লালমোহনে নতুন জাতের ধানের আবাদ, সফলতার আশা চাষিদের

স্টাফ রিপোর্টার, লালমোহন ॥ উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান ‘ব্রি ধান-১০৩’। অন্যান্য জাতের আগেই এসব ধান ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করতে পারেন কৃষকরা। দ্বীপজেলা ভোলার লালমোহন উপজেলায় প্রথমবারের মতো কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ, সার ও বালাইনাশক ওষুধসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী দিয়ে বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যে ব্রি ধান-১০৩ এর আবাদ করানো হয়েছে। এসব কৃষকদের ক্ষেতে এখন বাতাসে দুলছে সোনালী রঙের ধান।
লালমোহন উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পার্টনার প্রকল্পের আওতায় উপজেলার কালমা ইউনিয়নের চরছকিনা এলাকার ৩ জন এবং পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের কলেজ পাড়া এলাকার ৩ জন কৃষকসহ মোট ছয়জন কৃষক উচ্চ ফলনশীল ব্রি ধান-১০৩ আবাদ করেছেন। এরমধ্যে কালমা ইউনিয়নের কৃষকরা আগামী ১০ দিনের মধ্যে এসব ধান কর্তন শুরু করবেন। এছাড়া উপজেলা পশ্চিম চরউমেদ ইউপির চাষিরা দেরিতে আবাদ করায় তারা আগামী ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে ধান কর্তন শুরু করতে পারবেন। এসব কৃষকরা এ বছর প্রথমবারের মতো মোট চারশত শতাংশ জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের এ ধানের আবাদ করেছেন। এসব ধান বাজারে বীজ হিসেবে বিক্রি করা হবে। বাজারে এসব ধানের বীজ পাইকারি প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা এবং খুচরা ৮০ থেকে ৯০ টাকা করে বিক্রি করতে পারবেন কৃষকরা।
উপজেলার কালমা ইউনিয়নের চরছকিনা এলাকার চাষি মো. বাবুল, মো. সেলিম এবং শেখ সাদি বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় চলতি আমনের মৌসুমে ২০০ শতাংশ জমিতে উচ্চ ফলনশীল ব্রি ধান-১০৩ চাষ করেছি। কৃষি অফিস থেকে এজন্য আমাদেরকে বিনামূল্যে ধানের বীজ, সার, কীটনাশক ও বীজ সংরক্ষণের জন্য ড্রাম দেওয়া হয়েছে।
এই জমিতে ধানের চাষ করতে জমি চাষাবাদ, শ্রমিক ও বালাইনাশক এবং অন্যান্য খরচসহ প্রায় ৪০ হাজার টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। তবে সবকিছু ঠিক থাকলে আশা করছি এই ২০০ শতাংশ জমি থেকে দেড় লাখ টাকার ধানের বীজ বিক্রি করতে পারবো। আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের ভেতর ক্ষেতের ধান কাটা শুরু করবো ইনশাআল্লাহ।
অন্যদিকে লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের কলেজ পাড়া এলাকার চাষি মো. নান্নু, মোস্তফা কামাল এবং কাকলি রাণী জানান, আমরাও উচ্চ ফলনশীল জাতের ব্রি ধান-১০৩ এর চাষ করেছি। আমাদের জমির পরিমাণও ২০০ শতাংশ। তবে অতিবৃষ্টির কারণে আমাদের এলাকায় ধান আবাদ করতে কিছুটা দেরি হয়েছে। তাই আমরা আগামী ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে ক্ষেত থেকে ধান কাটা শুরু করতে পারবো বলে আশা করছি। এসব ধান বাজারে বীজ হিসেবে বিক্রি করবো। যার মূল্য হতে পারে অন্তত দেড় লাখ টাকা। এ ধান চাষ করতে কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে আমাদের ধানের বীজ, সার, কীটনাশক ও বীজ সংরক্ষণের জন্য ড্রাম দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আবু হাসনাইন বলেন, আমাদের দেশের জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে। যার জন্য আবাদ বৃদ্ধি করাও সম্ভব না। তবে এই জনসংখ্যার মুখে খাবার তুলে দিতে এখন থেকে আমাদের উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল আবাদ করতে হবে। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছর আমনের মৌসুমে ব্রি ধান- ১০৩ জাত আবাদের জন্য লালমোহন উপজেলার দুইটি ব্লকের মোট ৬ জন কৃষককে বিনামূল্যে সার, বীজ, কীটনাশক এবং বীজ সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। প্রথমবার তারা এ ধান চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন। এসব চাষিরা এই ধান থেকে বীজ সংরক্ষণ করবেন। যার মাধ্যমে আগামীতে এ উপজেলায় উচ্চ ফলনশীল জাতের এ ধানের আবাদ আরো বৃদ্ধি পাবে।
এই কৃষি কর্মকর্তা আরো বলেন, এছাড়া লালমোহন উপজেলায় অন্যান্য জাতের ধান চাষিরাও ভালো ফলন পাবেন বলে আমরা আশা করছি। আবহাওয়া কৃষকদের অনুকূলে থাকলে তারা কাক্সিক্ষত ফলন পাবেন বলেও আমরা আশাবাদী।
অন্যদিকে কৃষকরা যেন ফসল আবাদ করে ক্ষতির সম্মুখীন না হন। সে জন্য আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা প্রতিটি এলাকায় গিয়ে কৃষকদের নিয়মিত খোঁজ-খবর নেয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। আমাদের লক্ষ্য; প্রত্যেক কৃষক যেন তাদের আবাদ করা ফসল থেকে ভালো ফলন পাওয়ার মাধ্যমে লাভবান হতে পারেন।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।