রক্তঝরা দিনগুলি : শেষ পর্ব

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : মানুষ ৪ বছর পড়াশোনা করলেই ডক্টরেট ডিগ্রী পায়, কিন্তু আমার ডিগ্রীটা অবশ্যই ব্যতিক্রম। কারণ ৬৪ বছর আমি কাজ করেছি। এই ডিগ্রী অর্জণ ৬৪ বছরের পরিশ্রমের ফসল। দিনটি আজও আমার স্মৃতিতে উজ্জ্বল। আমি ঐ দিনটির কথা কখনো ভুলতে পারব না। আজ আমার বয়স ৮৫ বছর। এত বয়সেও আমি এখনও প্রায় সব সভা-সমিতিতে উপস্থিত থাকার চেষ্টা করি। এখনও একনাগারে ২০-৩০টি কবিতা মুখস্ত করতে পারি। অনেকেই আমার স্মৃতিশক্তি দেখে অবাক হয়। কিন্তু এ নিয়ে আমার কোন গর্ব-অহংকার নেই। যা আছে তা হল আত্মতৃপ্তি আর ভালোবাসা। যে সব লোকজন আমাকে চেনে, আমার সম্পর্কে জানে, তারা প্রত্যেকে বলে আমি একজন রতœগর্ভা মা। আমার নিজের কাজ যেমন করেছি, তেমনি ছেলে-মেয়েদের দিকে নজর রাখতে কোন ত্রুটি করিনি। যার কারণে আমার ছেলে-মেয়ে সবাই উচ্চশিক্ষিত। মেয়েদের শিক্ষিত করে ভাল ঘরে পাত্রস্থ করেছি আর ছেলেরা দেশে-বিদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।
আমার ছেলে-মেয়ে, আত্মীয়-স্বজনরা তো বটেই, আমার কর্মক্ষেত্রের মানুষগুলো আমাকে সামনের সর্বোচ্চ আসনটি ছেড়ে দেয়। তখন খুব ভালো লাগে যখন মানুষ আমার সাথে আন্তরিক হয়। আমার সম্পর্কে জানতে চায়। জানি না জীবনের আর কতটুকু পথ বাকি আছে। যতটুকু সময়ই থাকুক, আমি ভালোবেসে যাব আমার পরিবার-পরিজন, দেশ ও দেশের মানুষকে। আমি আওয়ামীলীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলাম। বঙ্গবন্ধুর স্নেহ-ছায়া এবং আদর্শের অনুপ্রেরণায় কেটেছে আমার রাজনৈতিক জীবন। মহান এই নেতার প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও ভালবাসার শেষ নেই। তিনি বেঁচে নেই, আছে তার স্বপ্ন, আছে তার আদর্শ। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশের সঠিক ভাষা আমার জানা নেই। আমার একটি কবিতায় আন্তরের গভীরতম শ্রদ্ধাকে ভাষা দেবার চেষ্টা করেছি। কবিটাতি হলো-

হে শতাব্দির মহানায়ক জাতির পিতা
স্বাধীনতা সংগ্রামের
লও সালাম, বঙ্গবন্ধু
আমার জীবনের।
তুমি বলেছিলে, এবারের সংগ্রাম
মুক্তির সংগ্রাম।
এবারের সংগ্রাম,
স্বাধীনতার সংগ্রাম।
যার যা আছে, তাই নিয়ে
শত্রুর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ো
এদেশকে মুক্ত করো
স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ গড়ো
তাই তোমার প্রেরণায় যুদ্ধ করেছি
তোমার প্রেরণায় বই লিখেছি
বাড়ী ঘর ছেড়ে, ছেলে-মেয়ে কোলে
মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ দিয়েছি।
হে শতাব্দীর মহানায়ক জাতির পিতা
স্বাধীনতা সংগ্রামের
লও সালাম বঙ্গবন্ধু আমার জীবনের।

আমার এই বইটি আমি লিখেছি মূলত বর্তমান আর ভবিষ্যত প্রজন্মকে উদ্দেশ্য করে। যারা এদেশের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞাত নয়, তারা যখন এই বইটি পড়বে তখনই সার্থক হবে আমার এ ক্ষুদ্র প্রয়াস। তাদের ভালোলাগাতেই আমার আনন্দ। এই বইটি আমি উৎসর্গ করলাম সেই সব বীর শহীদদের প্রতি, যারা তাদের বুকের তাজা রক্ত ঝরিয়ে এদেশকে স্বাধীন করে গেছেন।

আরও পড়ুন

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।