চরফ্যাশন ক্যাডেট স্কুল এন্ড কলেজে বার্ষিক বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ
জনবল সঙ্কট ও ঔষধ সরবরাহের অভাবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে স্বাস্থ্য সেবা
ভোলায় ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত কয়েক হাজার শিশু
এইচ এম নাহিদ ॥ প্রায় ২০ লাখ মানুষের উন্নত চিকিৎসার শেষ ভরসাস্থল ভোলা জেলা শহরের ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল। পর্যাপ্ত রোগীর চাপ থাকলেও মিলছেনা কাঙ্কিত স্বাস্থ্য সেবা। জনবল সঙ্কট ও পর্যাপ্ত ঔষধ সরবরাহ না থাকায় প্রতিনিয়ত ভোগান্তীর শিকার হচ্ছেন সাধারন মানুষ। এদিকে আবহাওয়ার পরিবর্তনের সাথে সাথে ভোলায় শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ তীব্র আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ১ মাসে আক্রান্ত হয়েছে কয়েক হাজার শিশু। মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের।
জেলা হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১৬৪ জন শিশু রোগী ভর্তি হয়েছে হাসপাতালে, এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১ জন শিশুর। গত ৭ দিনে ১০৩৬ জন শিশু ভর্তি হলেও মৃত্যু হয়েছে ৩ জন শিশুর এবং গত এক মাসে ভোলা জেলার হাসপাতাল গুলোতে ভর্তি হয়েছে ২০৪৪ জন, তার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৪ জন শিশুর। এর মধ্যে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ২২ জন রোগীর। ভোলার ২৫০ শয্যা হাসপাতালের ৫০ বেডের শিশু ওয়ার্ডে ধারণ ক্ষমতার ৫ গুণের বেশি শিশু নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায়সহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত শিশু রোগী। প্রতিদিন ১৭০ থেকে ২৫০ এর বেশি অসুস্থ শিশু এখানে চিকিৎসা নেয়।
বুধবার (৪ আগষ্ট) দুপুর ১ টার সময় ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালটির ৫০ বেডের শিশু ওয়ার্ডে তিল ধরনের ঠাঁই নেই। একই চিত্র বারান্দার মেঝেতেও। প্রতিটি বেডে ২ থেকে ৩জন শিশুকে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বাকি অসুস্থ শিশুদের বারান্দার মেঝেতে সারিবদ্ধ ভাবে শুইয়ে রেখে নামমাত্র চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে কোনো একজন শিশু হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হলেও দ্রুত পাওয়া যায় না কর্তব্যরত চিকিৎসককে, নেই পর্যাপ্ত নার্সও। সময়মতো চিকিৎসক ও নার্স না পাওয়ায় শিশু মৃত্যুর অভিযোগও পাওয়া যায়। এনিয়ে প্রতিদিন নার্সদের সঙ্গে বাক-বিত-ায় জড়াচ্ছেন শিশুদের স্বজনরা।
নিয়ম অনুযায়ি ৩ জন শিশু রোগীর বিপরীতে ১ জন নার্স চিকিৎসা দেয়ার কথা থাকলেও প্রায় ২৫০ জন অসুস্থ শিশুর চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত আছেন মাত্র ২ জন নার্স ও একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স। শিডিউল অনুযায়ী একজন চিকিৎসক ২৪ ঘণ্টা শিশু ওয়ার্ডের চিকিৎসার দায়িত্বে থাকার কথা। কিন্তু সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ওয়ার্ডে রাউন্ডের পর জরুরি বিভাগ ব্যতীত আর কোনো চিকিৎসকের দেখা মেলে না তাদের। সিরিঞ্জ, ক্যানোলো, স্কচটেপ, স্যালাইন ও অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ হাসপাতালে সরবরাহে নেই। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডসহ অন্যান্য ওয়ার্ডে ও একই চিত্র। এভাবেই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে জেলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা। পাশাপাশি জেলার অন্যান্য উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গুলোর ও একই চিত্র।
