অনাবাদি জমি থেকে লাভের স্বপ্নে বিভোর বোরহানউদ্দিনের তরমুজ চাষিরা

মনিরুজ্জামান ॥ উপকূলীয় জেলা ভোলার বোরহানউদ্দিনের তেঁতুলিয়া নদীর বুকে জেগে ওঠা বিস্তৃত মাইলের পর মাইল অনাবাদি চরগুলোতে রয়েছে তরমুজ ক্ষেত। সবুজের সমারোহের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুইয়ে রয়েছে বিভিন্ন জাত ও আকৃতির প্রকৃতির দান “তরমুজ”। সব মিলিয়ে নয়ভিরাম এক চিত্র। অনুকুল পরিবেশে ভালো উৎপাদন, খাত-উপখাতে চাঁদাবাজি বন্ধ, রমজানে ফলন আসায় বাজার চাহিদা বেশি,লাভের পরিমানও বেশি। উৎপাদনকারিগন চলতি বছর ৫০ কোটি টাকার তরমুজ বিকি-কিনির আশাবাদ ব্যক্ত করছেন। যা বিগত বছরগুলোর তুলনায় কয়েকগুন বেশি। লাভের স্বপ্নে বিভোর এখানকার চাষিরা।
উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, এবার সময়টা তরমুজ চাষীদের জন্য।সবই তাদের অনুকুলে। এবার হেক্টর প্রতি তরমুজ উৎপাদন হবে ৪০ থেকে ৫০ মে. টন।প্রতিটি তরমুজের নূন্যতম বাজার মূল্য দুইশত টাকা ধরলে ও এ বছর কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি করবেন বোরহানউদ্দিন উপজেলার তরমুজ চাষিরা। এতে কৃষকদের মুখে হাঁসি ফুটবে বলেও আশা তাদের।তাঁরা আরও জানায় গত বছর তরমুজ আবাদ হয়েছে ৭শ ৫০ হেক্টর জমিতে এ বছর হয়েছে ৮ শত ৩০ হেক্টর জমিতে। অবশ্য এ পরিসংখ্যান মানতে নারাজ স্থানীয় কৃষকরা।
জানা যায়, বোরহানউদ্দিন উপজেলায় তেঁতুলিয়া নদীর গংগাপুর অংশে চর শরীফাবাদ, রাম কানাই, ধারিয়া, পাতার চর এবং সাচড়া ইউনিয়নের হাঁসের চর সহ ৫ টি চরের আয়তন প্রায় ১৫৩৭ একক। যার অনেকটা জমিতে শুধু মাত্র তরমুজ চাষ হয়।
সরেজমিনে গঙ্গাপুরের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চর শরীফাবাদ গিয়ে দেখা যায় কয়েক শত একর জমিতে দিগন্ত জোড়া তরমুজ খেত। চরের চারদিকে বাঁধ দেওয়া। কৃষকরা জানান, জোঁয়ারের পানি যাতে খেতে ঢুকতে না পারে, সেজন্য চারদিকে বাঁধ দেওয়া।এতে ফসলের আর ক্ষতি হয় না।
কথা হয় ওই চরের তরমুজ চাষী সুজন হাওলাদার, মাসুদ মৃধা, মোহসিন, বাচ্চুসহ একাধিক লোকের সাথে। তাঁরা জানান, গ্রেড-১, থাই সুপার, ড্রাগন, কালিবুনা, আনন্দ, ভিটরাজ জাতের তরমুজ চাষ করেন। আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলন ভালো। আকৃতি, ওজন ভালো। প্রতি একরে এক হাজার পাঁচশত থেকে ছয়শত তরমুজ হয়। ১৫ শ ৩৭ একর জমিতে তরমুজ হয় প্রায় ২৩ থেকে ২৪ লাখ। রোজার মধ্যে ফলন আসায় চাহিদা বেশি, দাম ভালো। প্রতিটি তরমুজ ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রয় হয়। সে হিসেবে প্রায় ৫০ কোটি টাকার তরমুজ এ বিক্রয়ের আশা করেন। তবে চাষিরা জানান, বিগত বছরগুলোতে পন্য আবাদে শ্রমিক ও পরিবহন খরচ বাবদ প্রতি পিচ তরমুজ থেকে ১০ টাকা করে চাঁদা দিতে হতো। এ বছর তা দিতে হয় না। এটা আমাদের জন্য বাড়তি সুবিদা।
তেঁতুলিয়া চরের সবচেয়ে বড় চাষী রাঙ্গাবালী এলাকার মন্নান সিপাই। পাতার চরে কথা হয় তাঁর প্রতিনিধ আব্দুল রহমানের সাথে। তিনি বলেন, এ বছর ১২২ একর জমিতে তরমুজ চাষ করছেন। ইতিমধ্যে ৩০-৪০ হাজার তরমুজ বিক্রয় করা হয়েছে। ফলন ও দাম ভালো। এ বছর কোন ঝামেলা নেই।কেউ খাওয়ার জন্যও একটি তরমুজ চায়নি। বেশ শান্তিতে ব্যবস্থা করছি।
একই কথা বললেন, রামকানাই চরের চাষী চরফ্যাশন এলাকার কামাল, মাইনুদ্দিনসহ অনেকে। তাঁরা আরও জানান, উৎপাদিত তরমুজ হবিগঞ্জ, চাঁদপুর, নারায়নগঞ্জ, মোক্তারপুর, বরিশাল, চট্রগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেটসহ দেশের অন্তত ১২টি জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ গোবিন্দ মন্ডল জানান, এ বছর অন্য বছরের চেয়ে ফলন ভালো, দাম ও বেশি। লাভ বেশি হওয়ায় চাষীরা খুব খুশি।