সর্বশেষঃ

বিসর্জন

এম. আর আমিন,

একদিন আপনার একটা সুন্দর পৃথিবী ছিল। আপনার নিজের মতো করে অনেক মমতায় সেই পৃথিবী সাজিয়েছিলেন। মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে ধরেছিলেন পৃথিবীকে। আপনার চারপাশে কত আপনজন, আত্মীয়-স্বজন, কত মানুষ। মনে হতো সবাই আপনাকে অন্তরাত্মা দিয়ে ভালোবাসে। যাদের ঠিকানা ছিলনা, পরিচয় দেয়ার মতো কিছু ছিলনা। আপনি আপনার পৃথিবীতে তাদের ঠাঁই দিলেন। কিন্তু আপনার অদ্ভুদ এই পৃথিবী। এখন আপনার পৃথিবীতে আপনি নেই। আপনার পৃথিবী থেকে আপনাকে বের হতে বাধ্য করা হয়েছে। তারা নিজেদের মতো করে সাজিয়েছে। আর আপনাকে ব্যর্থ মানুষের দলে পাঠিয়ে দিয়েছে। খুব অকৃতজ্ঞ এই পৃথিবী জীবনের ভালবাসার মায়ায় যাদেরকে আপন মনে করেছিলেন সময়ের সাথে সাথে তার রং বদল করেছে। চরিত্র বদল করেছে, পেষাক বদল করেছে। তাদের পৃথিবী বদল করেছে। যাদের আপনি পথ চিনিয়েছিলেন তাদের কাছে আপনি অচেনা হয়ে গেলেন। কি নিষ্ঠুর পৃথিবীর মানুষগুলো। এখন ওরা পৃথিবীর রাজা। আর আপনি আপনার পৃথিবী থেকে বেড়িয়ে গেলেন অথবা আপনাকে পৃথিবী থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। আপনার সাথে অযাচিতভাবে অশোভন আচরণ করে আপনাকে ইচ্ছাকৃতভাবে দূরে ঠেলে দিয়েছে। কখনো কখনো আপনাকে ছোট করার অপচেষ্টা করতেও ছাড়েনি। তারা এখন নিজেরাই সফলতার ফানুষ উড়িয়ে আতশবাজি উৎসব করে। যেখানে আপনার সবচেয়ে বেশী অবদান থাকবে সেখানে একদিন আপনার কোন চিহ্নত্ত থাকবেনা। মানুষ নতুন নতুন নায়কদের পেয়ে পেছনের মহানায়কদেরই ভুলে যায়। এটার মানুষের রূপ এরা রং বদলাতে সময় লাগে না। আবার জীবন সাথী জীবনে এলে তারাও তাদের পুরোপুরি বদলে যেতে পারেনা। তারা যা পারিবারিক শিক্ষা গ্রহণ করে বা তাদের পরিবার থেকে যা শিখে তা দিয়ে তাদের সংসার জীবনে স্বামীর জীবনে বা এখানে নেতিবাচক ধারনা ছাড়া আর কিছুই দিবে পারেনা।
এরা ইচ্ছে করলে সংসার, স্বামী, সমাজ বদলে দিতে পারে। এদের দ্বারা কোন সংসার, স্বামী বা সমাজ উন্নতি করতে পারছে কিনা সন্দেহ। তা না হলে আমাদের সংসার জীবনে অশান্তি, স্বামীদের ধুকে ধুকে জীবন কাটানো, পরকীয়া আসক্ত, ছেলে মেয়েদের সভ্যতার বদলে অসভ্য হওয়া, আদব কায়দার বদলে বেয়াদব হওয়া এগুলো এখন প্রতিনিয়ত দেখা যাচ্ছে। একজন নারী ইচ্ছে করলে পুরো সংসার সুন্দরভাবে সাজাতে পারে অথচ এখন যৌথ পরিবার ভেঙ্গে দিন দিন একক পরিবার বেড়েই চলেছে। বৃদ্ধ বাবা মায়ের স্থান ছেলে মেয়েদের কাছে হয় না, হয় বৃদ্ধশ্রমে অথবা পথের ভিখারী হয়ে। সভ্যতার সংকটে মানুষগুলো অসভ্য হয়ে গেছে। তাহলে থাকলো বাকী আর কি? নীতি নৈতিকতা বা ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করা উপর্যুক্ত জায়গা বা পরিবেশ কোনটাও নেই।
