বাংলাবাজার আঞ্চলিক যুবদলের উদ্যোগে আলোচনা সভা-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
রক্তঝরা দিনগুলি : পর্ব-০৯
ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),
(গত পর্বের পর) : এর মাঝে আমার কাছে আবারও নির্দেশ এলো বঙ্গবন্ধুকে গার্ড অব অনার দিতে হবে। এবার ন্যাশনাল ফ্লাগ, ব্যান্ড, বিউগল, স্যালুটিং ব্যাজ সবকিছুই থাকবে। আমি অগ্রণী গার্লস স্কুল, ধানমন্ডি গার্লস স্কুল, আজিমপুর গার্লস স্কুল এই ৩ স্কুলের মেয়েদের নিয়ে আজিমপুর স্কুলে ড্রাম, বিউগল ও রাইফেল নিয়ে মার্চ পাষ্টের মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে গার্ড অব অনার জানাই। তার ২দিন পর বঙ্গবন্ধুর বাসায় গেলে তিনি আমাকে কমান্ডার ইন চীফ ‘বাংলাদেশ’ উপাধি দেন। আমি খুব হাসতে লাগলাম। বঙ্গবন্ধুও হাসতে হাসতে বললেন, আজকের অবজারভারে দেখুন আপনার আর মেয়েদের বিরাট আকারে ছবি বেরিয়েছে। সেই দিনটির কথা আজও আমার স্মৃতিতে উজ্জ্বল।
আজ বঙ্গবন্ধু নেই, কিন্তু তাঁর স্মৃতি অহরহ আমাকে আনমনা করে দেয়। তাঁর স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলাদেশ গড়ার। ৭ কোটি বাঙালির জন্য কতই না স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। এদেশের মানুষকে নিজের সন্তানের মত ভালোবাসতেন। আমাদের সুযোগও ছিল এই মহান নেতার নির্দেশনায় তারই নেতৃত্বে দেশকে গড়ে তোলার। কিন্তু এক কু-চক্রী মহল বঙ্গবন্ধুকে মেরে ফেলার জন্য ষড়যন্ত্র করছিল। তাঁর কানে একথা আসলেও তিিন বিশ্বাস করেননি। তাঁর বিশ্বাস ছিল যে, বাংলাদেশের কোন মানুষ তাঁকে মারতে পারে না। কিন্তু হায় ! দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি বিশ্বাস ও ভালবাসার মূল্য তিনি দিলেন জীবন দিয়ে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে মধ্যরাতে সেনাবাহিনীর একদল বিপদথগামী সদস্য সপরিবারে নির্দয়ভাবে হত্যা করে। দেশ থেকে যেন দেশের প্রাণই ঝরে পড়ল।
সেদিন সন্ধ্যায় আমি তার বাসায় গিয়ে এসেছিলাম। আর পরদিন ভোরেই শুনি এ বর্বর হিং¯্র ঘটনা। আমি যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম খবরটা শুনে। আমাদের বাসায় কেউ আওয়ামীলীগ না করলেও বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর সংবাদে সবাই খুব আঘাত পেল। এমনকি কয়েকদিন বাসার রান্না-বান্নাও বন্ধ ছিল। তখন আমি বুঝলাম অনেক রাজনীতি পছন্দ না করলেও বঙ্গবন্ধুর মতো জনপ্রিয় মানুষের কাছে ছিল। কারণ তিনি ছিলেন অদ্বিতীয় এক নেতা। তাঁর মতো নেতার জন্ম এদেশে হয়নি, আর হবেও না। কত কষ্টের, কত ত্যাগের আমাদের এই স্বাধীনতা ! কত স্বপ্ন ছিল, আমরা আমাদের দেশকে সোনার বাংলা করে গড়ে তুলব। কিন্তু আমরা কি তা সত্যিই পেরেছি ? আমি ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত সবগুলো মুহুর্তেই প্রত্যক্ষ করেছি। আমি নিজে একজন মুক্তিযোদ্ধা, কিন্তু এই গর্ব আর গর্ব থাকে না, যখন দেখি দেশদ্রোহী, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীরা গাড়িতে জাতীয় পতাকা লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায়। সহ্য করতে পারি না, যখন শুনি বঙ্গবন্ধুর খুনিরা সগৌরবে দেশে-বিদেশে জীবন কাটাচ্ছে। তখন নিজেই ভিতরে ভিতরে ক্ষোভে ফুলতে থাকি আর ভাবি, কী লাভ হল ৩০ লাখ বাঙালির রক্ত দিয়ে, কী লাভ হল বঙ্গবন্ধুর জীবন দিয়ে।
(চলবে—–)