বরং মিষ্টি ভাষা, যথাযথ যুক্তি এবং ব্যবহারে অনেক জটিল সমস্যার সমাধান দিতেন। অন্যায় কিবা গর্হিত কাজে তিনি হঠাৎ রেগে যেতেন কিন্তু পরে আবার তাকে বুঝিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে মিলে যেতেন। ব্যবসা-বাণিজ্য কাজকর্ম, লেনদেনে তিনি ছিলেন একজন ইনসাফি মানুষ। খাঁটি নামাজী হিসেবে মাঝে মাঝে মসজিদে বসেও ধর্মীয় বিশ্লেষণ শুনাতেন। জীবনে অনেক শখের কাজ তিনি করে গেছেন। বিশেষ করে কলের গান বলে খ্যাত গ্রামোফোন, তৎকালীন বড় চার ব্যান্ড রেডিও শোনার জন তার বাড়িতে প্রচন্ড ভিড় জমাত। যেমনটি হয়েছিল তার স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর শত শত লোক এই বড় মিয়াকে এক নজর দেখার জন্য দূর-দূরান্ত হতে আত্মীয়-অনাত্মীয়ের আগমন।
তিনি ছিলেন তার আমলে অত্র এলাকার প্রথম গ্রাজুয়েট। সেই আমলে একজন মোটরসাইকেলের মালিক ছিলেন তিনি। যখন পুরো জেলাতেও খুব কম মোটরসাইকেল ছিল। শখের কাজ হিসেবে পুরো বাড়ি জুড়ে ছোট ছোট বাক্স ঘর তৈরি করে ভিতরে ফ্রেম সাঁটিয়ে মৌমাছি পালন করতেন এবং সকাল বিকাল খাবার দিলে বাড়ি জুড়ে মৌমাছির ঢল ছিল দৃষ্টি কারা দৃশ্য। তিনি ছিলেন দীর্ঘ বছর ইউনিয়নের প্রতিনিধি এবং বেশ কয়েকবারই চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে তার উপচে পড়া সমর্থন ও বিরল মিছিল দেখে (নতুন মসজিদ হইতে ঘুইংগারহাট পর্যন্ত) প্রতিপক্ষের সকল প্রার্থীরা ঘাবরিয়ে যায়। পরে প্রতিপক্ষ প্রার্থীরা সবাই জোটবদ্ধ হয়ে ষড়যন্ত্র করে জোরপূর্বক পেশি শক্তি দিয়ে ভোট ছিনিয়ে নেয়। তিনি কখনো অপকৌশল বুঝতেন না।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মোজাম্মেল হক মিয়ার (বড় মিয়া) বিশাল অবদান বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে এতটুকুন হলেও ত্বরান্বিত করেছে। ৯নং সেক্টরের অধীনে বোরহানউদ্দিন উপজেলার দেউলার হাই কমান্ড সিদ্দিক সাহেবের সার্বিক দিক নির্দেশনায় সহযোদ্ধা প্রয়াত সিদ্দিক মিলিটারি, সুবেদার আব্দুল খালেক, আমার ছোট মামা প্রয়াত নাসির হাওলাদার, আব্দুল হাদী মাসুদ, আলকুছ, আবুল হোসেন লাল মিয়া, কাজী তাজুল ইসলাম, আমার ছোট চাচা মৃত মোশারেফ হোসেন মসু মিয়া, জয়নাল, আব্দুল কাদের কাজী, তাজল মাস্টার, বজলু মোল্লা, মরহুম আলমগীর মুন্সী (বিমান বাহিনী), আবুল কাশেম (সেনাবাহিনী) আবু তাহের, আব্দুল মালেক, সুলতান আহমেদ সহ নাম না জানা অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠক হিসেবে মরহুম মোজাম্মেল হক (ইরি মোজাম্মেল) মিয়া এর তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ এবং নিজ খরচে খাদ্যের রসদ জোগান দেন। অনেকেই আজও বেঁচে আছেন। আবার অনেকেই প্রয়াত হয়েছেন। পাকিস্তান হানাদার বাহিনী তার বাংলাবাজারস্থ খাসেরহাটের রাইস মিলটিকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। তিনি ছিলেন খাদ্যশস্য ও কীটনাশকের ডিলার। তার গুদামে থাকা ১২৬৫ বস্তা গম, ৪০০ বস্তা সার, ১০০ বস্তা লবণ, নিজস্ব মিলে ভাঙ্গানো ৯০ বস্তা আটা, বাড়ি করার জন্য গুদামে থাকা মূল্যবান কাঠ ও বিএডিসির সরকারি ও ব্যক্তিগত অনেক কৃষি যন্ত্রপাতি পুড়িয়ে দেয়। মিলের কর্মচারী সৈয়দ আহমেদ মাঝিসহ মুজাফফর, আলী একাব্বরকে গুলি করে হত্যা করে। আহত হয় হাফেজ মাঝি সহ তার মিলের অন্য কর্মচারী মুজাহর হোসেন।
ধর্মভীরু সহজ সরল সাদা মানুষটি আমৃত্যু সমাজ সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। তার সকল সাফল্যে সহধর্মিনী আলহাজ্ব মনোয়ারা বেগমের ধৈর্য মূলক সহযোগিতা প্রশংসনীয় ও স্মরণীয়। বেশ কয়েক মাস রোগে ভোগার পর ঢাকার রাজধানী ক্লিনিক, আহসান ক্লিনিক ও সর্বশেষ হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল হতে চিকিৎসায় ব্যর্থ হয়ে ঢাকা হতে ভোলা ফেরার পথে ১৯৯০ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি রাত ৯ টায় ভোলা গামী তৎকালীন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশন মেয়র মরহুম নাজিউর রহমানের যাত্রীবাহী লঞ্চ এম ভি লালি এর ডিলাক্স রুমে মাত্র ৫৭ বছর বয়স ইন্তেকাল করেন।
পরদিন নিজ বাড়িতে হাজার হাজার শোকাহত হিন্দু-মুসলিম নারী-পুরুষ, আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার ঢল নামে এবং কান্নার রোল পড়ে যায়। দেশের একজন খ্যাতনামা সমাজ সেবক, বরেণ্য প্রিয়জনকে হারানো বেদনায় দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। অবশেষে জানাজাবাদ সকাল ১১টায় পারিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। বাবা-মা সহ সকল মরহুম বাবা মায়ের জন্য দোয়া কামনা চাচ্ছি।
বিঃ দ্রঃ আজকের ভোলার সম্পাদক অধ্যক্ষ মুহাম্মাদ শওকাত হোসেন প্রনীত সর্বশেষ “ভোলা জেলার ইতিহাস” গ্রন্থের ৫১৬ পৃষ্ঠায় স্বল্পপরিসরে ইরি মোজাম্মেল আর্টিকেলটি প্রকাশিত হয়। তথ্য বিভ্রাটে তার জন্ম, এবং সনদ প্রাপ্তির সালে সামান্য একটু ভুল হয়েছে। ১৯৩৬, ১৯৫২, ৫৪, ৫৬ এর পরিবর্তে ১৯৩৩, ৫১, ৫৩, ৫৫ হবে।

সৈয়দ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম
মরহুম মোজাম্মেল হকের দ্বিতীয় সন্তান।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।