ইতিহাস গড়ে মার্কিন মসনদে ট্রাম্প, ড. ইউনূসের অভিনন্দন
ডেস্ক রিপোর্ট ॥ যুক্তরাষ্ট্রে সুইং স্টেট উইসকনসিনে জয় পেয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মাধ্যমে তার ২৭৬টি ইলেকটোরাল ভোট নিশ্চিত হয়েছে। সেই সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট জিতে জয় নিশ্চিত করেছেন তিনি। বিবিসির সহযোগী সংবাদমাধ্যম সিবিএস এ তথ্য জানিয়েছে। আর এর মাধ্যমেই ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে পরাজিত করে ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করলেন। এ ছাড়া ১০০ সদস্যের সিনেটেও রিপাবলিকানরা নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। তবে কোন দল মার্কিন হাউস নিয়ন্ত্রণ করবে, তা এখনো জানা যায়নি। এর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী ঘোষণা করেন এবং ফ্লোরিডায় তার ওয়াচ পার্টিতে সমর্থকদের উদ্দেশে দীর্ঘ এক ভাষণ দেন।
ট্রাম্প জানান, তিনি একটি শক্তিশালী, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ আমেরিকা তৈরি না পর্যন্ত বিশ্রাম নেবেন না। ট্রাম্প ফ্লোরিডার পাম বিচ কনভেনশন সেন্টারে সমর্থকদের সামনে দেওয়া ভাষণে বলেন, ‘প্রতিটি দিন আমার শরীরের সব শক্তি দিয়ে আপনাদের জন্য লড়াই করব।
অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয় ভাষণের কিছুক্ষণ আগে ওয়াশিংটন ডিসিতে কমলা হ্যারিসের নির্বাচনী রাতের পার্টির জায়গায় একদম ভিন্ন দৃশ্য দেখা গেছে। হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কমলা হ্যারিসের বক্তৃতা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি বক্তৃতা দেবেন না জানানোর পর উপস্থিত সবাই পরিত্যক্ত চেয়ার আর পতাকা ফেলে রেখে বাড়ি ফিরে যান।
উইসকনসিনের আগে পেনসিলভানিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা ও জর্জিয়ায় ঘনিষ্ঠ লড়াইয়ের সুইং স্টেটগুলিতে ট্রাম্প জিতেছিলেন। ট্রাম্পই প্রথম দ-িত অপরাধী যিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। যদিও বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক নেতারা নতুন প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিতকে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন, তার প্রতিদ্বন্দ্বী হ্যারিস বা বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কেউই ট্রাম্পের জয় নিয়ে মন্তব্য করেননি। ট্রাম্প উইসকনসিন, পেনসিলভানিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, জর্জিয়া, ওহাইও ও টেক্সাসে জিতেছেন। ওহাইওতে ১৭টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট আছে। টেক্সাসে আছে ৪০টি। দুই রাজ্যেই গতবার ট্রাম্প জিতেছিলেন। তবে বারাক ওবামা ২০০৮ ও ২০১২ সালে ওহাইওতে জিততে পেরেছিলেন।
ডেমোক্র্যাটদের আশা ছিল, তারা টেক্সাস ছিনিয়ে নিতে পারবে। কারণ সেখানে শহর ও আধাশহরের সংখ্যা বেশি। কিন্তু টেক্সাস রিপাবলিকান ট্রাম্পের সঙ্গেই থেকেছে। ট্রাম্প নর্থ ও সাউথ ডাকোটা, লুসিয়ানা, ওয়াইওমিংয়ে জিতেছেন। তিনি কানসাস ও আইওয়াতেও জিতেছেন।
অন্যদিকে কমলা হ্যারিস নিউ ইয়র্কে জিতেছেন। এই রাজ্য সাধারণত ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে থাকে। তিনি ইলিনয়ে জিতেছেন। সেখানে প্রচুর গ্রামীণ এলাকা থাকলেও শিকাগোর মতো শহর আছে। ডেমোক্র্যাটরা তাই এই রাজ্য থেকে সচরাচর জিতে থাকেন। সেখানে ১৭টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট আছে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নিজের রাজ্য ডেলাওয়ারেও হ্যারিস জিতেছেন। ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে থাকা আরেক রাজ্য নিউ জার্সিতেও হ্যারিস জিতেছেন। হ্যারিস ক্যালিফোর্নিয়া ও ওয়াশিংটনে জিতেছেন। তিনি ম্যাসাচুসেটস, রোডস আইল্যান্ড, কানেকটিকাটে জিতেছেন। তিনি ওরেগন জিততে চলেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের অভিনন্দন : যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা বার্তা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রাথমিক ফলাফলে বিজয়ী হয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিসকে ইলেকটোরাল কলেজ ভোটে বড় ব্যবধানে পরাজিত করেছেন তিনি। ফলে দ্বিতীয়বারের মতো হোয়াইট হাউজের দখল পাচ্ছেন সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে প্রথমবার নির্বাচিত হন ট্রাম্প। ২০২০ সালের নির্বাচনে জো বাইডেনের কাছে হেরে যান তিনি। গত ৮ বছরে তিনবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়ে দু’বার বিজয়ী হলেন ট্রাম্প।
এর আগে ট্রাম্পের জয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক রুতে, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, চেক রিপাবলিকের প্রধানমন্ত্রী পেত্র ফিয়ালা। এ ছাড়াও তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ, আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিমন হ্যারিস। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন দের লিয়েন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, আর্জেন্টিনার প্রধানমন্ত্রী জাভিয়ের মিলেই, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানেজ, ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফারডিনান্ড মার্কোস জুনিয়রও তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।