ধর্মীয় গুরুরা নানা ভাবে বিভক্ত। সম্মান, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা পুরোপুরি বিদায় নিয়েছে। হিংসা, বিদ্বেষ আর সংঘাত ক্ষত বিক্ষত করে দিয়েছে পুরো সমাজকে। কখন কিভাবে আমরা সুপথে ফিরে আসবো তা কারো জানা নেই। ধান্দাবাজেরা চালাচ্ছে সমাজকে। ভবিষ্যত সমাজকে কোন দিকে নিয়ে যাবে তা সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানেন। তবে সংসার করতে গিয়ে যারা নিঃস্ব হয়ে গেছেন, দুঃখী মানুষের কাতারে চলে এসেছেন, জীবনে সুখের মুখ কোনদিন দেখেননি এক সময় তারা একা হয়ে পড়েন। নিজেদেরকে ধীরে ধীরে সবকিছু থেকে সরিয়ে নিতে থাকেন। অনেক সময় নিজেকে একবারে বদলে ফেলেন। যারা জীবনে কোনদিন ভালোবাসা পেলেন না, ¯েœহ, মায়া, মমতা পেলেন না, অশ্রদ্ধা, অসম্মানে আর অবহেলায় জীবন কাটিয়েছেন তারা এক সময় নিজের জীবনকে ঘৃনা করতে শুরু করে। পথচলা শুরু হয় একাকীত্ব নিয়ে। কারো প্রতি তাদের আর কোন বিশ্বাস বা আস্থা থাকে না। জীবনকে নিয়ে ভাবতে গেলে তাদের হিসেব নিকেসের খাতাটা শুন্যই দেখতে পায়। তাদের জন্য কারো মায়া হয় না। আসেনা কোন সহানুভূতি। দায়িত্ব ও কর্তব্যের কাছে তারা হেরে গেছে। কেউ সংসারের জন্য নিজের স্বপ্ন ছেড়ে দেয় আবার কেউ নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য সংসার ছেড়ে দেয়।
হতাশার এক বুক যন্ত্রণা নিয়ে তারা বেঁচে থাকে। তারা এক সময় সব ছেড়ে শান্তি খুঁজতে থাকে। কোথাও তাদের শান্তি নাই। সে সবার জীবন সাজানোর জন্য নিজের স্বপ্ন বিসর্জন দিয়েছে, পারেনি নিজের জীবন সাজাতে, সে কোথায় পাবে শান্তি। বোঝা বইতে বইতে এক সময় নিজেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তারপর পথ হারিয়ে ফেলে, হয়ে যায় নিখোঁজ। শুরু হয় নিশব্দ যাত্রা। হয়তো এখানেই শেষ যাত্রা। কারো কাছে বলার মতো কিছু থাকে না। আর বলবে কি? নিজেইতো সব হারিয়ে ফেলেছে। বিসর্জন দিয়েছে নিজের সকল আশা, সকল স্বপ্ন। পৃথিবী ছেড়ে নিরবে নিভৃতে নিশব্দে তাদের চলে যেতে হয়। কেউ জানেনা তাদের দুঃখের কথা, কষ্টের কথা, অবহেলার কথা। বড় অনাদর আর অবহেলায় পৃথিবী ছেড়ে তাদের করুণ ভাবে চলে যেতে হয়। তাদের খোঁজ কেউ রাখেনা। কেউ খোঁজ করেনা। সবাই পাড় পেয়ে গেছে। যাদের সুখ খোঁজার জন্য একদিন যে নিজের সুখের কথা ভুলে গেছে সেতো সুখের সন্ধান পাবেনা। পৃথিবীর মানুষগুলো বড় অদ্ভুদ। তাদের প্রত্যেকের চরিত্র অদ্ভুদ রকমের বিষয়গুলো ফুটে উঠে। একই সাথে দেখা যাবে তারা মসজিদে যায়, মুসল্লী হিসেবে। কিন্তু সেখান থেকে বের হয়ে তাদের মসজিদের মুসল্লীর মতো অবস্থা থাকে না।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।