সর্বশেষঃ

রক্তঝরা দিনগুলি : পর্ব-০৭

ড. তাইবুন নাহার রশীদ (কবিরত্ন),

(গত পর্বের পর) : রাজধানী ঢাকাও চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে মুক্তিবাহিনী ও বিত্রবাহিনীর সদস্যরা। এমতাবস্থায় পরাজয় অবধারিত দেখে পাকবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা হানে মরণ ছোবল। শেষ বারের মত প্রচেষ্টা চালায় এদেশকে দুর্বল করে দেয়ার। ১৪ই ডিসেম্বর তারা দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে যায়। তাদের এই কাজে সাহায্য করে রাজাকার, আল বদর, আশ্-শামস বাহিনী। অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, শহীদুল্লাহ কায়সার, ডা: ফজলে রাব্বী, জহির রায়হানসহ আরও অনেক বীর সন্তানকে। যাদের চরণধূলোয় ধন্য ছিল এই দেশ। তাদের হত্যা করে পাকবাহিনী পঙ্গু বানিয়ে দেয় এ দেশকে। এদের মাঝে আমার ডা: ফজলে রাব্বীর কথা বিশেষভাবে মনে পড়ছে। কারণ তাকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে জানতাম। যে কোন অসুখ-বিসুখে তাকে দেখাতাম। একবার তাঁর চেম্বারে গেলাম। আমার সিরিয়াল হল ৬৪, আমি অপেক্ষা করছিলাম। এরই মধ্যে এক লোক এলেন ডা: রাব্বীর কাছে। লোকটি খুব গরীব। একপায়ে স্যান্ডেল ছিল, অন্য পায়েরটার ফিতা ছেঁড়া, দড়ি দিয়ে বাঁধা ছিল। পরনে শুধু একটা ধুতি, খালি গায়ে। ডা: রাব্বী তাকে জিজ্ঞাসা করলেন আপনি কখন এসেছেন ? লোকটি বললেন যে, তিনি প্রথমেই এসেছেন। তখন রাব্বী বললেন, তা হলে এখন এসেছেন কেন ? তখন গরীব লোকটি বললেন, আপনার কম্পাউন্ডার আমাকে এখন দিয়েছে। তখন তিনি কম্পাউন্ডারকে জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি কোন উত্তর দিতে পারেন নি। ডা: রাব্বী তখন কম্পাউন্ডারকে বললেন, লোকটা গরীব বলে তাকে পরে দিয়েছ ! যাও কাল থেকে তোমার চাকরী শেষ। একটা টিবি’র রোগীকে এতক্ষণ বসিয়ে রাখার কারণে কম্পাউন্ডারের এই শাস্তি। তার এই মানবতাবোধ দেখে আমি মুগ্ধ হলাম। সত্যিকার মানুষ বুঝি একেই বলে ! আর মানবতাবোধ সম্পন্ন এই মহান চিকিৎসককে ওরা হত্যা করলো কী নির্দয়ভাবে।
অবশেষে ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর হাজার হাজার বাঙালির স্বপ্নসাধ পূরণ হয়। এদিন পাকিস্তানী বাহিনী আত্মসমর্পণ করে ভারত-বাংলাদেশের যৌথ কমান্ডের কাছে। পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের সামরিক প্রশাসক লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজি ভারত-বাংলাদেশ বাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগত চিৎ সিং অরোরা এবং বাংলাদেশের গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ, কে, খন্দকারের কাছে আত্মসমর্পণ করলে এই মহান যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। এই যুদ্ধের সময় কত লাখ বাঙালিকে পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা হত্যা করেছিল তাৎক্ষনিকভাবে তা নিরূপণ করা সম্ভব ছিল না। অনুমান করা হয় এই সংখ্যা ৩০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। স্বজন হারানোর বেদনায় অগনিত মানুষের হা-হাকারে বাতাশ ভারি হয়ে উঠলেও বিজয়ের মহান আনন্দে, মহাউল্লাসে বাংলার আকাশ-বাতাস আবার আমোদিত হয়ে ওঠে।

(চলবে———–)

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।