ভুক্তভোগী রোগীর স্বজনরা বলেন, অনেকটা বিপদে পড়ে বাচ্চাদের হাসপাতালে নিয়ে আসি একটু ভাল চিকিৎসা পাব বলে। অথচ এখানে পর্যাপ্ত ডাক্তার নেই, নার্স নেই, পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরাঞ্জম নেই। এই ভোগান্তি থেকে আমরা ভোলার মানুষ কবে মুক্তি পাব তার কোন হদিস নেই।
ভোলার ২৫০ শর্যা হাসপাতালে বাচ্চাদের চিকিৎসা নেবা নিতে আসা ইব্রাহীম, হাবিবা, নুরজাহান, মালেকা বেগম বলেন, দুপুর ১ টা বাজে এখনও একজন নার্সও আসেনাই মাইয়াডার কাছে। নার্স আফারে বলেছি একটু দেইখা যাইতে। এক ঘণ্টা হইয়া গেছে, তিনি এহনও আসেননি।
সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ১০ মাস বয়সী শিশু আছিয়াকে নিয়ে হাসপাতালের বারান্দার মেঝেতে বসে আছেন মা লায়লা আক্তার। তার মেয়ের শ্বাসকষ্ট। ডাক্তার দেখাবেন বলে অপেক্ষায় আছেন। ডাক্তারের দেখা না পেয়ে মেয়ের শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত দেখে বাধ্য হয়েই তিনি হাসপাতালের ছাড়পত্র না নিয়েই ছোটেন প্রাইভেট হাসপাতালে।
ভোলা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স সালমা বেগম বলেন, আজ (বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর) হাসপাতালে অসুস্থ শিশু আছে প্রায় ২৪০ জন। প্রতিদিনই নতুন নতুন শিশু রোগী ভর্তি হচ্ছে। ওয়ার্ডে ৩ জন নার্স ডিউটি করছেন। রোগীর এত চাপ যে আমরা কোন শিশু রেখে কোন শিশুর কাছে যাবো তা বুঝতে পারছি না। পর্যাপ্ত জনবল সঙ্কটের কারনে এমনটা হচ্ছে তারপরও আমাদের সাধ্য মতো চেষ্টা করে যাচ্ছি।
জনবল সঙ্কটের মধ্যে বিপুল সংখ্যক শিশু রোগীকে সেবা দেওয়া প্রায় অসাধ্য বলে জানিয়েছেন ভোলা ২৫০ শয্যা হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু) ডা. সালাউদ্দিন। তিনি জানান, সব মিলিয়ে ওয়ার্ডে প্রায় ২৯৫ রোগী আছে। যতটা সম্ভব শিশুদের সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি।
ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সৈয়দ আবু আহমেদ শাফী হাসপাতালে পর্যাপ্ত ডাক্তার নার্স ও ঔষধ না থাকায় সেবা ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি জানান, তীব্র জনবল সঙ্কটের কারণেই এমনটি হচ্ছে। এছাড়া অতিরিক্ত রোগীর চাপে ঔষধের সংকটও দেখা দিয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ সঙ্কটগুলো কাটানোর চেষ্টা করছি। আশা করছি দ্রুত এগুলোর সমাধান করা যাবে।
তিনি আরো বলেন, হাসপাতালে বেড আছে ২৫০টি। নিউমোনিয়া ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডেই ভর্তি আছে প্রায় ২৪০ জন। আবহাওয়া পরিবর্তন জনিত সংক্রামিত ভাইরাসের কারণে এমনটা হচ্ছে। তাই শিশুদের অভিভাবকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
ভোলার সিভিল সার্জন এ কে এম শফিকুজ্জামান বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে শিশু রোগের উপদ্রুব ভোলাতে খুব বেড়েছে। এদিকে আমাদের পর্যপ্ত বেড, জনবল ও ঔষধ সরবরাহ চাহিদা অনুযায়ী না থাকায় আমাদের চিকিৎসা সেবা একটু ব্যাহত হচ্ছে। তাই বাচ্চাদের মায়েদেরকে এই অবস্থায় বাচ্চার প্রতি একটু বেশি যতœ নিতে হবে। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে হাসপাতালে না আশার পরামর্শ দিচ্ছি। আশা করি সংকট খুব দ্রুত কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছি।