রক্তঝরা দিনগুলি : পর্ব-১২

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন), 

(গত পর্বের পর) : যত অর্জন মাতৃভূমির জন্য : এই দেশের সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক। জন্মলগ্নে দেশকে দেখেছি, দেখতে চাই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে পদে পদে আমি যেমন বাধাগ্রস্ত হয়েছি, তেমনি আমার সাফল্যের ঝুলিটাও কম ভারী নয়। ধুসর স্মৃতির পাতা উল্টালে মনে পড়ে যায় সেই কত কথা। সময় এগিয়ে চলে, মনকে নাড়া দেয় কত স্মৃতি। আজ থেকৈ প্রায় ৫০ বৎসর আগের কথা (১৯৫৮ সালের এপ্রিল বা মে মাস হবে) হোসেন শহীদ হোসরাওয়ার্দী তখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খুলনায় এলেন। আমি তখন পিডব্লিউএনজি পাকিস্তান মহিলা জাতীয় রক্ষী বাহিনীর কোম্পানী কমান্ডার। আমার র‌্যাঙ্ক ছিল তখন ক্যাপ্টেন। প্রশাসন থেকে ঠিক হলো প্রধানমন্ত্রী সাহেবকে মহিলা রক্ষী বাহিনীর থেকে গার্ড অব অর্নার দেয়া হবে।
আমার বড় মেয়ে তখন কলেজে পড়ে। ও প্লাটুন কমান্ডার ছিল। ৩০ জন মেয়ে নিয়ে খুলনার সার্কিট হাউজ মাঠে সোহরাওয়ার্দী সাহেবকে রাইফেলসহ সালাম প্রদর্শণ করা হয়। ঠিক ওই সময় মঞ্চে উপবিষ্ট একজন লোককে প্রধানমন্ত্রী পিছনে খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে কথা বলতে দেখলাম। পরে শুনলাম পূর্ব পাকিস্তানের একজন প্রভাবশালী নেতা, উনি সেদিনের সেই নেতাই বাংলাদেশের প্রাণ প্রিয় নেতা (শেখ মুজিব)। সোহরাওয়ার্দী সাহেবের হাতেই ওনার রাজনৈতিক জীবনে হাতে খড়ি। আমি ১৯৪৮ থেকে পিডব্লিউএনজি তিন বছর অফিসার ইনচার্জ ছিলাম। পরে ১৯৫১ সালে ৫৭ ব্যাটালিয়ান, রমনা, ঢাকা থেকে ক্যাপ্টেন উপাধি দেয় হয়। ক্যাপ্টেন হওয়ার পর যশোর, খুলনা, কুষ্টিয়া, বরিশাল এই চার জেলার কোম্পানী কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করি। ১৯৫২ তে গৌড় বঙ্গ সাহিত্য পরিষদ, কলকাতা থেকে আমাকে কবিরতœ উপাধি দেয়া হয়। বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ আমাকে শ্রেষ্ঠ কবিতার জন্য সাহিত্য পদক দেয়। আমি অনেক নাটকে অভিনয় করেছি এবং প্রশংসা কুড়িয়েছি। আমি খুলনায়ড কর্ণেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ডোনার পাইওনিয়ার বালিখা বিদ্যালয়ের সেক্রেটারী ও খুলনা জেলের অবৈতনিক জেল ভিজিটর ছিলাম।
বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য আমি। বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট। বাংলাদেশ ইউমেন ফেডারেশন এর মেম্বার, উত্তরা লেডিস ক্লাবের অনারারী মেম্বার। শতদল লায়নস ক্লাবের পাষ্ট প্রেসিডেন্ট, লায়ন ডিষ্ট্রিক্ট কেবিনেটের এডভাইজার, ক্যান্টনমেন্ট জেন্টস এসোসিয়েশনের এক্সিকিউটিভ মেম্বার এবং ডিওএইচএস লেডিস ক্লাবের পাষ্ট প্রেসিডেন্ট আমি। এতসব প্রাপ্তি শুখু আমার সততা ও আন্তরিকতার কারণেই। এর প্রত্যেকটিতে আমার কাজের স্পর্শ রয়েছে। আমি আমার এই কাজের মূল্য আদায় করে নিয়েছি। কিন্তু আমি চেয়েছিলাম যাতে আমার দেশ স্বেচ্ছায় আমাকে কিছু দেয়। এটা কোন লোভ নয়, বরং দেশকে ভালোবাসার নিদর্শণ চেয়েছিলাম। কিন্তু নিজের দেশ থেকে আমি কিছুই পাইনি। বরং সুদূর আমেরিকা আমার সারা জীবনের পরিশ্রমের মূল্য দিল। আমেরিকার মিশিগান অঙ্গরাজ্যের সিয়েনা হাইট বিশ্ববিদ্যালয় মানবতার জন্য ২০০৬ সালের ৭মে আমাকে ডক্টরেট ডিগ্রি (ডক্টরস) অব হিউম্যান লেটারস প্রদান করে।

(চলবে———-)

আরও পড়ুন

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।