লালমোহনে সন্তানদের সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছানো এক আদর্শবান দম্পত্তি

স্টাফ রিপোর্টার, লালমোহন ॥ ভোলার লালমোহন পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের মাষ্টার কটেজের বাসিন্দা আদর্শবান দম্পত্তি এ কে এম ছালেম ও বেগম রফিকুন নাহার। পেশায় দু‘জনই ছিলেন মাধমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। বর্তমানে অবসর জীবন কাটাচ্ছেন। ২ ছেলে ও ৩ মেয়ের আদর্শবান বাবা-মা তারা। সন্তানদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পেরে তারা আজ গর্বিত।
এ কে এম ছালেম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে মনোবিজ্ঞানে মাষ্টার্স করে তার চাচা ভোলা জেলার প্রথম বিএবিটি মরহুম মকবুল আহমেদ সাহেবের আদর্শে অনুপ্রানিত হয়ে ভোলা জেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চরফ্যাসন টি, বি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করেন। পরবর্তিতে সততা, নিষ্ঠা ও সুনামের সাথে চরফ্যাসন টি, বি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন শেষ করে অবসর নেন।
শিক্ষানুরাগী এই মহৎ মানুষটি সারাটি জীবন অতিবাহিত করেছেন শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে। তাঁর হাজারো শিক্ষার্থী আজ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানের কেউ সচিব, কেউ বা উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা কিংবা সমাজের আলোকিত মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এটাই তাঁর জীবনের পরম সার্থকতা।
আর বেগম রফিকুন নাহার (হেনা) বিএ বিএড পাশ করে লালমোহন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সিনিয়র শিক্ষক হিসাবে সততা, নিষ্টা ও সুনামের সাথে শিক্ষকতা করে অবসর নেন।
এই দুই শিক্ষকের আদর্শে এবং তাদের সঠিক দিক নির্দেশনায় তাদের ৫ সন্তান স্নাতকোত্তর পাশ করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সততা ও নিষ্টার সাথে চাকুরী করছেন। বড় মেয়ে ছাবিকুন নাহার লালমোহন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় হতে এসএসসি, শাহবাজপুর কলেজ হতে উচ্চ মাধ্যমিক এবং বরিশাল বি এম কলেজ হতে ইতিহাস বিষয়ে স্নাতকোত্তর পাশ করে বর্তমানে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার চরফ্যাশন ফাতেমা মতিন মহিলা ডিগ্রী কলেজে সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত আছেন। মেজো মেয়ে লালমোহন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় হতে এসএসসি, শাহবাজপুর কলেজ হতে উচ্চ মাধ্যমিক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হতে বাংলা বিষয়ে স্নাতকসহ স্নাতেকোত্তর পাশ করে বর্তমানে ভোলার বোরহানউদ্দিন মহিলা ডিগ্রী কলেজে সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত আছেন। বড় ছেলে মোঃ সোয়েব মেজবাহ উদ্দিন লালমোহন বহুমুখী বালক মাধ্যমিক বিদ্যালয় হতে এসএসসি, শাহবাজপুর কলেজ হতে উচ্চ মাধ্যমিক এবং বরিশাল বি, এম,কলেজ হতে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতকসহ স্নাতকোত্তর পাশ করে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পদে কর্মরত থাকার পাশাপাশি বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকার কলামিষ্ট হিসাবে লেখালেখি করছেন ছোট মেয়ে কামরুন নাহার লালমোহন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় হতে এসএসসি পরীক্ষায় যশোর বোর্ড হতে ৮ম প্লেস এবং শাহবাজপুর কলেজ হতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ষ্টার মার্কসহ পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতকসহ স্নাতকোত্তর শেষ করে ২৪তম বিসিএস পরীক্ষায় পাশ করে বর্তমানে ঢাকার বেগম বদরুন্নেসা সরকারী মহিলা কলেজে সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত আছেন। এবং ছোট ছেলে এ কে এম ছায়েম, লালমোহন বহুমুখী বালক মাধ্যমিক বিদ্যালয় হতে এসএসসি, শাহবাজপুর কলেজ হতে উচ্চ মাধ্যমিক এবং বরিশাল বি, এম, কলেজ হতে ইংরেজী বিষয়ে স্নাতকসহ স্নাতকোত্তর পাশ করে বর্তমানে আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, নিউ মার্কেট শাখায় সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার হিসাবে কর্মরত আছেন।
সন্তানদের এমন সাফল্যে বাবা এ কে এম ছালেম বলেন, আমি পিতা হিসাবে গর্বিত যে আমার ৫ সন্তানই স্নাতকোত্তর পাশ করে নিজ যোগ্যতায় চাকুরী নিয়ে কর্মক্ষেত্রে সফলতার সাথে কর্ম করে যাচ্ছে। এ জন্য আমি মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ। আমার জীবদ্দসায় সন্তানের সফলতা দেখে যেতে পেরেছি। আমাদের এই ৫ সন্তানের সাফল্যের জন্য তার মায়ের অবদান বেশী। তাদের মা তাদের সঠিক গাইডলাইন দিয়ে আজ মানুষের মত মানুষ করতে পেরেছে। সন্তানদের গর্বিত মা বেগম রফিকুন নাহার বলেন, আমি একজন মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষিকা ছিলাম, তাই অন্যের সন্তানদেরকে শিক্ষিত করার পাশাপাশি নিজের সন্তানদের ও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছি। যাহাতে তারা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে মানুষের মত মানুষ হতে পারে। আমি অবসর নিয়েছি, আর আমার সন্তানরা আজ উচ্চ শিক্ষিত এবং সবাই সফলতার সাথে চাকুরী করছে এটাই আমার গর্ব। আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। সবাই আমাদের সন্তানদের জন্য দোয়া করবেন।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।