রক্তঝরা দিনগুলি : পর্ব-১০

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন), 

(গত পর্বের পর) : এ দেশে তো এখন আর শান্তিতে স্বাধীনভাবে বাস করার যোগ্য নেই। যেখানে মুক্তিযোদ্ধা অসহায় ভাবে পথ্যহীন হয়ে মরে, দেশদ্রোহীরা থাকে রাজার হালে। এই কি আমাদের স্বপ্নের বাংলা ! প্রশ্নগুলো যেন দেয়ালে বাড়ি খেয়ে ফিরে আসে। কার কাছে এ প্রশ্নের সদুত্তর পাওয়া যাবে ? কে দেবে এর জবাব ? আজ আমরা একুশে ফেব্রুয়ারীতে বুকে কাল ব্যাজ ধারণ করি। পহেলা বৈশাখে রমনার বটমূলে গিয়ে পান্তা খাই। কিন্তু সেই একদিন মনেপ্রাণে বাঙালী হতে পেরেছি আমরা কতখানি ? শুধু একদিনের বাঙালি সেজে তো বাঙালির সত্ত্বাকেই অপমান করা হচ্ছে।
আজকাল তো অনেকেই বাংলায় কথা বলতেও অপমান বোধ করে। আর যারা আছে তাদের মুখে বাঙালিপনা আর ভিতরে পাশ্চাত্যের প্রভাব। ছেলে-মেয়েদের ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ানোকেই উপযোগী মনে করে। এমনকি ২১ শে ফেব্রুয়ারী আর ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধও তাদের কাছে বিশেষ অর্থবহ নয়। এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। কিন্তু তারা হাতে গোনা গুটি কয়েকজন মাত্র। এতে কী-ই-বা আসে যায়। আমরা চাই যাতে দেশের প্রতিটি মানুষ বাঙালি সত্ত্বাকে মনে প্রাণে মেনে চলে। নিজের অস্তিত্ব নিয়ে আর লুকোচুরি না করে। যেদিন এ দেশের প্রতিটি নাগরিকের মনে জাগবে সত্যিকারের দেশপ্রেম, সেদিন কেবল সম্ভব হবে স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের সার্থক সংগ্রাম।
তখন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নও সফল হবে, অর্থবহ হবে দেশের স্বাধীনতাও। আমি সেই ব্রিটিশ আমলের মানুষ। কত উত্থান, কত পতন, কত পরিবর্তণ ঘটেছে আমার চোখের সামনে। দেশকে দেখেছি জন্মলগ্নে। আর এখনও দেখছি। নিজের দেশের প্রতি যেমন ভালোবাসা আমার আছে, হয়তো বা এত ভালোবাসা আর কারও জন্যেই ছিল না। যে কারণে বাবা-মা, স্বামী-সন্তান-পরিবার কিচুর মায়াকেই মায়াতেই দেশকে ত্যাগ করিনি। বরং শত বাধা-বিপত্তি অগ্রাহ্য করে আমি দেশের জন্য কাজ করেছি। আমার পরিবার হয়তো আমার রাজনীতি করা পছন্দ করত না, সমাজ সেবাটাও অনেকের চোখেল বালি ছিল। কিন্তু তারপরও লেখা-লেখিটা সবার কাছেই পছন্দের ছিল। আমার সাহিত্য রচনার জন্য আমার স্বামী আমাকে উৎসাহ দিতেন, কিন্তু বাইরে তা প্রকাশ করার অনুমতি দেননি কখনও। কিংবা কোন বই পত্রিকাও আমার জন্য নিয়ে আসেননি। আমার বাইরের সমাজের সকল কাজই তার অপছন্দ ছিল। এজন্যই হয়তো আমাকে ঘরে ধরে রাখতে শুধু লেখালেখি করতে বলতেন।
আমার সন্তানেরা প্রত্যেকেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। দেশে-বিদেশে তাদের কত সুনাম। এই সন্তান মানুষ করার পেছনে কত অবদান আমার। কত রাত, কত প্রহর গোনা, কত চিন্তা সন্তানদের জন্য। নিজের আজকে প্রাধান্য দিয়ে সন্তানদের ভুলে যাইনি। ওদের আগলে রেখেছি পরম মমতায়। অথচ আমার স্বামী বলত আমি নাকি ঘরের খেয়ে বনের মহিষ তাড়াই। তখন তার কথায় মনে কষ্ট পেলেও পরে বুঝেছি তিনিতো আমার স্বামী, কখনোই আমার অমঙ্গল চাইবেন না। অবশ্য আমরা তো আগের দিনের মানুষ। সেকারণেই হয়তো চাইতেন ঘরের বউ ঘরেই থাক। বুঝতে পারি বলেই তার প্রতি আমার কোন অনুযোগ নেই। আমার কবিতাগুলো সর্বজন প্রশংসনীয় হয়েছে। তন্মধ্যে ২১ শে ফেব্রুয়ারী নিয়ে একটি কবিতা দেশে-বিদেশে বেশ সুনাম ছড়িয়েছে।—-

(চলবে————)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।